ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

আক্রান্তের সংস্পর্শে গেছেন কিনা জানাবে স্মার্টফোন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৮:১১ পিএম, ১১ এপ্রিল ২০২০

আপনি সম্প্রতি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোন মানুষের সংস্পর্শে এসে থাকলে আপনাকে সতর্ক করে দিতে পারবে এমন এক প্রযুক্তি তৈরির জন্য যৌথভাবে কাজ করছে মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপল ও গুগল। প্রাথমিকভাবে যেসব থার্ড পার্টি কনট্যাক্ট ট্রেসিং অ্যাপ এই মূহুর্তে আছে, সেগুলো যাতে ঠিকভাবে কাজ করে সেই ব্যবস্থা করে দেবে এই দুই কোম্পানি।

কিন্তু তাদের আসল লক্ষ্য এমন এক প্রযুক্তি তৈরি করা যাতে কোন অ্যাপ ডাউনলোডের দরকারই হবে না। অ্যাপল ও গুগল মনে করছে, প্রাইভেসি বা ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নিয়ে যাদের উদ্বেগ আছে, তাদের এই কৌশল সেই সমস্যার সমাধান করবে। কারণ যারা এই প্রযুক্তি ব্যবহার করবেন তাদের নাম-পরিচয়ের কোনো উল্লেখ কোথাও থাকবে না।

মূলত স্মার্টফোনের ব্লু-টুথ সিগন্যাল ব্যবহার করে জানা যাবে কোনো করোনাভাইরাস আক্রান্ত মানুষের কাছে কেউ গিয়েছিল কিনা এবং দীর্ঘ সময় সেখানে ছিল কিনা; যার ফলে তারও সংক্রমণ হয়ে থাকতে পারে।

পরে যদি পরীক্ষায় দেখা যায় যে কোন মানুষের কোভিড-১৯ হয়েছে, তখন তার সংস্পর্শে আসা অন্য মানুষদের স্মার্টফোনে সতর্কবার্তা পাঠিয়ে সেটি জানিয়ে দেয়া হবে। তবে স্মার্টফোনে কোন জিপিএস লোকেশন ডাটা বা ব্যক্তিগত তথ্য রেকর্ড করা হবে না।

যেভাবে এই প্রযুক্তি কাজ করবে

ধরা যাক, রহিম ও করিমের দেখা হলো একটা পার্কে। তারা একে অপরকে চেনেন না। দশ মিনিট তারা আলাপ করলেন। যেহেতু তারা কিছুটা সময় কাছাকাছি ছিল, তাদের দুজনের স্মার্টফোন স্বয়ংক্রিয়ভাবেই একটি ‘কী কোড’ বিনিময় করলো।

কয়েকদিন পর দেখা গেল, রহিমের কোভিড-১৯ টেস্টের ফলাফল পজিটিভ এসেছে। তখন রহিম তার স্মার্টফোনের একটি অ্যাপে তা রিপোর্ট করলো। তার সম্মতি নিয়ে স্মার্টফোন তখন এই তথ্যটি জানিয়ে দিল একটি সেন্ট্রাল ডাটাবেজে।

করিম স্মার্টফোন সেন্ট্রাল ডাটাবেজে সংযুক্ত হয়ে দেখলো সম্প্রতি তার সঙ্গে দেখা হয়েছে এমন এক লোকের কোভিড-১৯ ধরা পড়েছে। তখন করিমের স্মার্টফোনে একটি বার্তা এলো তাকে সতর্ক করে দিয়ে।

goooo

‘ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ক্ষুন্ন হবে না’

অ্যাপল ও গুগল এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদের এই নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের চেষ্টায় ব্যবহারকারীদের ‘ব্যক্তিগত গোপনীয়তা, স্বচ্ছতা এবং সম্মতি’কে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। এই খাতের অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে মিলে তারা এই প্রযুক্তি তৈরি করার আশা করছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, এই নতুন উদ্যোগটি বিবেচনার জন্য তার প্রশাসনের কিছু সময় দরকার। হোয়াইট হাউসের সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘এটা বেশ আগ্রহী হওয়ার মতো একটা বিষয়, কিন্তু বহু মানুষের উদ্বেগ ব্যক্তিগত স্বাধীনতার ব্যাপার নিয়ে। আমাদের এই ব্যাপারটা ভালোভাবে পরীক্ষা করে দেখতে হবে এবং তারপর আমরা এ বিষয়ে আপনাদের শিগগিরই জানাবো।’

এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ডাটা প্রোটেকশন সুপারভাইজার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এই উদ্যোগটির ব্যাপারে আরও পর্যালোচনার দরকার হবে। তবে প্রাথমকিভাবে মনে হচ্ছে এরকম একটি প্রযুক্তিতে যা যা থাকা দরকার, এটিতে তা আছে। যেমন ব্যবহারকারীর অধিকার, ডাটা প্রোটেকশন এবং পুরো ইউরোপজুড়ে যাতে এটি কাজ করতে পারে, সেই বিষয়টি।’

তবে অনেকে বলছেন, এই উদ্যোগের সাফল্য নির্ভর করবে যথেষ্ট মানুষকে ভাইরাসের জন্য পরীক্ষা করা হচ্ছে কিনা তার ওপর। বিশ্বে যত স্মার্টফোন ব্যবহৃত হয় তার বেশিরভাগই চলে অ্যাপল বা গুগলের তৈরি করা অপারেটিং সিস্টেম দিয়ে।

কিছু দেশ- যেমন সিঙ্গাপুর, ইসরায়েল, দক্ষিণ কোরিয়া এবং পোল্যান্ড ইতোমধ্যে এমন ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করছে যাতে লোকজনের স্মার্টফোনে সংক্রমণের ঝুঁকির ব্যাপারে সতর্কবার্তা পাঠানো যায়।

apple

যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং জার্মানিসহ অন্যকিছু দেশের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ তাদের নিজেদের উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের কোন কোন এলাকার পৌর কর্তৃপক্ষ তাদের মতো করে থার্ড পার্টি অ্যাপের মাধ্যমে কাজ করছে।

গুগল ও অ্যাপল চাইছে সমস্ত উদ্যোগকে একটা সিস্টেমে নিয়ে আসতে। ফলে কোনো মানুষ যখন একটা স্মার্টফোন নিয়ে এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাবে, তখনও এই ব্যবস্থা কাজ করবে। যদি তাদের এই উদ্যোগ সফল হয় তাহলে বিভিন্ন দেশে লকডাউন ও সীমান্ত কড়াকড়ি শিথিল করা সম্ভব হবে।

আগামী মে মাসের মাঝামাঝি এই দুই কোম্পানি মিলে একটা সফ্টওয়্যার বিল্ডিং ব্লক, যা পরিচিত ‘অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং সফ্টওয়্যার’ নামে, সেটি প্রকাশ করবে। অন্যান্য অ্যাপগুলো তখন একই ভিত্তিতে চালানো সম্ভব হবে।

এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যবহারকারীর যেসব তথ্য সংগৃহীত হবে, সেগুলো জমা থাকবে রিমোট কম্পিউটার সার্ভারে। কিন্তু একজন ব্যবহারকারীর প্রকৃত পরিচয় উদঘাটন করা সম্ভব হবে না।

আর কোনো করোনাভাইরাস আক্রান্ত মানুষ কার কার সংস্পর্শে এসেছিল তা জানার কাজটি হবে তার স্মার্টফোনে, কেন্দ্রীয়ভাবে নয়। এর ফলে কাউকে যখন ফোনে অ্যালার্ট পাঠিয়ে কোয়ারেনটিনে যেতে বলা হবে, তখন সেটি কেবল সেই জানবে, অন্যরা তা জানতে পারবে না।

অ্যাপল ও গুগল বলছে, তাদের প্রযুক্তির আরেকটি সুবিধা হচ্ছে, যারা অ্যাপ তৈরি করবে, আইওএস এবং অ্যান্ড্রয়েড উভয় ধরনের অপারেটিং সিস্টেমেই তাদের অ্যাপ কাজ করবে। এখানে কোনো সমস্যা হবে না। আর এখন যেসব কনট্যাক্ট ট্রেসিং অ্যাপ আছে, তার তুলনায় নতুন প্রযুক্তিতে ব্যাটারি খরচ কম হবে বলেও তারা আশা করছে।

সূত্র: বিবিসি

এসএ