ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

অক্সফোর্ডের টিকার ফল জুনে, গণ-উৎপাদনে যেতে চায় অ্যাস্ট্রাজিনিকা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৪:৫০ পিএম, ৩০ এপ্রিল ২০২০

ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের তৈরিকৃত করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য ভ্যাকসিনটির ব্যাপক উৎপাদনে যেতে রাজি হয়েছে বিশ্বের শীর্ষ ফার্মাসিউটিক্যালস জায়ান্ট কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজিনিকা। ভ্যাকসিনটির ব্যাপক উৎপাদনের জন্য অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছেছে ব্রিটেন ও সুইডেনভিত্তিক ওষুধ প্রস্তুতকারক এই কোম্পানি।

বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ দৈনিক ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। গত সপ্তাহে অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীদের তৈরি চ্যাডক্স১ এনকোভ-১৯ নামের ভ্যাকসিনটি মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হয়। এই পরীক্ষার ফল আগামী জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ের দিকে আসার কথা রয়েছে।

অক্সফোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রাণঘাতী ভাইরাস থেকে সুরক্ষা দেয়ার বিষয়টি যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে চুক্তি অনুযায়ী- যুক্তরাজ্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভ্যাকসিনটি পাবে। ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক এই চুক্তিকে বিশাল শুভ সংবাদ হিসেবে মন্তব্য করেছেন। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এই চুক্তির বিস্তারিত বিষয় চূড়ান্ত হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

পরীক্ষার ফল জুনে আসার পরপরই ভ্যাকসিনটি ব্যাপক পরিসরে উৎপাদনে যাওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে অ্যাস্ট্রাজিনিকা। অক্সফোর্ড এবং অ্যাস্ট্রাজিনিকা বলছে, এই উদ্যোগটি মুনাফা লাভের জন্য নয়। এর মাধ্যমে শুধুমাত্র উৎপাদন এবং বিতরণের ব্যয় বিনিময় হবে।

যেকোনো রোগ প্রতিরোধের জন্য নতুন একটি ভ্যাকসিন তৈরি করতে অনেক সময় এক বছর থেকে এক দশক পর্যন্ত সময় লেগে যায়। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, মাত্র ১৮ মাসের মধ্যে কার্যকর একটি ভ্যাকসিন তৈরি হবে নজিরবিহীন কাজ।

করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির জন্য বর্তমানে বিশ্বের প্রায় একশ প্রকল্প চলমান। বিভিন্ন বায়োটেক কোম্পানি এবং গবেষকরা করোনার ভ্যাকসিন তৈরির কাজ করে চলছেন। এর মধ্যে প্রায় পাঁচটি ইতোমধ্যে মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগও করা হয়েছে।

চ্যাডক্স১ এনকোভ-১৯ ভ্যাকসিনটি তৈরির সঙ্গে জড়িত লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজের বিজ্ঞানীরা আগামী গ্রীষ্মে ভ্যাকসিনটির আরেকটি পরীক্ষা চালানোর পরিকল্পনা করেছে; যা হালকা ভিন্নভাবে কাজ করতে পারে।

বিবিসি রেডিও ফোরের ট্যুডে অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে অক্সফোর্ডের অধ্যাপক স্যার জন বেল বলেন, তিনি আশা করছেন ভ্যাকসিনটি মানবদেহে প্রয়োগের ফল আগামী জুনের মাঝামাঝি সময়ের দিকে পাওয়া যাবে। তবে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ভ্যাকসিনটির অনুমোদন দেয়ার পর এর উৎপাদন মাত্রা নির্ধারণ করাই হবে চ্যালেঞ্জিং।

শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যাজনিত নতুন করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট রোগ কোভিড-১৯ এখন পর্যন্ত বিশ্বের ৩২ লাখের বেশি মানুষের দেহে সংক্রমণ ঘটিয়েছে। এছাড়া প্রাণ কেড়েছে ২ লাখ ২৮ হাজারের বেশি।

প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক এবং ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হওয়ায় বিশ্বজুড়েই প্রতিনিয়ত লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ এবং মৃতের সংখ্যা। অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীদের তৈরিকৃত এই ভ্যাকসিনটি কার্যকর হতে পারে বলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা আশাপ্রকাশ করেছেন।

ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী বিশ্বের সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠান ভারতের দ্য সিরাম ইনস্টিটিউট বলছে, ব্রিটেনে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে থাকা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের তৈরিকৃত করোনার সম্ভাব্য ভ্যাকসিনটি তারা আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যেই বাজারে আনতে চান।

নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলের মনটানা প্রদেশের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের রকি মাউন্টেন ল্যাবরেটরিতে ওল্ড ওয়ার্ল্ড প্রজাতির ছয়টি বানরের দেহে অক্সফোর্ডের তৈরি ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ করা হয়। পরে এই ছয়টি বানরের শরীরে ব্যাপক পরিমাণে নভেল করোনাভাইরাস প্রবেশ করানো হয়। এর ২৮ দিন পরও বানরগুলো একেবারে সুস্থ ছিল।

বানরের দেহে কার্যকর হওয়ায় ভ্যাকসিনটি মানবদেহে কার্যকর হতে পারে বিবেচনা করে দ্য সিরাম ইনস্টিটিউট ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর পুনের দুটি প্ল্যান্টে ভ্যাকসিনটি উৎপাদনের পরিকল্পনা করছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের মধ্যে ৪০ কোটি ডোজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সিরাম।

এসআইএস/পিআর