নির্ভয়ার ধর্ষকদের ফাঁসি দিতে পেরে খুশি পবন জল্লাদ
পবনের বাপ-দাদা ছিলেন নামজাদা জল্লাদ। এ পেশায় এসে তিনিও পূর্বপুরুষদের নাম ধরে রেখেছেন। ভারতের মীরাট জেলের সঙ্গে যুক্ত পবনই উত্তরপ্রদেশের একমাত্র প্রশংসাপত্র পাওয়া জল্লাদ। তার হাতেই কার্যকর হয়েছে বহুল আলোচিত মেডিকেল ছাত্রী নির্ভয়া ধর্ষণ ও হত্যায় অভিযুক্ত চার আসামির সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড। এবার এই প্রথম নির্ভয়াকাণ্ডের মতো নৃশংস ঘটনায় দোষীদের ফাঁসি দিতে পেরে বেশ খুশি পবন জল্লাদ।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্ভয়াকাণ্ডে দণ্ডিতদের ফাঁসি দেয়ার জন্য আগেই থেকেই পবন জল্লাদকে বেছে নিয়েছিল তিহার জেল কর্তৃপক্ষ। এ জন্য একাধিক মহড়াও সেরে নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু স্থগিতাদেশের কারণে ফাঁসি বারবার পিছিয়ে যাচ্ছিল।
শুক্রবার ভোররাতে ফাঁসি কার্যকরের পর ৫৭ বছর বয়সী পবন বলেন, জীবনে এই প্রথম চারজনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে আমি খুশি। এই দিনটার জন্য অনেকদিন ধরে অপেক্ষা করেছিলাম। ঈশ্বর ও তিহার জেল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ।
বারবার পিছিয়ে যাওয়ায় গত রাতেও পবন জানতেন না আদৌও শুক্রবার ভোররাতে তাদের ফাঁসি দিতে পারবেন কি-না। শেষ পর্যন্ত রাত সাড়ে তিনটার দিকে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে নিশ্চিত হয়, এ দিনই প্রথম ফাঁসি দিতে যাচ্ছেন পবন। সেই রায়ের কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুম থেকে উঠে পড়েন পবন। তারপর জেল কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা সেরে ফাঁসি দেয়ার জন্য প্রস্তুত হন তিনি।
অবশেষে নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ভোর সাড়ে পাঁচটায় ফাঁসির হাতলে চাপ দেন পবন। এর কিছুক্ষণ পর তিহার জেলের পরিচালক জানান, চারজনকেই মৃত বলে ঘোষণা করেছেন চিকিৎসকরা। পরে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে তিহার থেকে মীরাটের উদ্দেশে রওনা দেন পবন।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর দিল্লির একটি হলে সিনেমা দেখে বন্ধুর সঙ্গে বাসে ফিরছিলেন প্যারামেডিকেলের ওই ছাত্রী। ওই বাসে যাত্রী কম ছিল। একপর্যায়ে বাসচালক-সহকারীসহ অন্তত ৬ জন মিলে নির্ভয়ার বন্ধুকে পিটিয়ে হাত-পা বেঁধে বাসের পেছনের দিকে ফেলে রেখে মেয়েটিকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পরে দুজনকে দিল্লির একটি সড়কের পাশে বাস থেকে ছুড়ে ফেলা হয়।
গুরুতর আহত প্যারামেডিকেলের ওই শিক্ষার্থীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর পাঠায় দেশটির সরকার। সেখানে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর ২৬ ডিসেম্বর মারা যায় সে। এ ঘটনায় ভারতজুড়ে তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয়। নির্ভয়ার হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ সাজার দাবিতে দেশটির লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে দিনের পর দিন বিক্ষোভ করতে থাকেন।
নির্ভয়া হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি বাসচালক রাম সিং কারাগারে বন্দি অবস্থায় মারা যান। এছাড়া দোষী সাব্যস্ত আরেক ধর্ষক অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় আদালতের নির্দেশে তাকে তিন বছরের জন্য কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়। ২০১৫ সালে সাজার মেয়াদ শেষে এ তরুণ মুক্তি পাওয়ার পর আবারও ভারতে তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে দেশটির ধর্ষণের সাজার আইন পরিবর্তন করে ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সীদেরও ‘প্রাপ্তবয়স্ক’ হিসেবে বিবেচনা করার বিধান করা হয়।
২০১৩ সালে দেশটির দ্রুত বিচার আদালত বাকি চার ধর্ষকের সর্বোচ্চ সাজা ঘোষণা করেন। পরে দেশটির হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগও ওই সাজা বহাল রাখেন। অবশেষে নানা নাটকীয়তার পর শুক্রবার ভোররাতে এ চার ধর্ষকের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
এমএসএইচ/জেএইচ/পিআর