বিপজ্জনক সীসায় মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ৮০ কোটি শিশু
বিশ্বে প্রতি তিনটি শিশুর মধ্যে একজনের শরীরে বিপজ্জনক মাত্রায় বিষাক্ত সীসা রয়েছে। এর কারণে তারা দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক ক্ষতির হুমকিতে পড়েছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। বৃহস্পতিবার ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভাল্যুয়েশন পরিচালিত এ গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ।
গবেষণা প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বের অন্তত ৮০ কোটি অনূর্ধ্ব-১৯ বছর বয়সীদের রক্তে পাঁচ মাইক্রোগ্রাম/ডেসিলিটার সীসা রয়েছে।
ইউনিসেফের নীতি বিশেষজ্ঞ এবং ওই প্রতিবেদনের লেখক নিকোলাস রিজ বলেন, এটি অত্যন্ত ভয়াবহ চিত্র। আমরা সীসার বিষাক্ত প্রকৃতি সম্পর্কে জানতাম, কিন্তু এটা কতটা বিস্তৃত এবং এতে কত শিশু আক্রান্ত তা জানতাম না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, মানবদেহে সীসার উপস্থিতির কোনও নিরাপদ মাত্রা নেই। এর খুব সামান্য পরিমাণে অস্তিত্বও বিপজ্জনক বিষ হিসেবে কাজ করতে পারে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) মানবদেহে পাঁচ মাইক্রোগ্রাম/ডেসিলিটারের বেশি মাত্রায় সীসার উপস্থিতিতে ব্যবস্থা নেয়া আবশ্যক বলে নির্ধারণ করেছে।
সীসা একধরনের শক্তিশালী নিউরোটক্সিন, এতে উচ্চমাত্রায় আক্রান্ত হলে মৃত্যুও হতে পারে। শরীরে সীসার পরিমাণ অল্প থাকলেও এর প্রভাবে ব্যথা, বমি, মানসিক সমস্যা হতে পারে। অন্তঃসত্ত্বা কেউ স্বল্পমাত্রায় সীসার মুখোমুখি হলে অপরিপক্ব (নির্দিষ্ট সময়ের আগে) সন্তান জন্ম দিতে পারেন।
গবেষকরা বলছেন, তাদের গবেষণায় প্রাপ্ত সীসার পরিমাণে মানুষের বৃদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা হ্রাস, উচ্চমাত্রায় সহিংসতা এবং হৃদরোগের মতো দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সংকট তৈরি হতে পারে।
শিশুরা সীসার ক্ষতির মুখে অত্যন্ত অরক্ষিত। এটি তাদের মস্তিষ্কের বিকাশ, স্নায়ুতন্ত্র, কিডনি, ফুসফুস, হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করে। অত্যন্ত ধীরে ধীরে বাড়তে থাকায় এর প্রভাবগুলো তাৎক্ষণিকভাবে বোঝাও যায় না।
ইউনিসেফকে প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহযোগিতা করা বেসরকারি সংস্থা পিওর আর্থের রিচার্ড ফুলার জানান, পাঁচ মাইক্রোগ্রাম/ডেসিলিটার সীসা শিশুদের আইকিউ স্কোর তিন থেকে পাঁচ পয়েন্ট কমিয়ে দিতে পারে। রক্তে উল্লেখিত মাত্রায় সীসার উপস্থিতি সহিংসতার পরিমাণ দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে।
ইতোমধ্যেই প্রতি বছর অন্তত নয় লাখ মানুষ সীসা সংক্রান্ত বিষক্রিয়ায় মারা যাচ্ছেন। গবেষকরা জানিয়েছেন, পেট্রোল, রঙ ও পানির পাইপ তৈরিতে বহু বছর ধরেই সীসা ব্যবহৃত হচ্ছে। এগুলোর মাধ্যমে শিশুদের শরীরে বিষাক্ত ধাতুটি প্রবেশের আশঙ্কা রয়েছে।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান
কেএএ/এমকেএইচ