দিল্লিতে করোনা আক্রান্ত সাড়ে ৫ লাখ ছাড়ানোর শঙ্কা
ভারতে করোনার সংক্রমণ হু হু করে বাড়ছে। এরইমধ্যে আরও আতঙ্কের খবর দিল দিল্লি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বা ডিডিএমএ। সংস্থাটি বলেছে, ভারতের রাজধানী অঞ্চল দিল্লিতে আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে প্রায় ৫ লাখ ৫০ হাজার মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হতে পারে।
মঙ্গলবার ভারতে আরও প্রায় দশ হাজার করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। দিল্লিতে করোনার সংক্রমণ বেড়েছে দ্বিগুণ। আর এরই মধ্যে দিল্লির অরবিন্দ কেজরিওয়াল সরকারের সহকারী মুখ্যমন্ত্রী মনীষ সিসোদিয়ার সঙ্গে বৈঠকের পর দিল্লি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের এমন সতর্কবার্তা।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে (ডিডিএমএ) মঙ্গলবারের ওই বৈঠকের পর রাজ্য সরকারের সহকারী মুখ্যমন্ত্রী মনীষ সিসোদিয়া বলেছেন, ‘আগামী ৩১ জুলাই এর মধ্যে আরও সাড়ে ৫ লাখ মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। তাই আমাদের হাসপাতালগুলোতে অতিরিক্ত আরও ৮০ হাজার বেড প্রয়োজন।’
কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে দিল্লিতে বৈঠকে বসে রাজ্য সরকার ও দিল্লি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। দিল্লি সরকারের দেওয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ১৫ জুনের মধ্যে আক্রান্ত বেড়ে হবে ৪৪ হাজার। সেখান থেকে ১ লাখে পৌঁছাবে ৩০ জুন। আর ১৫ জুলাই সেই সংখ্যাটা হবে ২ লাখ ২৫ হাজার।
মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত পাওয়া হিসাবে গোটা ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ৬৬ হাজারের বেশি। এরমধ্যে দিল্লিতে তা ২৯ হাজার ৯৪৩ জন। এখন পর্যন্ত ভারতের এই রাজধানী অঞ্চলে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৮৭৪ জন মারা গেছেন। শীর্ষ আক্রান্ত রাজ্য হিসেবে দিল্লির অবস্থান তৃতীয়।
করোনা যখন চীন, ইউরোপ হয়ে আমেরিকা পর্যন্ত মারাত্মকভাবে বিস্তার ছড়াচ্ছিল তখন ভারতে সংক্রমণ অতটা ছিল না। কিন্তু সাম্প্রতিক দিনগুলোতে এই দেশটিতে ভাইরাসটির সংক্রমণ এতটাই বাড়তে শুরু করেছে যে সাবধান না হলে হয়তো আগামী দিনগুলোতে তা আরও ভয়ংকর হয়ে উঠবে।
প্রতিদিনই দেশটিতে প্রায় দশ হাজার মানুষ করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হচ্ছেন। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া সবশেষ হিসাব অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে আরও ৯ হাজার ৯৮৭ জন শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত বেড়ে হলো ২ লাখ ৬৬ হাজার ৫৯৮ জন।
করোনার প্রকোপ পরে শুরু হলেও ভারত ক্রমাগতই আক্রান্তে শীর্ষে থাকা দেশগুলোকে টপকে যাচ্ছে। আক্রান্ত শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে ভারতের অবস্থান এখন পঞ্চম। অথচ কয়েকদিন আগেই ছিল ২০ নম্বরে। শুধু ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যে যতজন মানুষ আক্রান্ত হয়েছে উৎপত্তিস্থল চীনেও তা হয়নি।
ভারতে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১ লাখ হতে সময় নিয়েছিল ১১০ দিন। পরবর্তী ১ লাখ সংক্রমিত হয় মাত্র ১৫ দিনে। কিন্তু রোগ ছড়ানোর এখন যা গতি, তাতে মনে হচ্ছে এই সংখ্যিাটা ২ থেকে ৩ লাখে পৌঁছাতে মোটে সপ্তাহখানের লাগতে পারে। দ্রুতগামী সংক্রমণ সরকারের দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া সবশেষ হিসাব অনুযায়ী, ভারতে করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্তদের ২ লাখ ৬৬ হাজার ৫৮৯ জনের মধ্যে ৭ হাজার ৪৬৬ জন মারা গেছে। তবে আক্রান্তদের ১ লাখ ২৯ হাজারের বেশি সুস্থ। এছাড়া হাসপাতাল কিংবা বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১ লাখ ৩০ হাজার সক্রিয় রোগী।
সাবধান না হলে সামনে আরও তা ভয়ংকর হয়ে উঠবে বলে মন্তব্য করেছেন দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেসের (এইমস) মহাপরিচালক ডা. রণদীপ গুলেরিয়া। তিনি বলেছেন, আগামী ২–৩ মাস খুবই কঠিন সময়। কঠোর ব্যবস্থা না নিলে এই সংক্রমণ শীর্ষে পৌঁছাতে পারে।
এসএ