জীবাণু অস্ত্র বানাতেই করোনা তৈরি, খোঁজ ৪০ বছর আগের উপন্যাসে
মহামারি করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত সতের শতাধিক মানুষ মারা গেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন আরও ৭১ হাজার। চীনের মধ্যাঞ্চলের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানের একটি বাজার থেকে উৎপত্তির পর ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের পাঁচ মহাদেশে। এবার প্রশ্ন উঠেছে, বায়োলজিক্যাল অর্থাৎ জীবাণু অস্ত্র বানাতেই নাকি ভাইরাসটি তৈরি করেছিল চীন।
এমন প্রশ্ন ওঠার নেপথ্যে রয়েছে ১৯৮১ সালে প্রকাশিত একটি রহস্য উপন্যাস। সেই উপন্যাসে ‘উহান-৪০০’ নামে একটি ভাইরাসের প্রসঙ্গ রয়েছে। ‘আইজ অব ডার্কনেস’ নামের ওই থ্রিলার উপন্যাসে লেখক ডিন কুনত্জ লিখেছেন, ‘বায়োলজিক্যাল উইপন প্রোগ্রামের’ আওতায় চীনের সামরিক গবেষণাগারে এ ভাইরাসটি তৈরি করা হয়।
অস্ত্র ছাড়াই প্রাণঘাতী কোনো ভাইরাসের মাধ্যমে শত্রুপক্ষকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্যই মূলত এসব ভাইরাস তৈরি করা হয়। জৈবিক বিষাক্ত পদার্থ কিংবা ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং ছত্রাকের মতো সংক্রামক অণুজীবের মাধ্যমে বায়োলজিক্যাল এসব অস্ত্র তৈরি করা হয় পাইকারি হারে মানুষ হত্যা কিংবা বিকলাঙ্গ করার উদ্দেশ্যে।
টুইটারে এক ব্যক্তি প্রথম ওই উপন্যাসের একাংশ পোস্ট করলে মুহূর্তেই তা ভাইরাল হয়ে যায়। উপন্যাসের ওই অংশটি দেখে স্তম্ভিত হয় ইন্টারনেট বিশ্ব। ড্যারেন অব প্লাইমাউথ নামের ওই টুইটার অ্যাকাউন্টে উপন্যাসের অংশবিশেষ পোস্ট করে লেখা হয়েছে, ‘আমরা অদ্ভুত এক পৃথিবীতে বাস করছি’।
টুইটারে উপন্যাসের যে ছবিটি প্রকাশিত হয়েছে তার কিছু অংশ লাল কালিতে চিহ্নিত করা। তাতে বলা হচ্ছে, ‘তারা (সামরিক বাহিনী) এটিকে উহান-৪০০ বলে, কারণ উহান শহরের ঠিক অদূরে তাদের আরডিএনএ গবেষণাগারে এটি তৈরি করা হয়েছিল এবং গবেষণাগারটিতে এটি ছিল মানুষের তৈরি অণুজীবের ৪০০তম কার্যক্রম।’
এ প্রসঙ্গে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে হংকংভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট। তাতে বলা হচ্ছে, ‘উপন্যাস আই অব ডার্কনেসে ক্রিশ্চিয়া ইভানস নামের একজন শোকাহত মা তার সন্তান ড্যানির খোঁজ করছিলেন। ছেলে মারা গেছে নাকি বেঁচে আছে তা জানতেন না তিনি। অবশেষে তিনি একটি বিষয় জানতে পেরে হতবাক হন।‘
মা হঠাৎ জানতে পারেন ছেলে দুর্ঘটনাবশত মানুষের তৈরি বিষাক্ত অণুজীবে আক্রান্ত হয়ে উহানের একটি সামরিক গবেষণাগারে আটকা রয়েছেন। উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি নামের ওই গবেষণাগার চীনের প্রথম সারির চারটি গবেষণাগারের একটি। সর্বোচ্চ স্তরের শ্রেণিবিন্যাসকৃত প্রাণঘাতী ভাইরাস নিয়ে সেখানে গবেষণা করা হয়।
প্রসঙ্গত, বিশ্বে বায়োলজিক্যাল যুদ্ধের শুরু হয়েছিল অনেক আগেই। এছাড়া প্রভাবশালী দেশগুলোতে এ অস্ত্র তৈরির ইতিহাসও বেশ পুরোনো। এ ধরনের যুদ্ধে অ্যানথ্রাক্স, ব্রুসেলোসিস, কলেরা, নিউমোনিক প্লেগ, টুলারেমিয়া, স্মলক্স, গ্ল্যান্ডার্সের মতো নানা ধরনের প্রাণঘাতী ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া একাধিকবার ব্যবহৃত হয়েছে।
It's a strange world we live in.#coronavirus #COVID19 #Wuhan pic.twitter.com/WkjbK4zGaW
— Darren of Plymouth (@DarrenPlymouth) February 16, 2020
মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে সক্ষম নতুন করোনাভাইরাস থেকে সৃষ্ট কোভিড-১৯ রোগে এখন পর্যন্ত চীনে ১ হাজার ৭৭০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চীনের বাইরে হংকং, তাইওয়ান, জাপান, ফিলিপাইন ও ফ্রান্সে একজন করে মোট পাঁচজন মারা গেছেন।
গোটা বিশ্বের জন্য করোনাভাইরাস এখন এক আতঙ্কের নাম। রোববার পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ৭১ হাজার ৪৩৫ জন। এর মধ্যে শুধু চীনেই আক্রান্তের সংখ্যা ৭০ হাজার ৫৪৮। চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১০ হাজার ৬১০ রোগী। বাণিজ্য, ব্যবসা আর পণ্য পরিবহনের গতি কমায় চীনসহ বিশ্ব অর্থনীতিও এখন করোনা আক্রান্ত।
এসএ/পিআর