করোনায় মাত্র ২ সপ্তাহেই প্রাণ গেল ১ লাখ মানুষের!
করোনাভাইরাসে ইউরোপের দেশ ইতালি এবং স্পেনে মৃত্যুর মিছিল কিছুটা কমলেও সারা বিশ্বে কিন্তু সেই মিছিল থেমে নেই। আগের মতই অব্যাহত রয়েছে। কারণ, গত এক সপ্তাহেও প্রাণ গেল ৫০ হাজার মানুষের। শেষ দুই সপ্তাহে মোট ১ লাখ মানুষের প্রাণ কেড়েছে মহামারি এ ভাইরাসটি।
সব মিলিয়ে বিশ্বব্যাপি করোনাভাইরাসের কারণে এখনও পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়ে গেল ২ লাখ। মোট আক্রান্তের সংখ্যাও ২৯ লাখ ছুঁই ছুঁই (২৯ লাখ ৯১ হাজার ৬৯ জন)। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ২৪ হাজার ৯০৪ জন।
চীনের উহান থেকে গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি প্রথম শনাক্ত হয় করোনাভাইরাস। এরপর গত প্রায় চার মাসে করোনা ছড়িয়েছে পৃথিবীর ২১০টি দেশ এবং অঞ্চলে। মৃত্যুর মিছিলে যোগ দিয়েছে ২ লাখ মানুষ।
এরই মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এরপর রয়েছে ইউরোপ। এশিয়ায় চীনের পর সবচেয়ে বেশি করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়েছে ইরান। সাম্প্রতিক সময়ে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করে ক্লান্ত তুরস্ক। তারাও ইউরোপ, ইরান, চীনের মত করোনায় বিধ্বস্ত। জাপান, সিঙ্গাপুর এবং মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোও আক্রান্ত করোনাভাইরাসে।
করোনাভাইরাস বিশেষ করে মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকেই বিধ্বংসী রূপ ধারণ করে ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। মৃত্যুর হার তখন থেকেই বাড়তে শুরু করে। যার ধারাবাহিকতায় শেষ দুই সপ্তাহেই মৃত্যুবরণ করেছে ১ লাখ মানুষ। আর হিসেবটা আরেকটা বাড়ালে, শেষ তিন সপ্তাহে মৃত্যু হয়েছে দেড় লাখ মানুষের। অর্থ্যাৎ, প্রতি সপ্তাহেই এখন কম করে ৫০ হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। অন্তত গত তিন সপ্তাহে এই ধারাবাহিকতাই দেখা যাচ্ছে।
১১ এপ্রিল লেখা হয়েছিল করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১ লাখ। তার আগে ৩ এপ্রিল লিখতে হয়েছিল করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৫০ হাজার মানুষের। ১১ এপ্রিল গিয়ে সেটা হয়ে যায় দ্বিগুন। এর এক সপ্তাহ পর ১৭ এপ্রিল লিখতে হয়েছে, মৃতের সংখ্যা বেড়ে দেড় লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এর আরও এক সপ্তাহ পর লিখতে হচ্ছে, মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়াল ২ লাখ।
মৃত্যুর এই পরিসংখ্যানই জানান দিচ্ছে করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি দিনের পর দিন কতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এখন প্রতিদিনই কমপক্ষে ৫ হাজার মানুষে মৃত্যু হচ্ছে।
সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ২১০টি দেশ ও অঞ্চলে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। গত ১৩ মার্চ জাগো নিউজেই সংবাদ প্রচার হয়েছিল মৃত্যু ৫ হাজার ছাড়ালো। ২২ মার্চ মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১৩ হাজার। ২৩ মার্চ লেখা হলো মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১৬ হাজার।
জ্যামিতিক হারে এরপর কীভাবে মৃত্যু বেড়েছে, সেটা লক্ষ্য করলেই শিউরে উঠতে বাধ্য যে কেউ। ৩ এপ্রিল রাতেই মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় ৫০ হাজার। ৪ এপ্রিল মৃত্যু ৬০ হাজার ছাড়ায়। এরপর ৭ এপ্রিল লেখা হলো মৃত্যুর সেই সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৭৫ হাজার। পরদিনই লিখতে হয়েছিল মৃত্যু ছাড়িয়ে গেছে ৮১ হাজার।
শেষ পর্যন্ত ১১ এপ্রিল রাতে সংখ্যাটা ছাড়িয়ে যায় ১ লাখ। ধারাবাহিকতা বজায় থাকলো পরের দুই সপ্তাহেও। এখন সে সংখ্যা ২ লাখ পার। আগামী এক সপ্তাহ পর কি লিখতে হবে, আল্লাহই জানেন। কিন্তু পরিস্থিতি তো খারাপের দিকেই যাচ্ছে। কোথাও কোনো আশার আলো দেখা যাচ্ছে না।
এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রেই সবচেয়ে বেশি করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। দেশটিতে করোনা আক্রান্ত ১০ লাখ ছুঁই ছুঁই (৯ লাখ ৪৫ হাজার ২৪৯জন)। মৃত্যু ৫৩ হাজার ২৪৩ জন। মৃতের সংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইতালি। দেশটিতে আক্রান্ত ১ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫১ জন। মৃত্যু হয়েছে ২৬ হাজার ৩৮৪ জনের।
মৃতের দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে স্পেন। ২ লাখ ২৩ হাজার ৭৫৯ জন আক্রান্ত। মৃত্যু হয়েছে ২২ হাজার ৯০২ জনের। ফ্রান্সে মৃত্যু হয়েছে ২২ হাজার ৬১৪ জনের। আক্রান্ত ১ লাখ ৬১ হাজার ৪৮৮। জার্মানিতে আক্রান্ত বেশি, মৃত্যু কম। দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৫৫ হাজার ৪১৮। মৃত্যু হয়েছে ৫ হাজার ৮০৫ জনের।
যুক্তরাজ্যেও মৃত্যুর মিছিল অব্যাহত রয়েছে। দেশটিতে মোট মৃতের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে গেল (২০ হাজার, ৩১৯ জন)। তুরস্কে আক্রান্ত ১ লাখ ৭ হাজার ৭৭৩ জন। মৃত্যু হয়েছে ২৭০৬ জন। ইরানে আক্রান্ত ৮৯ হাজার ৩২৮। মৃত্যু হয়েছে ৫ হাজার ৬৫০ জনের। বেলজিয়ামে মৃত্যু ৬ হাজার ৯১৭। নেদারল্যান্ডসে মৃত্যু হয়েছে ৪৪০৯ জনের। ব্রাজিলে মৃত্যু ৩৭৬২ জনের।
এখন পর্যন্ত আক্রান্ত ২৮ লাখ প্রায় ৯০ হাজার জনের মধ্যে এখনও আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে কিংবা হোম আইসোলেশনে রয়েছেন ১৮ লাখ ৬৪ হাজার ৬৬৪ ব্যক্তি। এদের মধ্যে ৫৮ হাজার ১৩৩ জন (৩ ভাগ) খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। বাকি ১৮ লাখ ৬ হাজার ৫৩১ জন এখনও ঝুঁকিমুক্ত।
আইএইচএস/