ফিলিস্তিনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৭, জুমা বন্ধ
ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের বেথেলহেম শহরে ৭ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে সেখানকার ২৭টি মসজিদে জুমার নামাজ আদায় না করার নির্দেশ দিয়েছে দেশটির ওয়াকফ মন্ত্রণালয়। এছাড়া বেথেলহেম ও জেরিকো শহরে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।
ফিলিস্তিনের স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৭ জনের মধ্যে চারজন বেথেলহেমের বিট জালা এলাকার একটি হোটেল থেকে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তারিফ আশুর জানান, ফিলিস্তিনে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া বেথেলহেমের ওই হোটেলের ২১ জন কর্মীর নমুনা সংগ্রহ করেছেন চিকিৎসকরা। করোনাভাইরাস পরীক্ষায় তাদের অধিকাংশের ফল নেগেটিভ এসেছে। তবে তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন সন্দেহজনক করোনায় আক্রান্ত। সংক্রমণের বিষয়ে নিশ্চিত হতে আরও পরীক্ষার জন্য কিছু নমুনা ইসরায়েলের ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) বেথেলহেমে এক সংবাদ সম্মেলনে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মে কিলা বলেন, ইসরায়েলের টেল হাসোমার হাসপাতালের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে করোনাভাইরাস পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে।
আগামী দুই সপ্তাহের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ ও গির্জা বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়া জনসমাগম এড়াতে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের বেশ কয়েকটি শহরের খেলা স্থগিত রেখেছে ফুটবল ফেডারেশন।
এদিকে বেথেলহেমের ২৭টি মসজিদে জুমার নামাজ আদায় না করার ঘোষণা দিয়েছে ফিলিস্তিনের ওয়াকফ মন্ত্রণালয়। সেই সঙ্গে চার্চ ফেডারেশনও ঘোষণা দিয়েছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত শহরের সব গির্জা বন্ধ রাখতে হবে।
গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহানে প্রথমবারের মতো ধরা পড়ে করোনাভাইরাস। এরপর অন্তত ৮০টির বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বাণিজ্যিক প্রতিদ্বন্দ্বী চীনে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৮০ হাজার ৫৫২ জন, মারা গেছেন তিন হাজারেরও বেশি মানুষ।
চীনের পর সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত দক্ষিণ কোরিয়ায়। দেশটিতে অন্তত ৬ হাজার ২৮৪ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে, মারা গেছেন ৪২ জন। মৃত্যুর সংখ্যায় দ্বিতীয় অবস্থানে ইউরোপের দেশ ইতালি। দেশটিতে এ পর্যন্ত অন্তত ১৪৮ জন মারা গেছেন, আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৮৫৮ জন।
এছাড়া, করোনাভাইরাসের তাণ্ডব চলছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানেও। দেশটিতে এ পর্যন্ত অন্তত সাড়ে তিন হাজার মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, মারা গেছেন ১০৭ জন। মৃতদের মধ্যে রয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা পরিষদের শীর্ষ সদস্য মোহাম্মদ মীর মোহাম্মদী, ভ্যাটিকান সিটিতে ইরানের সাবেক রাষ্ট্রদূত হাদি খোসরো শাহী, সিরিয়ায় নিযুক্ত সাবেক রাষ্ট্রদূত হোসেইন শাইখলইসলাম। আক্রান্ত হয়েছেন দেশটির উপ-স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইরাজ হারিরছিও।
ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ফার্স জানিয়েছে, দেশটির পার্লামেন্টের প্রায় আট শতাংশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত। করোনার কারণে দেশটির সরকারি কর্মকর্তাদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে এবং পার্লামেন্ট অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। পাশাপাশি, বিভিন্ন শহরে জুমার নামাজও বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে করোনাভাইরাসের প্রকোপ থেকে ছাড় পায়নি যুক্তরাষ্ট্রও। দেশটিতে পর্যন্ত প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আক্রান্ত ১৯টি রাজ্যের দুই শতাধিক মানুষ।
এমএসএইচ/এমএস