করোনা নিয়ে ট্রাম্প-নিউইয়র্ক গভর্নরের স্নায়ুযুদ্ধ
করোনাভাইরাস নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং নিউইয়র্কের গভর্ণর অ্যান্ড্রু কুমোর মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধাবস্থা তৈরি হয়েছে। নিউইয়র্কের গভর্ণর কুমো এরই মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট সিজোফ্রেনিয়ায় (এক ধরনের মানসিক রোগ) আক্রান্ত বলে অভিহিত করেছেন। জবাবে ট্রাম্প ঘোষণা দিলেন, কেউ তার মতের বিরোধী হলেই তাকে ‘বিদ্রোহী’ আখ্যা দেয়া হবে এবং সংশ্লিষ্ট অঙ্গরাজ্যে করোনার কারণে দেয়া সহযোগিতাও প্রত্যাহার করে নেয়া হতে পারে।
স্নায়ুযুদ্ধের এমন পরিস্থিতিতে নিউইয়র্কের গভর্ণর অ্যান্ড্রু কুমো পরিস্কার বলে দিয়েছেন, ট্রাম্প যে ক্ষমতাচর্চা করছেন, তাতে মনে হচ্ছে তিনি যেন একজন ‘কিং’। তার এই ক্ষমতাচর্চার কারণে দেশে সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হতে পারে। শুধু তাই নয়, কুমোসহ বেশ কিছু অঙ্গরাজ্যের গভর্ণর ট্রাম্পকে আদালাতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোরও হুমকি দিয়েছেন।
করোনাভাইরাসে এরই মধ্যে ইতালি-স্পেনকে ছাড়িয়ে অনেক বেশি বিপর্যস্ত এখন পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এরই মধ্যে এককভাবেই যুক্তরাষ্ট্রে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ৬ লাখ। মৃত্যু হয়েছে ২৫ হাজারের বেশি মানুষের। এখনও প্রতিদিন দেড় হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু দেখছে যুক্তরাষ্ট্র।
করোনার কারণে স্মরণাতীতকালের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ২৩ মার্চ থেকে পুরো যুক্তরাষ্ট্র লকডাউন। কারণ, দেশটির ৫০ অঙ্গরাজ্যের প্রতিটিতেই করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। এ অবস্থায়, করোনা থেকে বাঁচতে হলে ঘরে থাকার কোনো বিকল্প নেই। যে কারণে, গত চার সপ্তাহে আমেরিকায় কর্মহীন হয়ে পড়া তথা বেকারত্বের হার বেড়েছে ৩ হাজার গুন।
এ অবস্থায় অর্থনীতি বাঁচাতে ঝুঁকি নিয়ে হলেও দেশকে লকডাউন থেকে মুক্তি দিতে চান ট্রাম্প। এ কারণে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে রি-ওপেন করে দেয়ার। কিন্তু ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করে বসেছে অ্যান্ড্রু কুমোসহ বেশ কয়েকজন গভর্ণর।
তাদের এ বিরোধীতার পরই ক্ষেপে যান ট্রাম্প। তিনি সরাসরি ঘোষণা দিয়ে দেন, ‘প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুরো দেশ থেকে লকডাউন তুলে নিয়ে রি-ওপেন করার সর্বময় ক্ষমতা আমার রয়েছে। যদি কেউ এই সর্বময় ক্ষমতার বিরোধীতা করে তাহলে সে হবে বিদ্রোহী। আর বিদ্রোহী এলাকা থেকে করোনার কারণে দেয়া সহযোগিতাও প্রত্যাহার করা হতে পারে।’
ট্রাম্পের এ ঘোষণার পরই তার সঙ্গে এক ধরনের স্নায়ুযুদ্ধে জড়িয়ে যান নিউইয়র্কের গভর্ণর অ্যান্ড্রু কুমো। সরাসরি তাকে এক ধরনের মানসিক রোগি (সিজোফ্রেনিয়া) হিসেবে আখ্যায়িত করেন। অ্যান্ড্রু কুমোর সঙ্গে ট্রাম্পের ভাষায় ‘বিদ্রোহে’ যোগ দিয়েছেন আরও আটজন গভর্ণর।
