করোনাকে ‘স্রষ্টার প্রতিশোধ’ মন্তব্য সিঙ্গাপুরের শিক্ষকের
সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিমদের ওপর নিপীড়ন চালানোর জন্য করোনাভাইরাস দিয়ে আল্লাহ প্রতিশোধ নিচ্ছেন বলে মন্তব্য করে বিপাকে পড়েছেন সিঙ্গাপুরের এক ধর্মীয় শিক্ষক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এই মন্তব্য করার জেরে তার বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ইসলামিক রিলিজিয়াস কাউন্সিল তদন্ত শুরু করেছে।
ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে ধর্মীয় শিক্ষক আব্দুল আল-হালিমের বিতর্কিত এই মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কে শানমুগাম। তিনি বলেন, এ ধরনের মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করা যেতে পারে। এটি নির্বোধের মতো। ফেসবুক পোস্টে আব্দুল আল-হালিম যে মন্তব্য করেছেন তা জাতিবিদ্বেষী উল্লেখ করে তদন্ত করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন তিনি।
গত ২৯ জানুয়ারি ফেসবুক পোস্টে আব্দুল হালিম বলেন, চীনারা মলমূত্র ত্যাগ করার পর ভালোভাবে শৌচকার্য সম্পন্ন করেন না এবং তারা মুসলিমদের মতো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নও থাকে না। এছাড়া জিনজিয়াংয়ে উইঘুর মুসলিমদের ওপর নিপীড়ন চালানোয় আল্লাহ করোনাভাইরাস দিয়ে চীনাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ গ্রহণ করছেন। তার মতে, এ কারণেই প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস চীনাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।
মন্ত্রী বলেছেন, কারও কাছ থেকে এ ধরনের মন্তব্য একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। যাকে ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে মনে করা হয় তার কাছ থেকে এমন জাতি বিদ্বেষী মন্তব্য কাম্য নয়। সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কে শানমুগাম বলেন, চীনাদের (সিঙ্গাপুরে বসবাসরত চীনারা-সহ) বিরুদ্ধে এ ধরনের মন্তব্য অগ্রহণযোগ্য এবং এটি মেনে নেয়া যায় না।
তিনি বলেন, অন্যান্য ধর্মীয় প্রচারকরা যখন এমন অগ্রহণযোগ্য মন্তব্য করেছেন, তখন তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সম্প্রতি এ ধরনের মন্তব্য করার কারণে দু'জন ধর্মীয় যাজককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। ওই শিক্ষকের পোস্টে যে মতামত প্রকাশ করা হয়েছে; তা মুসলিম সম্প্রদায়ের মতাদর্শের প্রতিনিধিত্ব করে না।
মন্ত্রী কে শানমুগাম বলেন, ধর্মের নামে অন্যকে আঘাত করার অনুমতি দেয় না ইসলাম। নভেল করোনাভাইরাস জাতীয়তা, বর্ণ কিংবা ধর্ম মেনে সংক্রমণ ঘটায়নি। আমরা চিন্তা-ভাবনা করে মতামত প্রকাশের জন্য সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের প্রতি সহমর্মিতা দেখানোর অনুরোধ করছি।
গত ৩১ ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে নতনু করোনাভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়ার পর দেশটিতে এখন পর্যন্ত প্রাণ গেছে ১০১৬ জনের। আক্রান্ত হয়েছেন ৪৩ হাজার ১০২ জন। এর বাইরে ফিলিপাইন এবং হংকংয়ে একজন করে মারা গেছেন।
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, চীন সরকার কমপক্ষে ১০ লাখ উইঘুর মুসলিমকে জিনজিয়াংয়ের আশ্রয় কেন্দ্রে আটকে রেখেছে। চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় এই প্রদেশে অন্তত এক কোটি সংখ্যালঘু উইঘুরের বসবাস। এর মধ্যে প্রায় ৪৫ শতাংশ তুর্ক মুসলিম। সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় নিপীড়ন এবং বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন এই মুসলিমরা।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য-সহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বিভিন্ন সময় চীন সরকারের বিরুদ্ধে জিনজিয়াংয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনে পদ্ধতিগত অভিযান চালানোর অভিযোগ করেছে।
সূত্র : ট্যুডে অনলাইন, নিউ স্ট্রেইট টাইমস।
এসআইএস/পিআর