ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

করোনারোধে সফল রাজস্থানের ছোট্ট এই শহর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০১:০৩ পিএম, ১৩ এপ্রিল ২০২০

ভারতের রাজস্থান রাজ্যের একটি ছোট জেলা শহর ভিলওয়ারা। এই শহরটি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানোর লক্ষ্যে সফল এক অভিযান চালানোর পর সারাদেশের ভাইরাস হটস্পটগুলোতে একই পদ্ধতি প্রয়োগ করার কথা ভাবা হচ্ছে।

ইতোমধ্যেই ভিলওয়ারা মডেল নামে পরিচিত হয়ে ওঠা এই পদ্ধতির মূল কথা হল 'রুথলেস কন্টেইনমেন্ট'-অর্থাৎ কঠোরভাবে মানুষজনকে ঘরের ভেতর আটকে রাখা। কিন্তু কীভাবে ভিলওয়ারাতে এই মডেল সফলভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে এবং এর সুবিধা-অসুবিধাগুলোই বা ঠিক কী?

রাজস্থানের রাজধানী জয়পুর থেকে আড়াইশো কিলোমিটার দূরের শহর ভিলওয়ারা। এটি ভারতের অন্যতম প্রধান টেক্সটাইল হাব হিসেবেও পরিচিত। ভারতে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের প্রথম দিকে এই শহরটিই ছিল দেশের প্রধান হটস্পট।

গত ১৯ মার্চ ভিলওয়ারাতে প্রথম সংক্রমণের মাত্র চারদিনের ভেতর সেখানে ১৩ জনের শরীরে করোনার উপস্থিতি ধরা পড়ে। গত মাসের শেষের দিকে সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৬।

কিন্তু এর পরই দেখা যায় একটা নাটকীয় পট পরিবর্তন। পরবর্তী ১০ দিনে পুরো জেলায় নতুন করে মাত্র একজন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। আর ইতোমধ্যেই সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১৭ জন।

রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট বলেন, করোনার প্রকোপ শুরু সঙ্গে সঙ্গে আমরা ভিলওয়ারাতে এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করি যে, কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে এবং কোনও ছাড় দেওয়া হবে না। আর তাতে আমরা সফলও হয়েছি।

তিনি বলেন, সরকারি বাস, বেসরকারি যানবাহন বা ভ্যানের চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যতগুলো পজেটিভ কেস এসেছিল, তার প্রত্যেকটার ক্লাস্টার ম্যাপিং তৈরি করা হয়েছে। পুরো জেলায় হাজার হাজার লোককে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মানুষের সহযোগিতায় পুরো ব্যবস্থাটা এমনভাবে করা হয়েছে যাতে ভাইরাস কিছুতেই ছড়াতে না পারে। ২২ মার্চের মধ্যেই রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগ ও জেলা প্রশাসন সাড়ে ৮শ টিম গড়ে তুলে লোকজনের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সার্ভে শুরু করে।

Lockdown

প্রায় সাড়ে ছয় লাখেরও বেশি বাড়ির দরজায় গিয়ে তারা প্রায় ২৪ লাখ লোকের ওপর জরিপ চালায়। যাদেরই ফ্লুর মতো উপসর্গ দেখা গেছে তাদেরই হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমনকি তারা সেই নির্দেশ মানছেন কি না, তা দেখতে একটি অ্যাপের মাধ্যমে তাদের গতিবিধিও ট্র্যাক করা হয়েছে।

প্রথম দিন থেকেই পুরো শহরে কারফিউ জারি করা হয়। জেলার সীমান্তে সিল থাকলেও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। ফোন করলে পুলিশ গিয়ে বাড়ি বাড়ি খাবারদাবার ও ওষুধের হোম ডেলিভারি দিয়ে আসছে।

শহরের বেসরকারি হাসপাতালে প্রথম একজন চিকিৎসকের করোনা ধরা পড়ার পর ওই হাসপাতালের ১ কিলোমিটার এলাকা কনটেইনমেন্ট জোন এবং তিন কিলোমিটার এলাকাকে বাফার জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে করোনা ধরা পড়া প্রত্যেক রোগীর ক্ষেত্রেই। এর সঙ্গে প্রতিদিন চলতে থাকে জীবাণুমুক্ত করার অভিযান।

ভিলওয়ারা জেলার চীফ মেডিক্যাল অফিসার ড. অরুণ গৌড় বিবিসিকে বলেন, স্থানীয় বাসিন্দাদের সাহায্য ছাড়া এই কঠোর অভিযান কিছুতেই সফল হত না। তারা প্রশাসনকে দারুণ সহযোগিতা করেছেন। তবে তাদের এখনও বেশ কিছুদিন এই নিয়মগুলো মেনে চলতে হবে বিশেষ করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, ঘর থেকে না বের হওয়া এবং হাত পরিষ্কার রাখার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

তার মতে, এটা মেনে না চললে এতদিনের পরিশ্রম সব বিফলে যাবে। লড়াই যে এখনও শেষ হয়নি তা মনে রাখতে হবে বলে সতর্ক করেছেন তিনি। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট জাদুকর পরিবারের সন্তান। নিজেও তিনি ম্যাজিক দেখাতে খুব ভালবাসেন। কিন্তু ভিলওয়ারাতে তার প্রশাসন যে 'ম্যাজিক' দেখিয়েছে তেমনটা বোধহয় তার সারা জীবনেও অভূতপূর্ব।

যে ভিলওয়ারা ভারতের ইতালি হয়ে উঠতে পারে বলে মাত্র দু'সপ্তাহ আগেও গণমাধ্যম সতর্ক করেছিল সেটাই এখন সব আশঙ্কাকে আপাতত ভুল প্রমাণ করতে পেরেছে। ভারতের স্বরাষ্ট্রসচিব রাজীব গৌবাও এখন বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছেন বিভিন্ন হটস্পটে কীভাবে ভিলওয়ারা মডেল প্রয়োগ করা যায়।

যদিও ভিলওয়ারার মতো একটি শিল্পাঞ্চল ও গ্রামীণ এলাকা মেশানো জেলায় যে মডেল সফল হয়েছে, মুম্বাইয়ের ধারাভির মতো জনবহুল বস্তিতে তা আদৌ কাজে লাগানো যাবে কিনা, তা নিয়ে বেশ সংশয়ও আছে।

টিটিএন/পিআর