উপসর্গবিহীনদের করোনা ছড়ানো নিয়ে অবস্থান পাল্টাল ডব্লিউএইচও
উপসর্গবিহীন রোগীদের মাধ্যমে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়ানোর ঘটনা 'খুবই বিরল' বলে মন্তব্য করেছিলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) শীর্ষ এক কর্মকর্তা। বেশ কয়েকটির দেশের তথ্যের ভিত্তিতে সংস্থাটি এমন দাবি করার একদিন পর নিজেদের অবস্থান বদল করে সংস্থাটির অপর এক কর্মকর্তা বলেছেন, এটি ভুল বোঝাবুঝি।
সোমবার অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির শীর্ষ কর্মকর্তা মারিয়া ভ্যান কারখোভ বলেছিলেন, কয়েকটি দেশের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের ভিত্তিতে দেখা গেছে- উপসর্গবিহীন করোনার বাহকদের মাধ্যমে এই ভাইরাসটির বিস্তার খুবই কম ঘটে।
তিনি বলেন, নিখুঁত কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং করছে এমন বেশ কিছু দেশের তথ্য-উপাত্ত আমাদের কাছে আছে। তারা উপসর্গবিহীন রোগীদের অনুসরণ করছে, তাদের কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং করছে। কিন্তু তাদের মাধ্যমে সংক্রমণ ঘটছে এমন প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। উপসর্গবিহীনদের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়ানোর ঘটনা খুবই বিরল।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তার এই মন্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহারকারীরা বিশেষ করে মেডিক্যাল সংশ্লিষ্টরা ব্যাপক সমালোচনা করেন। প্যারিসের পিটি-স্যালপেট্রায়ার হাসপাতালের অধ্যাপক গিলবার্ট ডিরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওই কর্মকর্তার মন্তব্যের সমালোচনা করে টুইটারে বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই ঘোষণা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়। এটি নিশ্চিত করে না যে, উপসর্গবিহীনদের মাধ্যমে সার্স-কোভ-২ সংক্রমণ ছড়ায় না।
লন্ডন স্কুল অব হায়জিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের ক্লিনিক্যাল মহামারি বিভাগের অধ্যাপক লিয়াম স্মিথ বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই সিদ্ধান্তে তিনি বেশ অবাক হয়েছেন। এটা নিয়ে এখনও বৈজ্ঞানিক অনিশ্চয়তা রয়েছে। তবে উপসর্গবিহীন সংক্রমণের হার বর্তমানে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ হতে পারে।
তিনি বলেন, বৈজ্ঞানিক গবেষণায় আজ পর্যন্ত যা বোঝা গেছে, তা হলো আক্রান্তদের অর্ধেকই উপসর্গবিহীন অথবা প্রাক-উপসর্গযুক্তদের মাধ্যমেই করোনা সংক্রমিত হয়েছেন।
মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে এসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তা মারিয়া ভ্যান কারখোভ তার আগের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, উপসর্গবিহীনদের মাধ্যমে করোনা ছড়ানোর ঘটনা খুবই বিরল বলে তিনি যে মন্তব্য করেছিলেন; সেটি কয়েকটি দেশের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে করেছিলেন। তার এই মন্তব্য পিয়ার রিভিউ হয়নি; যে কারণে এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার করোনা সম্পর্কিত নির্দেশিকায় কোনও পরিবর্তন আনবে না বলে জানান তিনি।
আগের অবস্থান থেকে সরে এসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই কর্মকর্তা বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রায় ১৬ শতাংশ রোগীর উপসর্গ প্রকাশ পায় না। উপসর্গ প্রকাশ না পেলেও এই রোগীদের মাধ্যমে ভাইরাসটি অন্যদের মাঝে বিস্তার ঘটতে পারে। উপসর্গবিহীন রোগীদের ৪০ শতাংশই ভাইরাসটি ছড়িয়ে দিতে পারে।
সূত্র: এএফপি, সিএনবিসি।
এসআইএস/জেআইএম