নিউইয়র্ক সিটির সব স্কুল ২০ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা
করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির সব স্কুল সোমবার (১৬ এপ্রিল) থেকে আগামী ২০ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। রোববার (১৫ মার্চ) নিউইয়র্ক সিটির মেয়র বিল ডি ব্লাজিও এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নিউইয়র্ক সিটিতে এখন পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে এবং এতে আক্রান্ত হয়েছে ৩২৯ জন। এ পরিস্থিতিতে স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
ডি ব্লাজিও বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাবে স্কুলগুলো বন্ধ রাখার ব্যাপারে তাকে শিক্ষক ও অভিভাবকদের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। এবং এর আগে তিনি স্কুলগুলো বন্ধ রাখার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তবে এখন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত না নিয়ে তার কোনো উপায় ছিল না বলে জানান তিনি।
নিউইয়র্ক সিটির মেয়র বিল ডি ব্লাজিও
নিউইয়র্কে এখন পর্যন্ত ৫২৪ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১১৭ জন। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার ৫৫৭ জন এবং এতে মোট ৬৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গত ১২ মার্চ এক সংবাদ সম্মেলনে নিউইয়র্ক শহরের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো বলেন, নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ৫ শতাধিক মানুষের সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
এদিকে মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদ স্থানীয় সময় শনিবার (১৪ মার্চ) করোনাভাইরাস সহায়তা প্যাকেজ-সংক্রান্ত একটি বিল পাস করেছে। এই বিলের মাধ্যমে বেকারদের অর্থ সহায়তা এবং বিনামূল্যে খাবার দেয়া হবে। ফলে দেশটির নিম্ন আয়ের ৩ কোটি ২০ লাখ মানুষ তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কিনতে পারবেন।
বিলটি অনুযায়ী বন্ধ স্কুল, ক্রীড়াক্ষেত্র এবং অফিসগুলোকে মহামারিটির অর্থনৈতিক ক্ষতি সীমিত করার জন্য বিনামূল্যে পরীক্ষা এবং অসুস্থতার ছুটি প্রদান করা হবে। সংশ্লিষ্ট এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা বেতনসহ দুই সপ্তাহের ছুটি পাবেন। এছাড়া বেতন ছাড়া তিন মাস পর্যন্ত ছুটি পাবেন তারা।
গেল সপ্তাহে মার্কিন কংগ্রেস তুমুল বিতর্কের পর ভাইরাসটির প্রতিষেধক তৈরিসহ করোনা মোকাবিলায় অন্যান্য পদক্ষেপ নেয়ার জন্য ৮৩০ কোটি ডলারের একটি তহবিল ছাড় দেয়। গত শুক্রবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় তহবিল থেকে ৫ হাজার কোটি তহবিল বরাদ্দ করেন।
বিশ্বব্যাপী বেড়েই চলেছে করোনাভাইরাস আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে বিশ্বব্যাপী এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৬৯ হাজার ২৬১ জন আক্রান্ত হয়েছে। এতে মৃত্যু হয়েছে ৬ হাজার ৪৯৯ জনের। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ায় কয়েক দিন আগে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসকে বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
এদিকে চীনের পর করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ইউরোপের দেশ ইতালিতে। দেশটিতে করোনায় একদিনে আরও ৩৬৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ১ হাজার ৮০৯ জনে।
ইতালিতে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ৩ হাজার ৫৯০ জন। আর সবমিলিয়ে দেশটিতে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বর্তমানে ২৪ হাজার ৭৪৭।
ইতালির পর ইউরোপে করোনাভাইরাসে দ্বিতীয় ক্ষতিগ্রস্ত দেশ স্পেন। দেশটিতে করোনাভাইরাসে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ১৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯১ জনে। রোববার (১৫ মার্চ) পর্যন্ত দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ৭ হাজার ৭৫৩ জন। এছাড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৫১৭ জন রোগী চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
দেশটিতে করোনার প্রকোপ যেন বাড়তে না পারে সেজন্য ইতোমধ্যে লোকজনের চলাচলে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এদিকে দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে স্পেন সরকার। এই জরুরি অবস্থা ১৫ দিন পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। খাবারের দোকান, ওষুধ, কর্মক্ষেত্র, হাসপাতাল বা জরুরি কাজ ছাড়া বাইরে বের হওয়া যাবে না। সবাইকে বাড়িতেই অবস্থানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে খাবারের দোকান ও ফার্মেসি ছাড়া সব শপিং মল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে সৌদি সরকার। রোববার (১৫ মার্চ) দেশটির সরকার এ নির্দেশ দেয়। তবে রেস্তোরাঁ ও ক্যাফেতে খাবার পরিবেশন নিষিদ্ধ করলেও বাইরে খাবার সরবারহের অনুমতি দেয়া হয়েছে।
মহামারি করোনাভাইরাসে চীন ও ইতালির পর সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরান। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে ইরানে একদিনে আরও ১১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৭২৪ জনে। এছাড়া দেশটিতে করোনা আক্রান্তের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৯৩৮ জনে।
এমএসএইচ