বাসায় ওজুর পর জায়নামাজ নিয়ে আসতে হবে: দিল্লির জামা মসজিদ
দীর্ঘ আড়াই মাসেরও বেশি সময় পর সোমবার থেকে ভারতে ধর্মীয় উপাসনালয়, হোটেল, শপিংমল ও রেস্তোরাঁ খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এই প্রক্রিয়াকে ‘আনলক ১.০’-এর অংশ হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে। তবে মন্দির-মসজিদে প্রার্থনা কিংবা শপিংমলে কেনাকাটায় চালু হয়েছে নতুন বিধিনিষেধ।
ভারতে লকডাউন শিথিলের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলো এমন একটা সময় যখন প্রতিদিন দেশটিতে প্রায় দশ হাজার করে নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে এবং পরিস্থিতি ক্রমেই আরও সংকটাপন্ন হচ্ছে। তবে অনেকে বলছেন, অর্থনীতির চাকা ফের সচল করতে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া কোনও উপায় নেই।
নতুন নিয়মে জামা মসজিদ ও তিরুপাতি মন্দির
রাজধানী দিল্লির সুপ্রাচীন জামা মসজিদের দরজা আজ থেকে আবার মুসল্লিদের জন্য উন্মুক্ত হয়েছে। তবে নামাজের জন্য নতুন নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে সেখানে। মসজিদের শাহী ইমাম আহমেদ বুখারির কথায়, ‘সরকারের নির্দেশিকায় যা বলা হয়েছে আমরা এখানে তার চেয়েও বেশি সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন ‘দিল্লিতে এখন যেভাবে করোনা ছড়াচ্ছে, তাতে প্রবল আতঙ্ক তো আছেই। তবু সরকার যখন উপাসনালয় খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেই অনুযায়ী আমরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছি, বয়স্ক ও বৃদ্ধদের আসতে নিষেধ করছি।’
মসজিদ থেকে কার্পেট সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, ওজু বাড়ি থেকেই করে আসতে হবে এবং প্রত্যেককে নিজস্ব জায়নামাজ ও স্যানিটাইজারও আনতে বলা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জামা মসজিদের আহমেদ বুখারি।
করোনাভাইরাস ঠেকানোর লকডাউনে গত আড়াই মাস ধরে বন্ধ ছিল অন্ধ্রপ্রদেশের তিরুপতি মন্দিরও। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি লোকসমাগম হয় এই হিন্দু মন্দিরে। দেশের সবচেয়ে ধনী মন্দিরটির ট্রাস্ট আজ থেকে দর্শনার্থীদের জন্য মন্দিরের দরজা খুলে দিয়েছে, তবে প্রথম দুদিন শুধু স্থানীয় ভক্তরাই দর্শনের সুযোগ পাবেন।
তিরুপতি দেবস্থানম ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ওয়াই ভি সুব্বা রেড্ডি বলেন, ৬৫ বছরের বেশি বয়সী আর দশ বছরের কম বয়সীদের মন্দিরে আসার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। দর্শনার্থীদের বলছি, আপনারা অনলাইনে আগে বুক করুন ও তারপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সব নির্দেশিকা মেনেই এখানে আসুন।
তিনি আর বলেন, ‘মাস্ক পরা ও দূরত্ব বজায় রাখা বাধ্যতামূলক, দর্শনের লাইনেও কাউকে বা কোনও কিছু ছোঁয়া চলবে না।’
শপিংমল খুললেও ভিড় নেই এখনও
শুধু ধর্মীয় উপাসনালয় নয়, ভারতে আজ থেকে খুলেছে অনেক বন্ধ শপিংমলের তালাও। ডিএলএফ শপিংমলের শীর্ষ কর্মকর্তা পুষ্পা বেক্টর বলেন, গুরগ্রাম জেলা প্রশাসন তাদের মলের ভেতর বেশ কয়েকটি ‘স্ট্যান্ডঅ্যালোন স্টোর’ খোলার এবং খাবারের দোকানগুলোর ডেলিভারি ও টেকঅ্যাওয়ের অনুমতি দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আরও মল খুলে যাবে, ইতিমধ্যে স্যানিটাইজেশন চলছে পুরোদমে এবং আমরাও সম্পূর্ণ প্রস্তুত জানান তিনি।
এছাড়া রেস্তোরাঁগুলোকেও তাদের ধারণক্ষমতার অর্ধেক আসন নিয়ে খুলতে বলা হয়েছে। তবে আজ প্রথম দিনে শপিংমল বা রেস্তোরাঁয় ‘ফুটফল’ ছিল না বললেই চলে।
ধর্মীয় স্থাপনাগুলোতে অবশ্য ভক্তদের ভিড় ছিল। মধ্য দিল্লির ঝান্ডেওয়ালা মন্দিরে আসা ললিতা দেবী যেমন সেই ফেব্রুয়ারির পর আজ তিন মাস বাদে সেখানে এসেছিলেন। তিনি এ ব্যাপারেও নিশ্চিত যে ‘সবাই সরকারের গাইডলাইনস মেনে চললে কোনও অসুবিধা হবে না, ভক্তরাও মাতারানির কৃপা পাবেন।’
সূত্র: বিবিসি
এসএ