করোনায় বাংলাদেশে আরও উদ্বেগজনক পরিস্থিতির আশঙ্কা
টিকা বা প্রতিষেধক বাজারে না আসলে আগামী আট মাসে বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক হারে দেখা বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি)। তবে এমন আশঙ্কার কথা জানানো হলেও ওইসময় দৈনিক আক্রান্তের হার কেমন হবে এবং মোট আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কোথায় গিয়ে ঠিকতে পারে সে বিষয়ে কিছু বলেননি তারা।
৮৪টি দেশে এবং বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে বাংলাদেশের বিষয়ে এমন উদ্বেগজনক পূর্বাভাস দিয়েছে এমআইটির স্লোয়ান স্কুল অব ম্যানেজমেন্ট।
দেশে বুধবার নতুন করে আরও ৪৬ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ১৯৭ জনে। আর নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন আরও তিন হাজার ৪৮৯ জন। এ নিয়ে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৭২ হাজার ১৩৪ জনে। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৮০ হাজার ৮৩৮ জন।
গত ডিসেম্বরে চীনের উহান শহর থেকে ছড়ানোর পর বিশ্বজুড়ে এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা এখন প্রায় এক কোটি ২০ লাখ। মৃতের সংখ্যা পাঁচ লাখ ৪৬ হাজার ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। প্রথম মৃত্যু হয় ১৮ মার্চ।
তবে শুধু বাংলাদেশ নয়; আগামী বছরে করোনার সবচেয়ে বাজে শিকারে পরিণত হবে ভারত। এমআইটির গবেষকরা বলছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভারতে প্রতিদিন প্রায় তিন লাখ মানুষ আক্রান্ত হতে পারেন করোনাভাইরাসে। তারা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতির পরিবর্তন না হলে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, রাশিয়াকে পেছনে ফেলে বিশ্বে করোনা আক্রান্ত দেশগুলোর তালিকায় শীর্ষে পৌঁছে যাবে ভারত। পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ জায়গায় পৌঁছাবে সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের মধ্যে।
গবেষকদের দাবি, কোনো কার্যকরী টিকা বাজারে না আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভারতে করোনায় আক্রান্ত হবেন দৈনিক ২ লাখ ৮৭ হাজার মানুষ। আর আগামী মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে বিশ্বে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছাবে ২০ থেকে ৬০ কোটির মধ্যে।
এমআইটির স্লোয়ান স্কুল অব ম্যানেজমেন্টের গবেষকরা এই সমীক্ষা চালাতে গিয়ে দুটি বিশেষ মডেল ব্যবহার করেছেন। একটি হলো ‘এসইআইআর (সাসেপ্টেবল, এক্সপোজড, ইনফেকশাস, রিকভার্ড)’। অন্য মডেলটি পুরোপুরি গাণিতিক।
এমআইটির সমীক্ষা বলছে, করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হলে আগামী ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যায় বিশ্বের সব দেশকেই টপকে যাবে ভারত। তার ঠিক পরেই থাকবে যুক্তরাষ্ট্র। ওইসময় যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় দৈনিক আক্রান্ত হবেন ৯৫ হাজার মানুষ। দক্ষিণ আফ্রিকায় দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা হবে ২১ হাজার। আর ইরানে ১৭ হাজার এবং ইন্দোনেশিয়ায় ১৩ হাজার।
তিনটি সূচককে সামনে রেখে এই পূর্বাভাস দিয়েছেন গবেষকরা।
প্রথমত, এখন কী হারে কোভিড পরীক্ষা হচ্ছে আর তার ফলাফল কী?
দ্বিতীয়ত, জুলাইয়ের ১ তারিখ থেকে যদি কোভিড পরাক্ষার হার দিনে ০.১ শতাংশ বাড়ে, তাহলে কী হবে?
তৃতীয়ত, কোভিড পরীক্ষার হার যদি এখনকার মতোই থাকে আর যদি একজন সংক্রমিত সর্বাধিক আরও ৮ জনকে সংক্রমিত করেন, তাহলে কী হবে?
গবেষকরা বলছেন, যতবেশি কোভিড পরীক্ষা হবে, ততই সংক্রমণ রুখে দেয়ার কাজটা সহজ হবে। গবেষকদের মতে, পরীক্ষার হার এখনকার মতোই থাকলে বিশ্বের ৮৪টি দেশে আগামী ফেব্রুয়ারির শেষে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হবে সাড়ে ১৫ কোটি। আর কোভিড পরীক্ষার হার যদি দিনে ০.১ শতাংশ বাড়ে, তাহলে ওই ৮৪টি করোনা আক্রান্তের সংখ্যা আগামী আট মাসে বেড়ে হবে ১৩ কোটি ৭০ লাখ।
গোটা বিশ্বে করোনা আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন গবেষকরা। তাদের মতে, আক্ষরিক অর্থে যতজন করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন বা মারা যাচ্ছেন, তার সঠিক পরিসংখ্যান দেয়া হচ্ছে না।
এমআইটির গবেষকদের মতে, চলতি বছরের ১৮ জুন পর্যন্ত বিশ্বে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৮ কোটি ৮৫ লাখ মানুষ। মৃত্যু হয়েছে ৬ লাখ মানুষের। যা সংক্রমণের সরকারি হিসাবের চেয়ে ১১.৮ গুণ বেশি। আর মৃতের সংখ্যার সরকারি হিসাবের চেয়ে বেশি ১.৪৮ গুণ।
জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১৮ জুন পর্যন্ত বিশ্বে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৮২ লাখ ৪০ হাজার মানুষ। মৃতের সংখ্যা চার লাখ ৫৪ হাজার ৬১০ জন।
এসআর/পিআর