ঘর থেকে বের হলেই মাস্ক পরা উচিত, বলছে ব্রিটেনের রয়্যাল সোসাইটি
ভয়ঙ্কর ধরনের ছোঁয়াচে রোগ কোভিড-১৯ (করোনাভাইরাস)। এ পর্যন্ত এই ভাইরাসে বিশ্বে আক্রান্ত হয়েছে এক কোটির বেশি। মারা গেছে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ। তাই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ আসা মানেই বিরাট ঝুঁকি। তবে এমন অনেক করোনা রোগী আছেন যাদের কোনো উপসর্গ নেই। তাই কোনো ধরনের সুরক্ষাব্যবস্থা ছাড়া ঘরের বাইরে চলাফেরাও এখন ঝুঁকির কারণ।
এই অবস্থায় নিজের সুরক্ষার জন্য বাইরে চলাফেরার সময় মাস্ক পরতে পরামর্শ দিচ্ছে ব্রিটেনের জাতীয় বিজ্ঞানবিষয়ক একাডেমি রয়্যাল সোসাইটি। তারা বলছে, করোনাভাইরাস ঠেকাতে হলে ঘরের বাইরে সবারই উচিত ফেস মাস্ক পরা।
রয়াল সোসাইটির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ভেংকি রামকৃষ্ণ বলছেন, জনবহুল প্রকাশ্য স্থানে যেতে হলে অবশ্যই মাস্ক পরা উচিত। এতে যিনি মাস্ক পরছেন তিনিও যেমন নিরাপদ থাকবেন তেমনি তার কাছাকাছি যারা আছেন তারাও সুরক্ষা পাবেন। তার এ দাবির পক্ষে তথ্যপ্রমাণ রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
রয়্যাল একাডেমি বলছে, মাস্ক পরতে না চাওয়াকে ‘মদ খেয়ে গাড়ি চালানো’র মতোই খারাপ চোখে দেখা উচিত।
এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছিল যে, মাস্ক পরার পক্ষে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ নেই। কিন্তু জুন মাসে তারা তাদের পরামর্শে পরিবর্তন এনে বলে, যেখানে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা সম্ভব নয়, এ রকম প্রকাশ্য স্থানে মাস্ক পরা উচিত।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়া, কথা বলা বা হাঁচি-কাশি দেয়ার সময় নাক-মুখ দিয়ে যে অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পানির কণা বেরিয়ে আসে, তার মাধ্যমেই করোনাভাইরাস সবচেয়ে বেশি ছড়ায়।
পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পল এডেলস্টাইন। তিনি মাস্কের কার্যকারিতা নিয়ে একটি গবেষণা রিপোর্ট লিখেছেন। এই অধ্যাপক বলেন, মাস্ক যে অন্য লোকদের সংক্রমিত হওয়া থেকে রক্ষা করে তা সবসময়ই স্পষ্ট ছিল। তিনি বলেন, ‘যেসব লোক ভাইরাস বহন করছেন কিন্তু দেহে কোনো উপসর্গ নেই, তারা তাদের অজান্তেই নাক-মুখ দিয়ে ড্রপলেট ছড়াচ্ছেন। তাদের মুখ ঢাকা থাকলে এসব ক্ষুদ্র পানির বিন্দুর বেশিরভাগই মাস্কে আটকা পড়বে অন্য কাউকে সংক্রমিত করার আগেই।’
তবে মাস্ক যে শুধু অন্যকে আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা করে তা কিন্তু নয়। যিনি মাস্ক পরে আছেন তাকেও যে এটা সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে, সে বিষয়েও প্রমাণ রয়েছে বলে জানান অধ্যাপক এডেলস্টাইন।
সিঙ্গাপুরের বিজ্ঞানীরা বলছেন, একজন ব্যক্তি করোনাভাইরাসে সংক্রমণের ব্যাপারে সচেতন হবার আগের ২৪-৪৮ ঘণ্টা সময়কালে রোগ ছড়ানোর ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি থাকে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অবশ্য বলেছে, মাস্ক পরা এবং খুলে নেয়ার সময় ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার ঝুঁকি আছে এবং এ ব্যাপারে ব্যবহারকারীকে সতর্ক থাকতে হবে।
এপ্রিল মাসে এক গবেষণায় দেখা যায়, যুক্তরাজ্যে মাত্র ২৫ শতাংশ লোক মাস্ক পরছেন। অন্যদিকে ইতালিতে ৮৩.৪ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ৬৫.৮ শতাংশ এবং স্পেনে ৬৩.৮ শতাংশ লোক মাস্ক পরেন।
মে মাসের শেষের দিকে অস্ট্রিয়া মাস্ক পরা সংক্রান্ত নিয়মগুলো তুলে নেয়। কিন্তু অস্ট্রিয়ার উত্তর-পশ্চিমে জার্মানি ও চেক প্রজাতন্ত্র-সংলগ্ন সীমান্ত এলাকায় নতুন করে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর দেশটির একাংশে মাস্ক পরা আবার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
সূত্র : বিবিসি বাংলা
এসআর/জেআইএম