যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ে গলা ধরে এল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধানের
বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস মহামারির লড়াইয়ে ‘নেতৃত্বের অভাবে’র নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস। একই সঙ্গে এই মহামারি মোকাবিলায় বৈশ্বিক ঐক্য গড়ে তোলার জন্য আবেগপ্রবণ এক আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
নভেল করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্তের ছয় মাস পর বিশ্বের বেশ কিছু দেশে সংক্রমণ বৃদ্ধি এবং বিস্তারের লাগাম টানার লড়াইয়ের মাঝে শুক্রবার ডব্লিউএইচও প্রধান বলেন, আমার বন্ধুরা, কোনও ভুল করবেন না। আমরা এখন সবচেয়ে বড় যে হুমকির মুখোমুখি হয়েছি সেটি ভাইরাস নয়। বরং বৈশ্বিক এবং জাতীয় পর্যায়ে আমরা নেতৃত্ব ও সংহতির অভাবের মুখোমুখি হয়েছি।
করোনাভাইরাস মহামারির শুরু থেকেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভাইরাসের উৎপত্তি ও বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় চীনকে দায়ী করেন মার্কিন এই প্রেসিডেন্ট। একই সঙ্গে এই মহামারির সময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চীনের পক্ষে কাজ করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতি ট্রাম্পের এই ক্ষোভ থেমে থাকেনি এখানেই। গত ১৪ এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বার্ষিক অনুদান বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। গত মঙ্গলবার বৈশ্বিক এই স্বাস্থ্য সংস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের সব ধরনের অর্থায়ন বন্ধ করছেন বলে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘ ও মার্কিন কংগ্রেসকে জানান তিনি; যা আগামী বছরের জুলাই থেকে কার্যকর হবে।
বৈশ্বিক এই স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ছিন্নের ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে গলা ধরে আসে টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুসের। তিনি বলেন, এটি এক ধরনের ট্রাজেডি, যা আমাদের অনেক বন্ধু এবং অনেক জীবন হারাতে বাধ্য করছে। আমরা এই মহামারিকে বিভক্ত হয়ে হারাতে পারব না।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যেকদিন করোনা আক্রান্তের রেকর্ড হচ্ছে। দেশটিতে ৩০ লাখের বেশি মানুষ ইতোমধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন সোয়া লাখের বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে করোনা নিয়ন্ত্রণে আসার আগেই অর্থনীতির পুনরায় খুলে দেয়ার চেষ্টায় বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তেও সংক্রমণ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।
গত কয়েক মাস ধরে এই ভাইরাসটি নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে আসা ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারাও সংক্রমিত হয়েছেন। ভারতেও রেকর্ড সংক্রমণ হচ্ছে, মেক্সিকোতেও দ্রুত সংক্রমণের বিস্তার ঘটছে। করোনা মহামারির বিরুদ্ধে দ্রুত সফলতার দাবি করে আসা অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় দফায় কিছু শহরে লকডাউনে যেতে বাধ্য হয়েছে।
আবেগপ্রবণ কণ্ঠে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বলেন, নির্বিচারে মানুষ হত্যাকারী সাধারণ এক শত্রুর বিরুদ্ধে মানবজাতির ঐক্যবদ্ধ হওয়া কি খুব কঠিন? আমরা কি সাধারণ শত্রুকে আলাদা অথবা চিহ্নিত করতে পারছি না? আমরা কি বুঝতে পারছি না যে, আমাদের মধ্যে বিভাজন এবং ফাটল কেবলমাত্র ভাইরাসের জন্যই সুবিধাজনক?
সূত্র: সিএনএন, ইভিনিং স্টান্ডার্ড।
এসআইএস/পিআর