করোনার চিকিৎসায় হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন নিষিদ্ধ করল ইউরোপীয় দেশগুলো
করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনকে যারা এতদিন মোক্ষম অস্ত্র ভাবছিলেন, তাদের সেই আশা অনেকটাই মিলিয়ে যেতে বসেছে। করোনার চিকিৎসায় ম্যালেরিয়ার এই ওষুধটি মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে প্রমাণিত হওয়ায় আপাতত এর ব্যবহার বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সেই মতে, এবার কোভিড-১৯ রোগীদের ওপর হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন প্রয়োগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ফ্রান্স, ইতালি ও বেলজিয়াম।
বুধবার যুক্তরাজ্যের এক আইনপ্রণেতা জানিয়েছেন, বৈশ্বিক উদ্বেগের কারণে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের একটি ট্রায়াল বন্ধ করে দিয়েছে দেশটি। মাত্র সপ্তাহখানেক আগেই এই ট্রায়াল শুরু করেছিল ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ড। এতে অন্তত ৪০ হাজার স্বাস্থ্যসেবা কর্মীকে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা ছিল। অক্সফোর্ডের এই ট্রায়ালে আংশিক অর্থায়ন করেছে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন।
এর আগে, প্রাথমিক প্রতিবেদনগুলোতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসায় হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ইতিবাচক ফল দিতে পারে জানানোর পর বেশ কয়েকটি দেশ এটি ব্যবহারের অনুমতি দেয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেও এটি সেবন করেছেন বলে জানিয়েছিলেন। হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনকে করোনাযুদ্ধের ‘গেমচেঞ্জার’ বলেও অভিহিত করেছিলেন তিনি।
তবে সাম্প্রতিক গবেষণাগুলোতে ওষুধটি করোনা রোগীদের মৃত্যুহার বৃদ্ধি, শরীরে হৃদযন্ত্রের গুরুতর সমস্যাসহ নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে বলে প্রমাণিত হয়েছে। বুধবারই ফ্রান্সের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহারের অনুমতি বাতিল করেছে।
ফ্রান্স ও ইতালির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের বাইরে করোনার চিকিৎসায় হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহার উচিত হবে না। বেলজিয়ামের নীতি নির্ধারকরা বলেছেন, ওষুধটির কার্যকারিতা মূল্যায়নে ট্রায়ালের সময় এর ঝুঁকির বিষয়টিও বিবেচনায় নেয়া উচিত।
জার্মানির এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, তারা ল্যানসেটের প্রতিবেদন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সিদ্ধান্তের ওপর নজর রেখেছেন। তবে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহার বন্ধের বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি দেশটি।
তবে ঝুঁকির সতর্কতা সত্ত্বেও এখনও বেশ কিছু দেশে করোনা রোগীদের ওপর চলছে এর ব্যবহার। যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) হাসপাতালগুলোতে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ‘জরুরি ক্ষেত্রে ব্যবহার’-এর অনুমতি দিয়েছে। তবে হৃদযন্ত্রের ঝুঁকি তৈরি হওয়ায় ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ছাড়া করোনার চিকিৎসায় এর ব্যবহারের বিষয়ে সতর্ক করেছে তারা।
বিশ্বে করোনাভাইরাস সংক্রমণের নতুন কেন্দ্র লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। গুরুতর অবস্থায় চিকিৎসাধীন করোনা রোগীসহ সামান্য উপসর্গধারীদের ওপরও এটি প্রয়োগের অনুমতি দিয়েছে তারা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কতা সত্ত্বেও স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের জন্য প্রতিরোধী ওষুধ হিসেবে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের ব্যবহার বাড়িয়েছে ভারত।
এছাড়া, বেশ কিছু জায়গায় এখনও এই ওষুধ নিয়ে গবেষণা চলছে। যুক্তরাষ্ট্রে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের পরীক্ষা চালাচ্ছে সুইস ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান নোভারটিস। এছাড়া যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ড ও থাইল্যান্ডের মাহিদল অক্সফোর্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন রিসার্চ ইউনিট করোনার চিকিৎসায় হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের কার্যকারিতা নিযে পরীক্ষা চালাচ্ছে।
আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়াও একই ধরনের ওষুধ ক্লোরোকুইনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
সূত্র: রয়টার্স, বিবিসি
কেএএ/জেআইএম