সিঙ্গাপুরে করোনার হটস্পট অভিবাসীদের ডরমিটরি, ঝুঁকিতে বাংলাদেশিরাও
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় শুরুর দিকে সব দেশের কাছে রীতিমতো আদর্শ হয়ে উঠেছিল সিঙ্গাপুর। চমৎকার ব্যবস্থাপনায় মহামারির প্রথম ধাক্কা বেশ সফলভাবেই প্রতিরোধ করেছে তারা। তবে গত কয়েকদিনে কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছে সেই প্রতিরোধের দেয়াল। আর এতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়েছেন প্রবাসী কর্মীরা।
প্রায় ৬০ লাখ জনসংখ্যার ছোট্ট নগররাষ্ট্রটিতে শ্রমশক্তির এক-তৃতীয়াংশই অভিবাসী। এর মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ এশীয় দেশগুলোর কর্মীরা নিবন্ধিত ৪৩টি ডরমিটরিতে বসবাস করেন। সেখানে একেকটি রুমে গাদাগাদি করে থাকেন প্রায় ২০ জন করে। তাদের সবাই একই বাথরুম ও রান্নাঘর ব্যবহার করেন।
এক কথায়, এ ধরনের জায়গায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা অসম্ভব। এ কারণে সেসব জায়গায় করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিও অত্যন্ত বেশি। ইতোমধ্যেই সিঙ্গাপুরের নয়টি বেসরকারি ডরমিটরিতে ছড়িয়ে পড়েছে নভেল করোনাভাইরাস। আর এর জন্য কর্তৃপক্ষের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা না নেয়াকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। দেশটিতে করোনা আক্রান্তদের প্রায় এক-চতুর্থাংশই এসব ডরমিটরির সঙ্গে সম্পর্কিত।
করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির কারণে সিঙ্গাপুরে অন্তত ৫০ হাজার প্রবাসী কর্মীকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। বাকিদেরও নিরাপদ কোনও জায়গায় সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তবে সেখানেও দেখা দিয়েছে অব্যবস্থাপনার চিত্র।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, সম্প্রতি একটি সেনাঘাঁটিতে কিছু কর্মীকে সরিয়ে নেয়া হয়। তবে তাদের একই বাসে খুব কাছাকাছি বসিয়ে নেয়া হয়েছিল এবং নামার সময়ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখেনি কেউই। সিঙ্গাপুরের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পেজেই একটি ভিডিওতে একদল কর্মীকে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
দেশটির দু’টি সেনাঘাঁটিতে অন্তত ১ হাজার ৩০০ কর্মীকে পৃথকভাবে রাখা হয়েছে। আগামী ৪ মে পর্যন্ত তাদের সেখানেই বিশেষ নজরদারিতে থাকতে হবে। বাকি কর্মীদেরও বিভিন্ন খালি স্থাপনা, প্রদর্শনী কেন্দ্রসহ নানা জায়গায় সরিয়ে নেয়া হয়েছে। সেখানে তাদের আর ডরমিটরির মতো গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে না।
গত সপ্তাহে করোনার বিস্তার মোকাবিলায় চার সপ্তাহের জন্য অতিরিক্ত কড়াকড়ি আরোপ করেছে সিঙ্গাপুর সরকার। ৪ মে পর্যন্ত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সব স্কুল, অনাবশ্যক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার এসব ব্যবস্থা আরও আগে নিলে করোনাভাইরাস এভাবে ছড়িয়ে পড়তো না। তাছাড়া পাঁচটি ডরমিটরিতে কোয়ারেন্টাইনে থাকা ৫০ হাজার কর্মীও বড় ঝুঁকিতে রয়েছেন।
অভিবাসী শ্রমিকদের সহায়তাকারী সংগঠন ট্রানজিয়েন্ট ওয়ার্কার্স কাউন্ট টু এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ডরমিটরির রুমগুলোতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা অসম্ভব। সেখানে একটি রুমের একজন কর্মী যদি আক্রান্ত হন এবং তার কোনও উপসর্গ দেখা না দেয়, তিনি যতবার রুমমেটদের সংস্পর্শে আসবেন তাদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তত বাড়বে। এতে ডরমিটরিতে করোনা সংক্রমণের হার ভয়াবহ আকারে বেড়ে যেতে পারে।
জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্যমতে, সিঙ্গাপুরে এ পর্যন্ত ২ হাজার ১০৮ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে, মারা গেছেন সাতজন। গত বৃহস্পতিবার দেশটিতে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিলেন ২৮৭ জন, যা এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ। এছাড়া শুক্রবারও ১৯৮ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে অন্তত ২৮০ জন ডরমিটরির সঙ্গে সম্পর্কিত।
সূত্র: দ্য মাইনিচি
কেএএ/এমএস