ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

ট্রাম্পের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলেই চীনা কনস্যুলেট বন্ধ?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৩:১৫ পিএম, ২৩ জুলাই ২০২০

যুক্তরাষ্ট্রের আগামী নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনবিরোধী নানা পদক্ষেপ ততই জোরাল করছেন। বাণিজ্য যুদ্ধের পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন ইস্যুতে দুই দেশের সম্পর্ক ইতোমধ্যে জটিল আকার ধারণ করেছে। এর মাঝে আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনে চীনা কনস্যুলেট বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন; যা চীনকে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষেপিয়ে তুলেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বেইজিং। চীনের সরকারি সংবাদমাধ্যমগুলোতে নির্বাচনী স্বার্থ হাসিলে ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের বিরুদ্ধে এ ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ‘বেপরোয়া এবং বিপজ্জনক’ এই পদক্ষেপের জন্য মাশুল গুনতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে।

মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন বাইগান হিউস্টনে চীনা কনস্যুলেট বন্ধের নির্দেশের পেছনে একগাদা অভিযোগ সামনে এনেছেন। বেইজিংয়ের ক্রমবর্ধমান কট্টর ও আগ্রাসী বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপের কারণে মার্কিন প্রশাসন হিউস্টনে চীনা কনস্যুলেট বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতা, সাবেক কর্মকর্তা এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের সাইবার ও শিল্প গুপ্তচরবৃত্তি, হংকং- জিনজিয়াংয়ে মানবাধিকারের লঙ্ঘন এবং দক্ষিণ চীন সাগরে সম্প্রসারণবাদী আগ্রাসন ঠেকাতে শক্তিশালী একটি ধাক্কার দরকার ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই হিউস্টনে চীনা কনস্যুলেট বন্ধ করে দেয়ার পেছনে ট্রাম্পের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলে অনেকেই ধারণা করছেন।

তারা বলছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের সঙ্গে বড় ধরনের সংঘাত এড়াতে অত্যন্ত সুচারুভাবে বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে জনমত জরিপে ট্রাম্পকে এগিয়ে রাখতে চীনের বিরুদ্ধে চড়াও হওয়ার একটি গোপন রূপরেখা তৈরি করেছেন হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা। সমালোচকরা বলছেন, করোনাভাইরাস মহামারিতে সৃষ্ট বিপর্যয় এবং অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় হোয়াইট হাউসের ব্যর্থতার দায় আড়াল করার চেষ্টা করছেন তারা।

গত নির্বাচনে ট্রাম্পের নির্বাচনী জয়ের নেপথ্যে অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদের জোয়ার তৈরির ভূমিকা ছিল অনবদ্য; এবারও সেই ধারায় ফেরার চেষ্টা চলছে। চীনে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক বাণিজ্য সহকারী জেফ মুন বলেন, পররাষ্ট্র দফতর বলেছে যে, মেধাস্বত্ব চুরির প্রতিক্রিয়ায় হিউস্টনে চীনা কনস্যুলেট বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু সাবেক এই মার্কিন বাণিজ্য সহকারীর প্রশ্ন : যদি তাই হবে, তাহলে কেন শুধুমাত্র একটি কনস্যুলেটই টার্গেট করা হলো?

তিনি বলেন, এটাই যদি আসল কারণ হয়, তাহলে সান ফ্রান্সিসকোতে সিলিকন ভ্যালির কাছে চীনা কনস্যুলেট বন্ধ করতে হবে। হঠাৎ চীনা কনস্যুলেট বন্ধ করে দেয়ার পেছনে মার্কিন প্রেসিডেন্টের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন মুন।

সিএনএনকে তিনি বলেন, চীনের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ ট্রাম্পের সমর্থকদের জন্য লাল মাংসের মতো; যারা ট্রাম্পের কোভিড-১৯ মোকাবিলায় নেয়া পলিসি থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরাতে চীনের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য মুখিয়ে থাকেন।

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র মর্গান ওর্টাগাস বলেছেন, আমেরিকার মেধাস্বত্ব এবং গোপনীয় তথ্য সুরক্ষায় হিউস্টনে চীনা কনস্যুলেট বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করেই কেন কনস্যুলেট বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত এল সেব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে বিস্তারিত কোনও তথ্য দেননি তিনি।

চীনের ব্যাপারে বৃহস্পতিবার বিবৃতি দেয়ার কথা রয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী মাইক পম্পেওর। বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মাত্রই তিনি ইউরোপ সফর শেষ করেছেন। নির্বাচনের মাত্র চার মাস আগে চীনের সঙ্গে এ ধরনের দ্বন্দ্বের পেছনে রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছে দেশটির প্রধানবিরোধী দল ডেমোক্র্যাটও।

নির্বাচন অথবা দুই দেশের সামগ্রিক দ্বন্দ্বে চীনের সাম্প্রতিক বিশেষ কোনও গোয়েন্দা তৎপরতার ব্যাপারে জানেন না বলে মন্তব্য করেন ডেমোক্র্যাট দলীয় সিনেটর অ্যাঙ্গুস কিং। তিনি বলেন, চীনকে মোকাবিলা করার একটি ভালো উদ্দেশ্য আছে। আমার উদ্বেগ হলো- এই উত্তেজনা বাড়িয়ে কি চীনকে মোকাবিলা করা যাবে? অথবা চার মাস পরের নির্বাচনের সঙ্গে এর কি কোনও সম্পর্ক আছে?

এসআইএস/পিআর