হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ঝুঁকিপূর্ণ বলা গবেষণা প্রতিবেদন প্রত্যাহার
করোনার চিকিৎসায় হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন প্রয়োগে রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে দাবি করে ল্যানসেট জার্নালে প্রকাশিত বিতর্কিত গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন এর লেখকরা। গবেষণায় ব্যবহৃত তথ্যের সত্যতা উপস্থাপনে ব্যর্থ হওয়ায় তারা প্রতিবেদনটি প্রত্যাহার করেছেন বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো।
ল্যানসেট জার্নালের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ম্যাক্রোলাইড-সহ বা বিহীন হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন বা ক্লোরোকুইন: একটি বহুজাতিক নথি বিশ্লেষণ’ নামে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন এর তিন লেখক।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, লেখকরা তাদের তথ্যের বিষয়ে স্বাধীন নিরীক্ষণ সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয়েছেন এবং তারা জানিয়েছেন, তথ্যের উৎসের সত্যতার পক্ষে কোনও প্রমাণ দিতে পারছেন না।
গত ২২ মে ল্যানসেটে প্রকাশিত হয়েছিল এ প্রতিবেদনটি। এতে দাবি করা হয়, বিশ্বের ছয়টি উপমহাদেশে হাসপাতালে ভর্তি ৯৬ হাজার করোনা রোগীকে পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন প্রয়োগে তাদের মধ্যে মৃত্যুর হার এবং হৃদযন্ত্রের সমস্যা বেড়ে গেছে। সেই মতে গবেষকরা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন, হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহারে করোনা রোগীদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কমে যায় এবং হৃদস্পন্দনে ব্যাঘাত ঘটে।
এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর করোনার চিকিৎসায় হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের সবধরনের ট্রায়াল নিষিদ্ধ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এরপর ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে এর ব্যবহার বন্ধ করে দেয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্র স্বল্প পরিসরে ট্রায়াল বাদে করোনার চিকিৎসায় ম্যালেরিয়ার এ ওষুধটির ব্যবহার বন্ধ করে দেয়।
এ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে এবং ওই গবেষণা প্রতিবেদনের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে গত মঙ্গলবার ল্যানসেট সম্পাদক বরাবর খোলা চিঠি দেন বিশ্বের শতাধিক বিজ্ঞানী। এতে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের ট্রায়াল জরুরি ভিত্তিতে আবারও শুরু করা দরকার বলে জানান তারা।
এর পরের দিনই হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের ট্রায়াল ফের শুরুর অনুমতি দেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থাটির প্রধান তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস জানান, তাদের বিশেষজ্ঞ দল হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহারের তথ্য পর্যবেক্ষণ করছিল। এজন্যই এতদিন এর ব্যবহার বন্ধ রাখতে বলা হয়েছিল। তাদের সবশেষ প্রতিবেদনে ট্রায়াল বন্ধ রাখার কোনও কারণ পাওয়া যায়নি। একারণেই এর ট্রায়াল চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে।
এদিকে, বিতর্কিত প্রতিবেদন প্রত্যাহারের বিষয়ে ভারতের সিএসআইআর-ইনস্টিটিউট অব জিনোমিক্স এবং ইন্টিগ্রেটিভ বায়োলজির গবেষক অনুরাগ আগারওয়াল বলেন, ‘এর অর্থ এটা না যে করোনার চিকিৎসায় হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন বা ক্লোরোকুইন কাজ করছে। এতে শুধু প্রমাণিত হলো যে, এটি প্রয়োগে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে এমন কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এখন আরও জানতে আমরা আবারও এর ট্রায়াল শুরু করতে পারি।’
সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট, আউটলুক ইন্ডিয়া
কেএএ/পিআর