প্রাণের সন্ধানে মঙ্গলে নতুন অভিযান
মঙ্গল গ্রহে কখনো কি প্রাণের অস্তিত্ব ছিল? এটি এমন একটি প্রশ্ন, যার উত্তর বহু শতাব্দী ধরে বিজ্ঞানীরা খুঁজছেন। এ নিয়ে বহু বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি রচিত হয়েছে।
এই প্রাণের সন্ধানেই এবার মঙ্গলের পথে রয়েছে মার্কিন নভোযান ‘প্রিজারভেন্স’। ছয় মাসের যাত্রা শেষে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে মঙ্গলে অবতরণ করবে এটি। এটি মঙ্গলে জেজেরো ক্রেটার নামে একটি অঞ্চলে নামবে, যা ৪৫ কিলোমিটার নদীর বদ্বীপ। সেখানে পৃথিবীর মতো পলল শিলা রয়েছে। বিজ্ঞানীরা আগামী এক দশক ধরে মঙ্গলে প্রাণের অনুসন্ধান করবেন।
জেজেরো ক্রেটার ছাড়া আরও দুটি ল্যান্ডিং সাইট চিহ্নিত করা হয়েছে এ মিশনের জন্য। এগুলো হলো এন ই সারটিস এবং কলম্বিয়া হিলস। তবে জেজরো ক্রেটারেই রোভার ল্যান্ড করার সম্ভাবনা বেশি। ক্রেটার জরিপের পাশাপাশি পাথরও খনন করবে রোভার। অ্যানালাইজারের সাহায্যে বিশ্লেষণও করা হবে মঙ্গলেই। ২০২২ সালের মধ্যে জানা যাবে তার প্রাথমিক ফলাফল। এসব জানানো হয়েছে নাসার তরফ থেকে।
এসইউভির সমান এই ১২ চাকার রোবট ‘প্রিজারভেন্স’ খুঁজে দেখবে মঙ্গলগ্রহে প্রাগৈতিহাসিক কালে প্রাণের লক্ষণ ছিল কি না। শুধু রোবটই নয়, একই সঙ্গে মঙ্গলে একটি ছোট্ট হেলিকপ্টার পাঠিয়েছে নাসা। এই প্রথম মঙ্গলের আবহাওয়ায় হেলিকপ্টার ওড়ানোর চেষ্টা হবে।
প্রিজারভেন্স তৈরির কাজ যখন পুরো দমে চলছিল, সে সময়েই যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়। প্রকল্পটির সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলেন, তাদের অনেকেই আটকা পড়েন বাড়িতে। তারপরও ঠিক সময়ে প্রকল্প শেষ করার অঙ্গীকার ছিল বিজ্ঞানীদের। করোনাকে উপেক্ষা করেই তারা কাজ চালিয়ে যান।
গেল মঙ্গলবার যাত্রা শুরু করা প্রিজারভেন্স সব ঠিক ঠাক থাকলে আগামী বছল ১৮ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলে পৌঁছাবে। তারপরেই কাজ শুরু করে দেবে এটি। ১৯টি ক্যামেরা এবং দুইটি অত্যন্ত উন্নতমানের মাইকের সাহায্যে মঙ্গলে প্রাগৈতিহাসিক প্রাণের সন্ধান করবে। নাসার দাবি, এই প্রথম মঙ্গল থেকে শব্দ সংগ্রহ করা হবে। এর আগে সেখানে মাইক পাঠানো হয়নি।
বস্তুত প্রিজারভেন্স একা নয়, ২০২১ সালে সব মিলিয়ে তিনটি স্পেসক্রাফট থাকবে মঙ্গলে। ২০১২ সালে নাসার পাঠানো কিউরিওসিটি এখনও কাজ চালিয়ে যাচ্ছে মঙ্গলে। লাল গ্রহে ২৩ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছে এই যানটি। অন্যদিকে গত সপ্তাহেই চীন প্রথম কেট পাঠিয়েছে মঙ্গলে। ২০২১ সালের মে মাসের মধ্যে তারও মঙ্গলে পৌঁছে যাওয়ার কথা।
বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, বহু কোটি বছর আগে মঙ্গলের আবহাওয়া এমন ছিল না। সেখানে বড় বড় হ্রদ ছিল। নদী ছিল এবং যেহেতু পানি ছিল, ফলে সেখানে প্রাণও ছিল বলে তাদের ধারণা। নতুন মহাকাশযানের কাজই হবে বহু কোটি বছর আগের সেই প্রাণের সন্ধান। বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, এখনও সেই প্রাণের সন্ধান পাওয়া সম্ভব।
হেলিকপ্টার নিয়েও খুবই আশবাদী বিজ্ঞানীরা। মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর মতো নয়। ফলে সেখানে আদৌ হেলিকপ্টার ওড়ানো সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। তবে বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, মঙ্গলের আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখেই হেলিকপ্টারটি তৈরি করা হয়েছে। যদি তা ওড়ানো যায়, তাহলে এক ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটবে। সূত্র: ডয়েচে ভেলে।
এনএফ/এমএস