ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

উহানে করোনা আক্রান্ত আরেক চিকিৎসকের মৃত্যু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৩:৩৫ পিএম, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০

চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন আরও এক চিকিৎসক। শিয়া সিসি নামে ২৯ বছর বয়সী এই নারী গত ১৯ জানুয়ারি থেকে চিকিৎসাধীন ছিলেন। স্থানীয় সময় রোববার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে মারা যান তিনি।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানায়, শিয়া সিসি উহানের শিয়েহে জিয়াংবেই হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার পর অবস্থার অবনতি হলে তাকে উহান বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝংনান হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন।

গত বৃহস্পতিবার উহানে পেং ইনহুয়া নামে এক চিকিৎসক করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এর আগে চলতি মাসেই চিকিৎসক লি ওয়েনলিয়াংয়ের মৃত্যুতে দেশটিতে ব্যাপক ক্ষোভ ও সমালোচনা সৃষ্টি হয়। এ চিকিৎসক করোনা সংকট শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই সার্সের মতো একটি ভাইরাসের সংক্রমণ বিষয়ে সহকর্মীদের সাবধান করেছিলেন। কিন্তু তখন তাকে গুজব ছড়ানোর অভিযাগে শাসিয়ে দেয়া হয় এবং জোরপূর্বক একটি কাগজে সই করানো হয়। পরে নিজ কর্মস্থলে আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে দিতে নিজেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান এই চিকিৎসক।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জিনপিং সরকার দেশটির মেডিকেল কর্মীদের সঙ্গে অমানবিক ব্যবহার করছে বলে দাবি করেছে পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো। আর এ ঘটনা লুকোতেই বেইজিং প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে বলে দাবি তাদের। তারা জোরপূর্বক অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চিকিৎসক-নার্সদের কাজ করতে বাধ্য করলেও বিভিন্ন হৃদয়স্পর্শী ঘটনা প্রচার করে সেসব আড়াল করা চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সম্প্রতি চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় গাংশু প্রদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের অজুহাতে ১৪ নারী কর্মীর চুল কেটে দেয় একটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সরকারপন্থী সংবাদমাধ্যমগুলো এ ঘটনাকে নারী কর্মীদের সাহসিকতা ও আত্মত্যাগ হিসেবে প্রচার করলেও এ নিয়ে শুরু হয় ব্যাপক সমালোচনা।

পশ্চিমা গণমাধ্যমের দাবি, সম্প্রতি সাত শীর্ষ নেতাকে ডেকে হৃদয়স্পর্শী গল্পগুলো বেশি করে সামনে আনার পরামর্শ দিয়েছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এরপর থেকেই সরকারপন্থী গণমাধ্যমগুলোতে এ ধরনের সংবাদের হিড়িক পড়ে যায়। ‘সরকারের কাজ’-এ সাহায্যের জন্য করোনাভাইরাসের উৎস হুবেই প্রদেশে নামানো হয় তিন শতাধিক সাংবাদিক। সেই থেকে উহান, লুইয়াং, এমনকি দক্ষিণাঞ্চলীয় গুয়াংঝৌ শহরেও ভাইরাসবিরোধী লড়াইয়ে কর্মরতদের ব্যক্তিগত ঘটনাগুলো প্রচার হতে থাকে সমান তালে।

wuhan

এসময় সামনে আসে অন্তঃসত্ত্বা নার্সের দায়িত্বপালন, স্ত্রীর সন্তান প্রসবের সময় জনসেবায় মগ্ন কর্মীর মর্মস্পর্শী ঘটনাগুলো। তবে এসবের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।

বলা হচ্ছে, হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে মেডিকেল কর্মীদের প্রকৃত অবস্থা খুবই খারাপ। শহরটিতে অন্তত ১ হাজার ১০০ মেডিকেল কর্মী ভাইরাস আক্রান্ত হয়েছেন। নেই প্রাণঘাতী ভাইরাস মোকাবিলার জিনিসপত্রও। স্থানীয় এক চিকিৎসক জানান, তারা ভাইরাসপ্রতিরোধী স্যুট জোড়া লাগাতে টেপ ব্যবহার করছেন, আর জুতা ঢাকতে কাজে লাগাতে হচ্ছে পলিথিনের ব্যাগ।

এর মধ্যে উহানে এক নার্স গর্ভপাত হওয়ার মাত্র ১০ দিনের মাথায় ফের কাজে যোগ দেয়ার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় তোলে। অনেকেই এটিকে ‘অমানবিকতার বিজ্ঞাপন’ দাবি করে এ ধরনের ‘ব্যর্থ প্রোপাগান্ডা’ ছড়ানো বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।

হুবেই স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শনিবার করোনাভাইরাসে প্রদেশটিতে আরও ৯৬ জন মারা গেছেন। সবমিলিয়ে সেখানে করোনায় ২ হাজার ৩৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদিন প্রদেশটিতে আরও ৬৩০ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। সব মিলিয়ে হুবেইয়ে ৬৪ হাজার ৮৪ জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়েছে।

এ পর্যন্ত চীনে করোনাভাইরাসে মারা গেছেন মোট ২ হাজার ৪৪২ জন। এছাড়া চীনের মূল ভূখণ্ডের বাইরে মারা গেছেন আরও ২০ জন। এর মধ্যে ইরানে ছয়জন, জাপানে তিনজন, দক্ষিণ কোরিয়ায় চারজন এবং হংকং-ইতালিতে দু’জন করে মারা গেছেন। এছাড়া তাইওয়ান, ফিলিপাইন ও ফ্রান্সে একজন করে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হয়েছে। বিশ্বব্যাপী করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৮ হাজার ৭২৪ জন।

সূত্র: সিএনএন

কেএএ/জেআইএম