নিউইয়র্ক লকডাউন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যকে ‘লকডাউন’ ঘোষণা করা হয়েছে। মানুষের জীবনের জন্য অপরিহার্য নয় এমন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া সব বন্ধ থাকবে। শুক্রবার সকালে নিউইয়র্ক রাজ্যের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো এ ঘোষণা দেন। স্থানীয় সময় রোববার রাত ৮টা থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত এ নির্দেশনা কার্যকর থাকবে। আদেশ লঙ্ঘনকারীদের জরিমানা গুনতে হবে।
রাজ্য গভর্নর তার ঘোষণায় বলেন, আমরা আমাদের সাধ্যমতো সবকিছু করছি। একটা জীবনও যদি বাঁচাতে পারি, তাহলে খুশি হব। পুরো রাজ্যজুড়ে গ্রোসারি স্টোর, ফার্মেসি ছাড়া একান্ত জরুরি ব্যবসা-বাণিজ্য খোলা থাকবে। সব ধরনের আউটডোর কার্যক্রম ও খেলাধুলা বন্ধ থাকবে।
অ্যান্ড্রু কুমো আরও বলেন, সরকারি-বেসরকারি কর্মচারীদের মধ্যে যারা জরুরি কাজে নিয়োজিত নন- তাদের ঘর থেকে কাজ চালিয়ে যেতে হবে। লন্ড্রি, রেস্টুরেন্টে শুধু ডেলিভারি, পেট্রলপাম্প এবং সীমিত গণপরিবহন চালু থকবে।
গভর্নর কুমো আশপাশের রাজ্যেও এমন ঘোষণা প্রত্যাশা করছেন। তিনি বলেন, আমি সব দায়িত্ব নিজে গ্রহণ করছি। কেউ আমাকে দোষারোপ করলে করুক। আমরা নাজুক পরিস্থিতির আশঙ্কা করছি, তবে প্রত্যাশা করছি ভালো কিছুর। এসব উদ্যোগ কেবলই জীবন রক্ষার জন্য।
গত ২৪ ঘণ্টায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন পাঁচ হাজার ৫০ জন। মারা গেছেন ৩০ জন। এ নিয়ে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩৭ জনে। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৮ হাজার ৮৩৯ জন।
এদিকে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে একদিনে মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে ইউরোপের দেশ ইতালিতে। ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে এ যাবৎকালের রেকর্ড ৬২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৩২ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছেন পাঁচ হাজার ৯৮৬ জন। সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৭ হাজার ২১ জন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন প্রায় পাঁচ হাজার ১২৯ জন।
ইউরোপের দেশটিতে এখনও ৩৭ হাজার ৮৬০ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এদের মধ্যে অন্তত দুই হাজার ৬৫৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
এর আগে, গত বৃহস্পতিবারই করোনায় মৃত্যুর সংখ্যায় চীনকে ছাড়িয়ে যায় ইতালি। সেদিন দেশটিতে মৃত্যু হয়েছিল ৪২৭ জনের। আর গত বুধবার প্রাণ হারিয়েছিলেন ৪৭৫ জন কোভিড-১৯ রোগী। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সেটাই ছিল যেকোনো দেশের জন্য একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। শুক্রবার নিজেদের সেই রেকর্ডকেও ছাড়িয়েছে গেল তারা।
এদিকে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা দিয়ে গিয়ে ইতালিতে এখন পর্যন্ত ১৩ চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। গিম্বে হেলথ ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত চিকিৎসাকর্মীর সংখ্যা মোট আক্রান্তের ৮ দশমিক ৩ শতাংশ। হাতে গ্লাভস না পরাসহ অন্যান্য অসচেতনতার কারণে ভাইরাস আক্রান্ত হচ্ছেন তারা।
গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহানে প্রথমবারের মতো শনাক্ত হয় নভেল করোনাভাইরাস। এ পর্যন্ত সেখানে মারা গেছেন ৩ হাজার ২৪৮ জন, আক্রান্ত হয়েছেন ৮০ হাজার ৯৬৭ জন। সংক্রমণ শুরুর পায় দুই মাস পর গত ২১ ফেব্রুয়ারি ইতালিতে প্রবেশ করে প্রাণঘাতী করোনা। এরপর মাত্র একমাসের মধ্যেই মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে দেশটি। করোনা মহামারি দিন দিন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় অবরুদ্ধের সময়সীমা এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বাড়িয়েছে ইতালি।
বিএ