ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

করোনা পরীক্ষার সফল কিট বানানোর পর মা হলেন মিনাল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৫:৩৮ পিএম, ২৮ মার্চ ২০২০

করোনাভাইরাসের লড়াইয়ে কমসংখ্যক মানুষের পরীক্ষার জন্য ভারতকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। তবে এই পরীক্ষায় সম্ভবত পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে; আর এর নেপথ্যে কাজ করেছেন দেশটির ভাইরোলজিস্ট মিনাল দ্যাখাভে ভোঁসলে। এই ভাইরোলজিস্ট শতভাগ সফল একটি করোনা টেস্টের কিট উদ্ভাবন করেছেন। এই কিট উদ্ভাবনের কয়েক ঘণ্টা পরই মা হয়েছেন তিনি।

ভারতে তৈরি প্রথম এই কিট বৃহস্পতিবার বাজারে পৌঁছেছে। এর ফলে দেশটিতে ফ্লুর লক্ষণ নিয়ে যারা অসুস্থ তাদের করোনা শনাক্তকরণের কাজ দ্রুতগতিতে করা যাবে বলে আশা করেছেন অনেকে।

ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় পুনে শহরের মাইল্যাব ডিসকভারি ভারতের প্রথম কোনও প্রতিষ্ঠান হিসেবে করোনা টেস্টের কিট উদ্ভাবন এবং বাজারজাত করছে। চলতি সপ্তাহে পুনে, মুম্বাই, দিল্লি, গোয়া ও বেঙ্গালুরুতে প্রথম ধাপে ১৫০টি কিট বাজারজাত করেছে।

মাইল্যাবের মেডিক্যাল অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক চিকিৎসক গৌতম ওয়ানখেড় শুক্রবার বিবিসিকে বলেন, গত সপ্তাহ থেকেই আমাদের ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট কাজ করছে । আগামী সোমবারের মধ্যে দ্বিতীয় ধাপে আরও কিছু কিট বাজারে ছাড়া যাবে।

পুনের এই কোম্পানি এর আগে এইচআইভি, হেপাটাইটিস বি, সি এবং অন্যান্য রোগের পরীক্ষার কিট তৈরি করেছিল। মাইল্যাব বলছে, তারা এক সপ্তাহে এক লাখের বেশি করোনা কিট সরবরাহ করতে সক্ষম। এমনকি প্রয়োজন হলে সপ্তাহে দুই লাখেরও বেশি উৎপাদন করতে পারে।

মাইল্যাবের একটি কিটের মাধ্যমে একশ নমুনার পরীক্ষা করা যায়। এই কিটের মূল্য মাত্র এক হাজার ২০০ রুপি। অন্যদিকে চীন থেকে ভারত প্রত্যেকটি কিট আমদানি করেছে সাড়ে ৪ হাজার রুপিতে।

কিট তৈরি করলেন, তারপর সন্তানের জন্ম দিলেন ভাইরোলজিস্ট

মাইল্যাবের গবেষণা ও উন্নয়ন প্রধান ভাইরোলজিস্ট মিনাল দ্যাখাভে ভোঁসলে বলেন, চীন থেকে আমদানিকৃত কিটের মাধ্যমে করোনা শনাক্তের ফল জানা যায় ছয় থেকে সাত ঘণ্টা পর। কিন্তু আমাদের কিটে মাত্র আড়াই ঘণ্টায় ফল জানা যাবে।

প্যাথো ডিটেক্ট নামে করোনাভাইরাসের এই কিটের নকশাকারী দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন ভোঁসলে। তিনি বলেন, তিন-চার মাসের জায়গায় তারা রেকর্ড ছয় সপ্তাহের মধ্যে এই কিটের নকশা করেছেন।

এই বিজ্ঞানী নিজের একটি নির্ধারিত সময়ের সঙ্গেও লড়ছেন। ফেব্রুয়ারিতে করোনা কিট তৈরির এই কাজ শুরু করেন; গত সপ্তাহে কন্যা সন্তানের মা হয়েছেন তিনি। গর্ভবতী অবস্থায় কিট তৈরির কাজ শেষ করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সন্তানের জন্ম দেন তিনি।

বিজ্ঞানী মিনাল বলেন, এটা একটা জরুরি অবস্থা। যে কারণে আমি এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়েছিলাম। আমার দেশের জন্য কাজ করতে হবে। এই প্রকল্পটিকে সফল করার জন্য তার নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি দল কঠোর পরিশ্রম করেছেন বলে জানান তিনি।

কাজ শেষে কন্যা সন্তান জন্ম দেয়ার আগের দিন গত ১৮ মার্চ ভারতের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির (এনআইভি) কাছে কিটটি জমা দেন মিনাল ভোঁসলে। একই দিন সন্ধ্যায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগে ভারতের খাদ্য ও ওষুধ কর্তৃপক্ষ এবং ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কতৃৃপক্ষ সিডিএসসিও'র কাছে বাজারজাতকরণের জন্য অনুমতি চেয়ে কিটটি জমা দেন।

মাইল্যাবের মেডিক্যাল অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক চিকিৎসক গৌতম ওয়ানখেড় বলেন, আমরা সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটছিলাম। এটার সঙ্গে আমাদের সুখ্যাতির বিষয়টিও জড়িত। আমরা সব সময়ই প্রথমবারেই সবকিছুতে সফল হয়েছি। একেবারে সামনে থেকে আমাদের এই কাজের নেতৃত্ব দিয়েছেন মিনাল ভোঁসলে।

পর্যালোচনার জন্য কিটটি জমা দেয়ার আগে এর সুনির্দিষ্ট এবং নির্ভুল ফলাফল সম্পর্কিত সব ধরনের প্যারামিটার নিশ্চিত করার জন্য বার বার চেক করা হয়েছে। যদি একই নমুনা দিয়ে ১০টি পরীক্ষা চালানো হয়; তাহলে সবগুলোর ফল একই আসবে। এটা আমাদের অর্জন। আমাদের কিটটি নির্ভুল।

বিশ্বের ১৯৯টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পরা প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে ভারতে আক্রান্ত হয়েছেন ৯০২ এবং মারা গেছেন ২০ জন। ১৩০ কোটি মানুষের এই দেশটির দুর্বল চিকিৎসা ব্যবস্থার কারণে করোনা ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

করোনা পরীক্ষার পর্যাপ্ত কিট না থাকায় এবং গণহারে পরীক্ষা করা সম্ভব না হওয়ায় দেশটির অনেক মানুষ ইতোমধ্যে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন বলে ধারণা করছেন অনেকে। তবে আগামী এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে এই মহামারি প্রকোপ বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে ভারতে।

এসআইএস/জেআইএম