করোনায় রেমিট্যান্স বন্ধ, চুলা জ্বলছে না নেপালিদের ঘরে
কাতারে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন শিবা কালা লিম্বুর স্বামী রাম কুমার। কিন্তু, করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর থেকেই সেখানে আয়-উপার্জন বন্ধ রামের। ফলে নেপালে স্ত্রী-সন্তানের কাছে আর আগের মতো অর্থ পাঠাতে পারছেন না। হঠাৎ এমন অর্থসংকটে বড় বিপদেই পড়েছেন লিম্বু। পাঁচ বছরের এক সন্তান রয়েছে ঘরে। স্বামীর চাকরি নেই, বিকল্প কোনও আয়ও নেই তাদের। ফলে, দিনে দু’বেলা ঠিকমতো খাওয়াটাই যেন কঠিন হয়ে পড়েছে পরিবারটির।
এমন দুরবস্থা শুধু লিম্বুর একার নয়। নেপালের সরকারি হিসাবে, দেশটির ৫৬ শতাংশ পরিবার বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর নির্ভরশীল। তাদের আর কোনও আয়ের উৎসও নেই।
গত বছর নেপালে প্রায় ৮১০ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী নেপালিরা, যা দেশটির মোট জিডিপির প্রায় এক চতুর্থাংশ। কিন্তু, করোনা মহামারির কারণে চলতি বছর এর পরিমাণ অন্তত ১৪ শতাংশ কমে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
লাখ লাখ নেপালি শ্রমিক মালয়েশিয়া এবং তেলপ্রধান অর্থনীতির উপসাগরীয় দেশগুলোতে কাজ করেন। করোনার কারণে তেলের দাম ও চাহিদা কমে যাওয়ায় ওই দেশগুলোতে সংকট দেখা দিয়েছে চাকরির বাজারে।
লিম্বু জানান, মহামারির আগে প্রতি মাসে ২০ হাজার নেপালি রুপি পাঠাতেন তার স্বামী। কিন্তু, গত ছয় মাসে মাত্র ৪০ হাজার রুপি পাঠাতে পেরেছেন তিনি, সেটাও সেখানকার বন্ধুদের কাছ থেকে ধার করে।
২৫ বছর বয়সী এ নারী বলেন, ‘কিছু অর্থ দিয়ে বাসা ভাড়া দিচ্ছি, বাকিটা খরচ হচ্ছে খাবার-দাবারে। আমি প্রায়ই রাতে খাই না, যেন সামান্য ওই খাবারটুকু আমার মেয়ের জন্য থাকে।’
নেপাল ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট থিংক-ট্যাঙ্কের বিশেষজ্ঞ গণেশ গুরুং বলেন, নেপালের নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর জন্য রেমিট্যান্স খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাসাভাড়া, খাবার, স্কুলের বেতনসহ নিত্যপণ্যের জন্য তারা পুরোটাই এর ওপর নির্ভরশীল।
রেমিট্যান্স ছাড়া এসব পরিবার আরও দরিদ্র হয়ে পড়বে। এর সঙ্গে মানবপাচার ও পতিতাবৃত্তির ঘটনাও বাড়বে বলে আশঙ্কাপ্রকাশ করেন তিনি।
সূত্র: রয়টার্স
কেএএ/