গ্রেফতার বাংলাদেশি রায়হানকে দেশে ফেরত পাঠাবে মালয়েশিয়া
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরায় প্রচারিত একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে লকডাউনে মালয়েশিয়ায় বসবাসরত অভিবাসীদের প্রতি দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বৈষম্যমূলক ও বর্ণবাদী আচরণ নিয়ে সাক্ষাৎকার দেওয়ায় গ্রেফতার বাংলাদেশি রায়হান কবিরকে দেশে ফেরত পাঠানোর কথা জানিয়েছে দেশটির সরকার।
নিউইয়র্ক টাইমসের অনলাইন প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়ে বলা হয়, মালয়েশিয়ার অভিবাসন কর্তৃপক্ষের মহাপরিচালক খাইরুল দাযাইমি দাউদ শনিবার এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলেন, ‘এই বাংলাদেশি নাগরিককে দেশে ফেরত পাঠানো ছাড়াও চিরতরে মালয়েশিয়া প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে তাকে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে।’
শুক্রবার (২৪ জুলাই) বিকেলে রাজধানী কুয়ালালামপুরের জালান পাহাংয়ের একটি কনডোমিনিয়াম থেকে পুলিশ ও ইমিগ্রেশনের বিভাগের স্পেশাল ব্রাঞ্চের সদস্যরা যৌথ অভিযান চালিয়ে রায়হান কবিরকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন ইমিগ্রেশনের মহাপরিচালক খায়রুল দাযাইমি দাউদ।
মালয়েশিয়ায় অভিবাসীদের প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক চলতি লকডাউনে বৈষম্যমূলক ও বর্ণবাদী আচরণ নিয়ে ‘লকডআপ ইন মালয়েশিয়াস লকডাউন’ শিরোনামে গত ৩ জুলাই ২৫ মিনিটের একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন আল-জাজিরা টেলিভিশনে প্রচারিত হয়। সেখানে সাক্ষাৎকার দেন রায়হান কবির।
প্রতিবেদনটি প্রচারিত হওয়ার পর মালয়েশিয়া সরকার এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে আল-জাজিরার এমন প্রতিবেদনকে ‘ভিত্তিহীন ও মিথ্যাচার’ বলে অভিহিত করে। এরপর রায়হান কবিরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির সঙ্গে সঙ্গে দেশটিতে রায়হান কবিরের (২৫) ওয়ার্ক পারমিটও (ভিসা) বাতিল করা হয়।
রায়হানের খোঁজ দিতে জনসাধারণের সহায়তা চেয়ে একটি নোটিশও জারি করে দেশটির অভিবাসন বিভাগ। তার বিরুদ্ধে এর আগে বাংলাদেশি অপহরণের অভিযোগে মামলা হয়েছে এবং একাধিকবার মালয়েশিয়ায় জেলও খাটেন তিনি। রায়হান এক সময় মালয়েশিয়া ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন।
গ্রেফতারের আগ মুহূর্তে দেশের ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারকে পাঠানো হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমি কোনো মিথ্যা বলিনি। শুধু অভিবাসীদের বিরুদ্ধে বৈষম্যের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। আমি আমার অভিবাসীর মর্যাদা চাই। আমি বিশ্বাস করি সব অভিবাসী ও বাংলাদেশ আমাদের পাশে দাঁড়াবে।’
আল-জাজিরায় প্রতিবেদনটি প্রচার হওয়ার পর অভিবাসন বিভাগের প্রধান খায়রুল দাজায়মি দাউদ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, মালয়েশিয়ার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নকারীদের বিরুদ্ধে ভিসা বা পারমিট বাতিলসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং গণমাধ্যমে বক্তব্য দেয়ার ক্ষেত্রে অভিবাসীদের কঠোরভাবে সতর্ক করে দেয়া হয়।
আল-জাজিরার ওই প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, মহামারির সময়ে মালয়েশিয়া সরকার মুভমেন্ট কন্ট্রোল অর্ডারের (এমসিও) মাধ্যমে অভিবাসীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। অভিবাসীদের প্রতি মালয়েশিয়ার নিপীড়নের ছবিটা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও গভীর উদ্বেগের।
এসএ/এমকেএইচ