ঘুষ দেয়ার কথা স্বীকার করেও নিজেকে ‘নির্দোষ’ বলছেন পাপুল
মানবপাচার, অবৈধ ভিসা বিক্রি, মানি লন্ডারিং ও ঘুষ লেনদেনের যে অভিযোগ উঠেছে তাতে নিজেকে ‘পরিচ্ছন্ন’ দাবি করেছেন কুয়েত আটক বাংলাদেশি সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল। উল্টো দেশটির সরকারি কর্মকর্তাদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়েছেন তিনি। তিনি বলেছেন, আমি এ ব্যাপারে পরিচ্ছন্ন...তবে কিছু সরকারি কর্মকর্তা পরিচ্ছন্ন না।
রাষ্ট্রপক্ষের জিজ্ঞাসাবাদে নিজেকে এভাবেই আত্মপক্ষ সমর্থন করেছেন বাংলাদেশি এই সংসদ সদস্য। আরব টাইমসের অনলাইনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
কুয়েতি কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে ২০ হাজার বাংলাদেশিকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে কুয়েতে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে এমপি পাপুলের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেখানে তাদের যে চাকরি দেয়ার কথা ছিল, বেশিরভাগই সেই চাকরি পাননি। যে বেতনের কথা বলা হয়েছিল, তারা তার চেয়ে কম বেতন পেয়েছেন বা একদমই পাননি।
তবে রাষ্ট্রপক্ষের জিজ্ঞাসাবাদে স্বেচ্ছায় ঘুষ দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল। তার দাবি, তিনি কুয়েতি কর্মকর্তাদের বাধ্য হয়ে ঘুষ দিয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কুয়েতে আমার ৯ হাজার কর্মী রয়েছে এবং (এ বিষয়ে) আমার শতভাগ টেন্ডার রয়েছে। এ পর্যন্ত কেউ আমার কাজের অর্জন নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি। অথচ (কুয়েতের) কিছু সরকারি কর্মকর্তা আমার টেন্ডার বন্ধ করে দেয়ার চেষ্টায় রয়েছেন। তাদেরকে টেন্ডারে রাজি করানোর একমাত্র মাধ্যম হলো তাদের ঘুষ দিতে হবে। তাই আমি এক্ষেত্রে কী আর করতে পারি?’
সূত্রের বরাত দিয়ে আরব টাইমস তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশি এমপি আত্মপক্ষ সমর্থন করতে গিয়ে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে তদন্ত কর্মকর্তাদের বলেছেন, তার কোম্পানিতে যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে তা অন্য কোম্পানিতে নেই। তার কোম্পানির কাজের মানের সাক্ষ্যস্বরূপ চুক্তিমাফিক সরকারি এজেন্সিগুলোর সব শর্তই তিনি পূরণ করে আসছেন। তবে সব সমস্যার মূল রয়েছে কিছু সরকারি কর্মকর্তা।
গত ৬ জুন কুয়েতের মুশরেফ আবাসিক এলাকা থেকে বাংলাদেশের সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলকে গ্রেফতার করে দেশটির অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেফতারের পর আদালতে হাজির করলে জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক। গত বুধবার পাপুলকে ২১ দিন কারাগারে আটক রাখার নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল।
বাংলাদেশি এ সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত ও তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করতে যাচ্ছে কুয়েতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কুয়েতি সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, এমপি পাপুলের প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৫০ লাখ কুয়েতি দিনার। এর মধ্যে ৩০ লাখই হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের মূলধন।
মানবপাচার, অবৈধ ভিসা বিক্রি ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ ওঠায় এমপি পাপুল ও তার প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দের সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
এদিকে, অর্থপাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পর আরও অনুসন্ধানের স্বার্থে সংসদ সদস্য ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালক শহিদ ইসলাম পাপুলকে সপরিবারে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গত ৯ জুন বাংলাদেশে দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিনের পাঠানো চিঠিতে পাপুল, তার স্ত্রী, মেয়ে ও শ্যালিকার জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, টিআইএন নম্বর, আয়কর রিটার্নসহ ব্যক্তিগত সব নথিপত্র তলব করা হয়। কিছু নথি দুদকে পৌঁছালেও বেশ কিছু অত্যাবশ্যক নথিপত্র পায়নি সংস্থাটি। সে জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতেও তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছে দুদক। এরই ধারাবাহিকতায় গত সপ্তাহে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয় বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন সংস্থাটি।
এসআর/পিআর
সর্বশেষ - আন্তর্জাতিক
- ১ তসলিমা নাসরিনের ‘লজ্জা’ অবলম্বনে নির্মিত নাটকে মমতার নিষেধাজ্ঞা
- ২ ট্রাম্পের এআই উপদেষ্টা হচ্ছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত শ্রীরাম কৃষ্ণান
- ৩ বাংলাদেশের জন্য উৎপাদিত বিদ্যুৎ অন্য প্রতিবেশী দেশে বেচতে চায় আদানি
- ৪ নিউইয়র্কে পাতাল ট্রেনে নারীর গায়ে আগুন ধরিয়ে হত্যা
- ৫ ইউক্রেনের একের পর এক গ্রাম দখলের দাবি রাশিয়ার