‘হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন’ ওষুধের জন্য ভারতের কাছে ধর্না ৩০ দেশের

এখন পর্যন্ত প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। তবে এনিয়ে রাতদিন গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। তবে সাফল্যের দেখা এখনও মেলেনি। কত দিন নাগাদ এই ওষুধ পাওয়া যাবে, তা-ও বলতে পারছেন না গবেষকরা।

তবে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ‘হাইড্রোকুইনন’ নামে ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় বিশেষ কার্যকর হচ্ছে। আর এটা জানার পরই গত ২৫ মার্চ ওই ওষুধের রফতানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। এরপরই আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়তে হয় ভারতকে।

তাই ইচ্ছা করলেই এই ওষুধকে নিজের দেশে সীমাবদ্ধ রাখতে পারছে না ভারত। জানা গেছে, ইতোমধ্যে ক্ষমতাধর যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলে পৌঁছে গেছে এই ওষুধ। তবে শুধু এক দুটি দেশ নয়, ম্যালেরিয়ার ওষুধ বা হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের জন্য ভারতের দিকে তাকিয়ে আছে একাধিক দেশ। ওইসব দেশের রাষ্ট্রনেতারা ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ব্যক্তিগতভাবে ওষুধ দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্র, লাতিন আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে অনুরোধ এসেছে ভারতের কাছে। তাই বলতে গেল ফার্মা সেক্টরে রীতিমতো গুরুত্ব বেড়েছে ভারতের।

তবে দেশের অনুরোধকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে ভারত। সবার আগে দেশের চাহিদা মেটানো সম্ভব কি-না সেটা দেখা হচ্ছে।

করোনা সংক্রমণ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত ১৫ জন রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই তালিকায় রয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মেরকেল, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট বলসোনারো, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, আবুধাবির যুবরাজ শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান, কাতারের শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি, স্পেনের প্রধানমন্ত্রী, সৌদি যুবরাজ। গোটা বিশ্বজুড়ে এই ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আনতে কী কৌশল নেয়া যায়-রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে সে বিষয়ে কথা হয়েছে ভারতের।

এই দুর্যোগে জরুরি ওষুধ পেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ভোলেনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। তারা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে এজন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

কলকাতাভিত্তিক সংবাদমাধ্যম কলকাতা২৪*৭ শুক্রবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ‘হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন’ নামে ওই ওষুধের ২৯ মিলিয়ন ডোজ ইতোমধ্যেই রওনা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে। গুজরাট থেকে জাহাজে করে পাঠানো হচ্ছে ওষুধ।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজকে দেয়া ট্রাম্পের এক সাক্ষাৎকারের উদ্ধৃতি দিয়ে ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ট্রাম্প বলেছেন, আমি প্রচুর পরিমাণ ওষুধ আনাচ্ছি। ২৯ মিলিয়নের থেকেও বেশি। বেশির ভাগটাই ইতোমধ্যে ভারত থেকে রওনা হয়েছে। আমি নরেন্দ্র মোদিকে অনুরোধ করেছিলাম, যদি তিনি ওষুধ পাঠান। মোদি ভীষণ ভালো মানুষ।

বুধবার রাতে টুইটারে ভারতকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প লেখেন, ‘কঠিন সময়ে বন্ধুদের সহযোগিতা বেশি করে দরকার হয়। হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য ভারত এবং ভারতবাসীকে ধন্যবাদ। কখনও ভুলব না। ধন্যবাদ নরেন্দ্র মোদি। আপনার নেতৃত্ব শুধুই ভারতের নয়, গোটা মানবজাতির।’

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা ৯৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। একইসঙ্গে আক্রান্তের সংখ্যাও ১৬ লাখ ছুঁয়েছে।

এ পর্যন্ত করোনায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়ার্ল্ডওমিটার ওয়েবসাইটের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ৫৬৬ জন। আর মারা গেছে ১৬ হাজার ৬৯১ জন।

এসআর/এমএস