রাম মন্দির নির্মাণে এক কেজি সোনার ইট দিতে চান বাবরের বংশধর
ভারতের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদের জায়গায় রাম মন্দির নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে মোদি সরকার। এই মন্দির তৈরির জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাতে সোনার ইট তুলে দিতে চান শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের বংশধর প্রিন্স ইয়াকুব হাবিবুদ্দিন তুসি।
ভারতীয় একটি সংবাদ সংস্থাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘ভারতে বসবাসকারী আমার হিন্দু ভাইদের আমি আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। আর মন্দিরের জন্য আমি যে এক কেজি সোনার ইট দেব বলেছিলাম, তা প্রস্তুত রয়েছে। এই ইটটি প্রধানমন্ত্রী মোদির হাতে তুলে দেয়ার জন্য তার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চেয়েছি।’
এর দুদিন আগে এই মন্দির তৈরির জন্য সব সম্প্রদায়ের মানুষের কাছ থেকেই অনুদান নেয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন রাম মন্দির ট্রাস্টের এক সদস্য। তিনি বলেছিলেন, যাদের ভগবান রামের ওপর আস্থা রয়েছে তাদের কাছ থেকে অনুদান নিতে আমাদের কোনো অসুবিধা নেই।
তবে হাবিবুদ্দিন তুসি রাম মন্দির ইস্যুতে এই প্রথম আলোচনায় আসলেন তা কিন্তু নয়। গত বছরের আগস্টে তিনি বলেছিলেন, ‘ওই জমির কোনো নথি আমার কাছে নেই। তবে মুঘলের বংশধর হিসেবে ওই জমিতে আমার অধিকারই সবথেকে বেশি। বাবরের বংশধর হিসেবে অযোধ্যার বিতর্কিত জমি আমার হাতেই তুলে দেয়া উচিত সুপ্রিম কোর্টের। আমার হাতে এলে পুরো জমিটাই আমি রাম মন্দির তৈরির জন্য হিন্দুদের হাতে তুলে দেব। রাম নিয়ে এই দেশের আবেগ আমি বুঝি। তাই বিতর্কিত ওই জমিতে রাম মন্দিরই তৈরি হওয়া উচিত।’ তিনি আরও বলেন, ১৫২৯ সালে মন্দির ভেঙেই সেখানে মসজিদ বানানো হয়েছিল।
রাম মন্দির ধ্বংস করে অযোধ্যার ওই জমিতে বাবরি মসজিদ তৈরি করা হয়েছিল বলে মনে করেন ভারতের রামভক্তরা। তাদের এই বিশ্বাসকে মেনে নিয়ে ওই জায়গায় মসজিদ নির্মাণের ঘটনার জন্য পুরো পরিবারের পক্ষ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করেন হাবিবুদ্দিন তুসি। শুধু তাই নয়, এ সময় নিজের মাথায় রামলালার ‘চরণ-পাদুকা’ও ধারণ করেন।
ভারতের কট্টর হিন্দুদের বিশ্বাস, উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় ভগবান রামচন্দ্র জন্মেছিলেন। তার জন্মস্থান বলে চিহ্নিত জায়গায় ষোড়শ শতকে মোগল সম্রাট বাবরের আমলে একটি মসজিদ তৈরি হয়। নাম দেয়া হয় বাবরি মসজিদ। মন্দির ভেঙে মসজিদ তৈরি নিয়ে সেই থেকে হিন্দু-মুসলমানের যে বিবাদ চলছিল, ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর তা অন্যদিকে মোড় নেয়। ওইদিন কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা বাবরি মসজিদ ধ্বংস করেন। এ নিয়ে সৃষ্ট সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় অন্তত দুই হাজার লোক নিহত হন।
এলাহাবাদ হাইকোর্ট ওই জমি বিবদমান তিন পক্ষ রাম লালা, সুন্নি ওয়াক্ফ বোর্ড ও নির্মোহী আখড়ার মধ্যে সমানভাবে ভাগ করার নির্দেশ দেন। তবে সেই নির্দেশ চ্যালেঞ্জ হয় সুপ্রিম কোর্টে। পরে গত বছরের ৯ নভেম্বর ওই জায়গাটিতে মন্দির তৈরির পক্ষেই চূড়ান্ত রায় দিয়েছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। এর পরই ওই জায়গায় রাম মন্দির নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে মোদি সরকার।
এসআর/জেআইএম