কুমোর বিদ্রোহ করার সবচেয়ে বড় কারণ, নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি করোনা আক্রান্ত অঞ্চল। এই অঙ্গরাজ্যে এখনও পর্যন্ত ২ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যুবরণ করেছেন ১০ হাজারের বেশি মানুষ। প্রতিদিন এত বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে যে, কুমো আশঙ্কা করছেন, লকডাউন তুলে নেয়ার ফলে মানুষ যদি ‘সামাজিক দুরত্ব’ বজায় না রাখে, তাহলে করোনাভাইরাস আরও ভয়ঙ্কর আকারে ছড়িয়ে পড়বে।
অ্যান্ড্রু কুমোর ওই বক্তবের পরই ট্রাম্প টুইট করে বলেন, ‘এই ডেমোক্র্যাট গভর্ণরকে বলে দাও, ‘মিউটিনি অন দ্য বাউন্টি’ হচ্ছে আমার সব সময়ের জন্য সবচেয়ে প্রিয় সিনেমা। একজন কেতাদুরস্থ বিদ্রোহীকে খুব আকর্ষণীয় এবং স্বাস্থ্যবান হিসেবে দেখতেই খুব ভালো লাগে। তবে তখন, যখন সেই বিদ্রোহী তার নেতার কাছ থেকে অনেক বেশি চায়। এটা যেন খুবই স্বাভাবিক।’
তবে অ্যান্ড্রু কুমো হয়তো সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পেরেছেন ‘পাগলাটে’ ট্রাম্পের সঙ্গে লড়াই করে লাভ নেই। এ কারণে, যুদ্ধে কিছুটা ব্যাকফুটে এসে তিনি জানিয়ে দিলেন, ট্রাম্পের সঙ্গে লড়াই করার ইচ্ছা নেই। ট্রাম্পের কাছ থেকে বিদ্রোহী তকমা পেয়ে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে মঙ্গলবার কুমো বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট স্পষ্টতই লড়াই করার জন্য যেন আহ্বান করছেন। কখনও কখনও লড়াইয়ে যুক্ত হওয়া থেকে দূরে সরে যাওয়ার শক্তি থাকতে হয়। আমি আশা করবো প্রেসিডেন্ট আমার সঙ্গে লড়াই করতে আসবেন না। আমিও এর সঙ্গে যুক্ত হবো না।’
ব্রিফিংয়ে অ্যান্ড্রু কুমো ট্রাম্পের সমালোচনা করে বলেন, ‘ট্রাম্প কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারের ক্ষমতার মধ্যে যে ভারসাম্য সেটা নষ্ট করে দিচ্ছেন।’
জবাবে ট্রাম্প টুইটারে বলেন, ‘কুমো তো প্রতিদিনই কথা বলছে, এমনকি প্রতি ঘণ্টায়ও। প্রায় সব কিছুই ভিক্ষা চাচ্ছে। যদিও এগুলোর অধিকাংশই হচ্ছে তার রাজ্য সরকারের দায়িত্ব। যেমন নতুন হাসপাতাল, বেড, ভেন্টিলেটরস- ইত্যাদি। অথচ, আমিই তাকে সবগুলো ব্যবস্থা করে দিয়েছি এবং অন্য সবার জন্যই। এখন দেখা যাচ্ছে, সে (কুমো) স্বাধীনতা ঘোষণা করে বসেছে। এটা আসলেই কখনো সম্ভব নয়।’
ট্রাম্প এবং অ্যান্ড্রু কুমোর মধ্যে এই স্নায়ুযদ্ধের সূচনা ঘটেছে মূলতঃ সোমবার সন্ধ্যা হোয়াইটহাউজে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প ঘোষণা করেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার সর্বময় ক্ষমতা রয়েছে সারা দেশ থেকে একযোগে লকডাউন তুলে দেয়ার জন্য। ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘যখন কেউ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়, তখন রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সর্বময় ক্ষমতা তার কাছে চলে আসে।’
এর ঘণ্টাখানেক আগেই কুমো এবং আরো আটজন গভর্ণর মিলে একসঙ্গে ঘোষণা দেন, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য তারা একসঙ্গে কাজ করবেন এবং তাদের নিজ নিজ রাজ্য রি-ওপেন করার বিষয়ে তারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেবেন। তাদের এই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতেই সংবাদ সম্মেলন ডেকে নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে জানিয়ে দেন সবাইকে।
সূত্র : ডেইলিমেইল
আইএইচএস/