লকডাউন তুলে নিচ্ছে ইউরোপের তিন দেশ
করোনার থাবায় বিপর্যস্ত গোটা বিশ্ব। প্রাণঘাতী এ ভাইরাস সবচেয়ে বেশি তাণ্ডব চালিয়েছে ইউরোপে। সেই ইউরোপেরই তিনটি দেশ ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে যাচ্ছে। সামাজিক দূরত্বে নিশ্চিতে যেসব কঠোর নিয়ম আরোপ করা হয়েছিল সেগুলো শিথিল করে অর্থনীতির চাকায় আবার গতি ফেরাতেই এ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
তবে বিষয়টি নিয়ে কারো কারো মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে যে, উপযুক্ত সময়ের আগেই স্বাভাবিক জীবনে ফেরার পদক্ষেপ নেয়া হয়ে যাচ্ছে না তো? তাহলে তো সংক্রমণ আবার বেড়ে যেতে পারে।
আগামী সপ্তাহে লকডাউন শিথিল করতে যাচ্ছে অস্ট্রিয়া। আর সত্যিই যদি এমনটা হয় তাহলে ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে রেস্তোরাঁ ও দোকানপাট খুলে দিতে যাচ্ছে দেশটি। ১৫ এপ্রিল থেকে স্কুল ও ডে কেয়ার সেন্টারগুলো খুলে দিতে যাচ্ছে ডেনমার্ক। গেল তিন সপ্তাহ এসব বন্ধ ছিল দেশটিতে। সামাজিক দূরত্বে আরোপিত বিধিনিষেষ এপ্রিলের ৯ তারিখেই কিছুটা শিথিল করেছে চেক রিপাবলিক। ১৪ তারিখ থেকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে।
ইউরোপে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা হয়েছে যে দেশ দুটিতে, অর্থাৎ ইতালি ও স্পেন, সেই দেশ দুটিও বিধিনিষেষ শিথিল করার চিন্তাভাবনা শুরু করেছে। পরে অবশ্য অন্তত আরও কয়েক সপ্তাহ এভাবেই চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
নেদারল্যান্ডসের ইউনিভার্সিটি অব লেইদেনের ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞ আর্জেন বয়েন মনে করেন, প্রত্যেকটা দেশই এখন তাদের নিজেদের মতো করে একটা সুবিধাজনক সময় পেতে চাচ্ছে, যাতে করে তারা সবকিছু স্বাভাবিক করতে পারে। গণতান্ত্রিক সরকারগুলো বহুদিন এমন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েনি। তাদের এখন দুটি জিনিসের একটিকে বেছে নিতে হবে। তা হলো হয় তাদের মহামারীর আবার ফিরে আসার হুমকি উড়িয়ে দিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাত্রার দিকে পা বাড়াতে হবে, অথবা অর্থনীতি ধ্বংসের দিকে যাবে- সেটা দেখতে হবে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে প্রচুর বুদ্ধিমত্তা ও অন্য রকম নেতার প্রয়োজন হবে।
অবশ্যই এসব দেশকে কখনও না কখনও সব কিছু খুলে দিতে হবেই। আবার কখন যে সেটা করা যায় তার সঠিক সময় কোনটি, সেটিও নিশ্চিত করে বলা যায়। আবার শুরুর দিকে যেসব দেশ সিদ্ধান্ত নেবে তাদের দেখেই সিদ্ধান্ত নেবে বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলো।
লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের ইউরোপিয়ার পাবলিক হেলথ বিশেষজ্ঞ মার্টিন ম্যাককি বলছেন, তা এটা আসলে একটা পরীক্ষা করতে যাচ্ছে। সেটা ভালো, কিন্তু সমস্যা হলো বাকি সব পরীক্ষার মতো এ ক্ষেত্রেও কিছু ঝুঁকে থেকে যায়।
এখন প্রশ্নটা হলো ঝুঁকি মাথায় নেয়াটা কি আখেরে লাভের হবে? এর জবাব নেই কারও কাছে। কাচের সামনে দাঁড়িয়ে মুখে মাস্ক পরে ৬ এপ্রিল সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে দেয়া বক্তব্য অস্ট্রিয়ান চ্যান্সেলর সেবাস্টিন কুর্দজ তুলে ধরেন কিভাবে ধাপে ধাপে অর্থনীতিতে আবার প্রাণ ফেরানো যায়। তিনি বলেছেন, কোনো কোনো ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ১৪ এপ্রিল থেকে খুলে দেয়া যায়, আবার কোনোটা এ মাসের শেষ দিক থেকে। তবে রেস্তোরাঁ, জিমের মতো জায়গাগুলো হয়তো মে মাসের মাঝামাঝি বা জুনের আগে নাও খুলতে পারে।
ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মে মাসের মাঝামাঝিতে অস্ট্রিয়ার স্কুলগুলো স্বাভাবিক হতে পারে। তবে এপ্রিলের শেষ দিকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
ডেনমার্কও একইভাবে ধীরে ধীরে সবকিছু স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে যেতে চায়। ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিচ্ছে চেক রিপাবলিক। তবে দেশটিতে কেউ ঢুকলে তাকে বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।
ইউরোপের তিন দেশের এসব পদক্ষেপ অনেকের কাছে টার্নিং পয়েন্ট বলে মনে হলেও এটা এখনও নিশ্চিত নয় যে শেষ পর্যন্ত এটা কোনো ভালো খবর কি-না।
ইউরোপের মধ্যে এই তিনটি দেশই সবচেয়ে আগে কঠোরভাবে লকডাউন শুরু করে। তাই আপাতদৃষ্টিতে তাদের সবার আগে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার এই চেষ্টা স্বাভাবিক বলে মনে হতে পারে। তারপরও তারা একটু জলদিই এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলছে বলেও আশঙ্কা রয়েছে।
বলা হচ্ছে, ধীরে ধীরে সিদ্ধান্ত নেয়াটাই এখন বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেয়া হবে।
সূত্র : ভক্স।
এনএফ/জেআইএম