মন্দায় মার্কিন অর্থনীতি, দ্বিতীয় প্রান্তিকে জিডিপি কমেছে ৩২.৯%
টানা দুই প্রান্তিকে জিডিপি কমলে মন্দায় পড়ে অর্থনীতি। যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে মন্দায় পড়লো। প্রথম তিন মাসে ৫ শতাংশের পর দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) কমেছে ৩২ দশমিক ৯ শতাংশ। বৃহস্পতিবার মার্কিন ব্যুরো অব ইকোনোমিক অ্যানালাইসিস এই তথ্য দিয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ১৯৪৭ সালের পর যুক্তরাষ্ট্রের মোট দেশজ উৎপাদনের পরিমাণ কখনো এতটা কমেনি। ১৯৫৮ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশের তুলনায় এটা তিন গুণেরও বেশি। এছাড়া ২০০৮ সালের মন্দার সময়কার চতুর্থ প্রান্তিকের সর্বোচ্চ ৮ দশমিক ৪ শতাংশের তুলনায় চার গুণ।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়ে বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির রেকর্ড ভয়াবহ পতন হয়েছে। মহামারি ঠেকাতে লকডাউনের কারণে ব্যবসায়িক কার্যক্রমণ স্থবির হয়ে পড়ায় গত ১১ বছর পর আবার মন্দায় পড়লো মার্কিন অর্থনীতি। দীর্ঘদিন ধরে অর্থনীতির আকার বৃদ্ধিতে ছেদ পড়লো এবার।
সিএনএন বলছে, টানা দুই প্রান্তিকে যদি কোনো দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) হ্রাস পায় তখন সংশ্লিষ্ট দেশটির অর্থনীতে মন্দায় পড়েছে বলে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেওয়া হয়। প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) জিডিপির বার্ষিক হারে ৫ শতাংশ পতন হলেও দ্বিতীয় প্রান্তিকে এর আকার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমেছে।
সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বিষয়টির ব্যাখায় বলা হচ্ছে, তবে যুক্তরাষ্ট্রের এবারের এই মন্দা সাধারণ কোনো মন্দা নয়। জনস্বাস্থ্য আর অর্থনীতির এই যৌথ সংকট নজিরবিহীন। এছাড়া কোটি কোটি আমেরিকান যে অস্বচ্ছলতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে শুধু এই সংখ্যা দিয়ে তার সামগ্রিক অবস্থা তুলে ধরাও সম্ভব নয়।
গত এপ্রিলে দুই কোটিরও বেশি আমেরিকান চাকরি হারিয়েছেন। চাকরি হারানোর এই রেকর্ড ছিল দেশটির বিগত ৮০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। বেকার থাকার কারণে সরকারি সুবিধা পাওয়ার আবেদনও আকাশচুম্বী। লকডাউন কিছুটা শিথিল হওয়ায় এই সংখ্যাটা কমলেও মহামারির আগের পরিস্থিতির তুলনায় এখনো তা অনেক কম।
সিএনএন জানাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে এখনো দেড় কোটি মানুষের চাকরি নেই। বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠানের দেওয়া পূর্বাভাসে সামনের দিনে চাকরির বাজারে আরও অনেক যুক্ত হলেও বেকারত্বের হার ১০ দশমিক ৩ শতাংশ কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে এটাও আর্থিক মন্দার চেয়ে অনেক বেশি বলে সিএনএন এর প্রতিবেদনে জানানো হচ্ছে।
ভোক্তা ব্যয় অর্থাৎ গ্রাহক চাহিদা হলো যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। কিন্তু লকডাউনে চাকরি হারানোয় অস্বচ্ছলতা কিংবা ভোক্তাদের সচেতনতায় খরচের প্রবণতা ব্যাপক হ্রাসের ফলে এই ভোক্তা ব্যয়েরও বার্ষিক হার ৩৪ দশমিক ৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে; যা দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুত পতনের রেকর্ড।
এসএ/পিআর