করোনায় ‘মন্দের ভালো’ ট্যুর প্যাকেজে অভূতপূর্ব ছাড়
করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে বড় সংকটে পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। সবচেয়ে বড় ধসের মুখে পর্যটন ও বিমান চলাচল খাত। ভাইরাসের ভয়ে ভ্রমণ বাতিল করছেন অসংখ্য পর্যটক। যাত্রী চাহিদা কমে যাওয়ায় ফ্লাইট কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে বেশিরভাগ এয়ারলাইন্স। তবে সংকটকালে একেবারে হাত-পা গুটিয়ে বসে নেই কেউ। যাত্রী আকর্ষণ বাড়াতে ভ্রমণ প্যাকেজে অভূতপূর্ব ছাড় দিচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
গ্রাহকদের পছন্দ ও বিভিন্ন হলিডে প্যাকেজের দরের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করেছে ভ্রমণসহায়ক প্রতিষ্ঠান ট্রাভেলসুপারমার্কেট। তাদের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, করোনা সংকটের মধ্যে ভ্রমণ প্রতিষ্ঠানগুলো যেহারে ছাড় দিয়েছে তা আগে কখনোই দেখা যায়নি, অদূর ভবিষ্যতেও দেখা যাবে কি না সন্দেহ!
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ২ মার্চ পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, বিশ্বের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র গ্রিসের বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণ প্যাকেজের দর কমে গেছে ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত, থাইল্যান্ডে ২৫ শতাংশ, সেন্ট লুসিয়ায় ২৪ শতাংশ, তুরস্কে ২১ শতাংশ ও স্পেনে প্রায় ১৩ শতাংশ পর্যন্ত।
বিশাল ছাড় দিচ্ছে এয়ারলাইনগুলোও। হেডফরপয়েন্টস ডটকমের সম্পাদক রব বারজেস বলেন, বর্তমানে স্বল্প দূরত্বের ইউরোপীয় ফ্লাইটগুলোতে ছাড় চলছে। কখনও বিজনেস ক্লাসে অল্প দূরত্বে না গেলে এটাই সুযোগ। হয়তো এর চেয়ে সস্তায় ভ্রমণের সুযোগ আর নাও মিলতে পারে।
‘উদাহরণস্বরূপ বর্তমানে আমস্টারডাম, কোলোন, ভেনিস, ভিয়েনাসহ অন্যান্য শহর থেকে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের ফিরতি ফ্লাইটে বিজনেস ক্লাসের টিকিট বিক্রি হচ্ছে ১৫০ পাউন্ডেরও নিচে। সাধারণত এর দাম ৩০০ পাউন্ডের মতো।’
তিনি বলেন, খুবই স্বল্প মূল্যে আপনি বিমানবন্দরের লাউঞ্জ অ্যাক্সেস, ফাস্ট-ট্র্যাক নিরাপত্তা, অগ্রাধিকার বোর্ডিং, বিমানের মাঝামাঝি খালি আসন, ফ্রি খাবার ও শ্যাম্পেইন পাচ্ছেন। পাশাপাশি বড় অংকের ‘অ্যাভিওস পয়েন্টও’ ফেরত পাবেন।
বিমান ভ্রমণ সহায়ক ওয়েবসাইট ‘গড সেভ দ্য পয়েন্টস’র পরিচালক গিলবার্ট অট বলেন, করোনার কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ফলে সাধারণভাবে যেসব ফ্লাইট ভর্তি হয়ে যেত, সেগুলোর প্রতিটিতে ৫০-৬০টি সিট খালি যাচ্ছে।
তিনি জানান, মাত্র ১ হাজার ২০০ পাউন্ড মূল্যে লন্ডন-যুক্তরাষ্ট্র বিজনেস ক্লাসে যাওয়া-আসা, সঙ্গে হোটেলে তিন-চার রাত কাটানোর অফার দিচ্ছে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ। ভার্জিন আটলান্টিক ইকোনমি ক্লাসের সর্বনিম্ন মূল্যের চেয়েও সস্তায় ফ্ল্যাট-বেডে যুক্তরাষ্ট্র যাওয়া-আসার সুযোগ দিচ্ছে।
ব্রিটিশ এয়ারওয়েজে প্যারিস থেকে যুক্তরাষ্ট্র- যাত্রা শুরু করলে ছাড় আরও বেশি। গিলবার্টের দেয়া তথ্যমতে, প্যারিস থেকে লন্ডন হয়ে পূর্ব উপকূলে গেলে বিজনেস ক্লাসে খরচ পড়বে ৮৫০ থেকে ৯০০ পাউন্ডের মতো।
শুধু স্বল্প দূরত্বেই নয়, দীর্ঘ ভ্রমণেও চমৎকার ছাড় রয়েছে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ। বারজেস বলেন, লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলগুলোতেও দারুণ মূল্যছাড় চলছে। কিংসটন, মেক্সিকো সিটি, গ্রান্ড কেম্যান, নাসাউ- সবখানেই ২০১৯ সালের তুলনায় অনেক কম খরচে যাওয়া যাচ্ছে।
লাতিন আমেরিকায় সাধারণ সময়ে বিজনেস ক্লাসে খরচ হয় ১ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ২০০ পাউন্ড, চাহিদা বাড়লে খরচ বাড়ে আরও অন্তত ২০০ পাউন্ড। ক্যারিবিয়ানে ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ পাউন্ড পর্যন্ত খরচ হয়, চড়া চাহিদার সময় খরচ আরও ৫০০ পাউন্ড বাড়তে পারে।
বর্তমানে এসব এলাকার মধ্যে কিংস্টনে ১ হাজার ৩১৪, মেক্সিকো সিটিতে ১ হাজার ৩৯৭, গ্রান্ড কেম্যানে ১ হাজার ৫৯১, সেন্ট লুসিয়ায় ১ হাজার ৫০৯, নাসাউতে ১ হাজার ৫৯১ ও রিও ভ্রমণে মাত্র ১ হাজার ৭৮০ পাউন্ড খরচ হবে।
সূত্র: ডেইলি মেইল
কেএএ/জেআইএম