নেপালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ার মিথ্যাচার
কথায় আছে, ‘যারে দেখতে নারি, তার চলন বাঁকা’। নেপাল-ভারতের বিষয়টা হয়েছে অনেকটা সেরকমই। বেশ কিছুদিন ধরেই নেপালের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না ভারতের। সম্প্রতি তাদের দাবিকৃত তিনটি অঞ্চল অন্তর্ভুক্ত করে নতুন মানচিত্র প্রকাশ করেছে নেপাল, ভারত সীমান্তে সেনা টহলও বাড়িয়েছে তারা। এসব কিছুর পেছনেই চীনের মদদ রয়েছে বলে দাবি নয়া দিল্লির। ফলে নেপালে যা কিছুই ঘটছে তার সঙ্গে সাম্প্রতিক বৈরিতার যোগসূত্র টানার চেষ্টা করছে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো।
শনিবার বিদেশিদের নাগরিকত্ব প্রদান সংক্রান্ত আইনের একটি ধারায় পরিবর্তনের অনুমোদন দিয়েছে নেপাল। এদিন দেশটিতে ক্ষমতাসীন দল নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির কয়েকজন মন্ত্রী জরুরি বৈঠকে বসে এ সিদ্ধান্ত নেন।
নেপালি গণমাধ্যম কাঠমান্ডু পোস্ট জানিয়েছে, নেপালের নাগরিকত্ব আইনের ৫.১ ধারায় বলা আছে, কোনও বিদেশি নারী নেপালি পুরুষকে বিয়ে করার সঙ্গে সঙ্গেই দেশটির নাগরিকত্বের যোগ্য হবেন। তবে বিদেশি পুরুষ নেপালি নারীকে বিয়ে করলে অন্তত ১৫ বছর সে দেশে থাকার পর নাগরিকত্বের যোগ্য হতে পারেন।
নতুন নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে বলা হচ্ছে, কোনও বিদেশি নারী নেপালের কোনও পুরুষকে বিয়ে করার সঙ্গে সঙ্গে নয়, বরং সাত বছর পর দেশটির নাগরিকত্বের যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। তবে বিদেশি পুরুষ নেপালি নারীকে বিয়ে করলে কী হবে এদিন সে বিষয়ে কোনও আলোচনাই হয়নি।
অথচ নেপালের অভ্যন্তরীণ এ বিষয়টিকেই মাল-মসলা মাখিয়ে সম্পূর্ণ ভারত-বিরোধী সংবাদ আকারে প্রচার করছে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো। এর মধ্যে রয়েছে টাইমস নাউ, ইন্ডিয়া টুডে, কলকাতা২৪ প্রভৃতি। আর ভারতীয় এসব সংবাদমাধ্যমের সূত্র দিয়ে একই খবর প্রচার করেছে বাংলাদেশি কিছু গণমাধ্যমও।
নেপালের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাম বাহাদুর থাপার বরাতে এসব গণমাধ্যম দাবি করেছে, নেপাল নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করেছে শুধু ভারতীয়দের জন্য। ভারতেও নেপালিদের জন্য একই ধরনের আইন থাকায় তারা এমনটি করেছে বলে বোঝানো হয়েছে এসব খবরে।
ভারতীয় মিডিয়ার দাবি, সাম্প্রতিক উত্তেজনার কারণেই নেপাল ভারতকে চাপে ফেলতে নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করছে।
তবে কাঠমান্ডু পোস্ট জানিয়েছে,নাগরিকত্ব আইনের এই ধারাটি পরিবর্তনের আলোচনা চলছিল প্রায় দুই বছর ধরে। বিষয়টি এতদিন ধরে ঝুলে থাকায় নেপালের স্বরাষ্ট্র ও সুশাসন সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি গত বৃহস্পতিবার রাজনৈতিক দলগুলোকে পাঁচদিনের সময় বেঁধে দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতেই শনিবার বৈঠকে বসেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। তাদের নেয়া সিদ্ধান্তে সমর্থন জানিয়েছে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোও।
কেএএ/এমকেএইচ