চীন ফেরতদের জন্য সীমান্ত বন্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্র-অস্ট্রেলিয়া
করোনাভাইরাসের দ্রুত বিস্তার নিয়ন্ত্রণে বিশ্বের কয়েকটি দেশ চীন থেকে আগতদের ঠেকাতে সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে, সাম্প্রতিককালে চীনে অবস্থানরত কোনো বিদেশি ভ্রমণকারীকে তারা নিজ দেশে প্রবেশ করতে দেবে না। এর আগে, রাশিয়া, জাপান, পাকিস্তান এবং ইতালিসহ কয়েকটি দেশ একই ধরণের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে।
তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এ জাতীয় পদক্ষেপ না নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা ভালোর চাইতে ক্ষতি বেশি করবে। কেননা এতে তথ্য ভাগাভাগি, চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ এবং অর্থনীতির ক্ষতি হবে।
সীমান্ত পারাপারের আনুষ্ঠানিক স্থানগুলোতে স্ক্রিনিং ব্যবস্থা চালুর পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। তারা সতর্ক করে বলেছেন, সীমান্ত বন্ধ করে দিলে যাত্রীরা অনানুষ্ঠানিকভাবে বা অবৈধভাবে দেশে প্রবেশের মাধ্যমে ভাইরাসের বিস্তারকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
একের পর এক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করেছে চীন। যেসব দেশ তাদের ওপর এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা এনেছে সেসব দেশের সরকার, স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ উপেক্ষা করছে বলেও অভিযোগ করেছেন তারা।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনিং বলেছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে সুপারিশ করলেও যুক্তরাষ্ট্র ঠিক তার উল্টোদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে। যা কোন সদিচ্ছার পরিচয় নয়।
এদিকে, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা তিনশ ছাড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত ৩০৪ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। ২৭টি দেশে এই ভাইরাসে ১৪ হাজার ৫শ ৫১ জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
অনেক দেশই এই ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে চীন থেকে আগতদের ওপর অন অ্যারাইভাল ভিসা বন্ধ করে দিচ্ছে। নিউ ইয়র্কে এক ব্যক্তি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন কীনা তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।
অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যে প্রথমবারের মতো একজনের করোনাভাইরাসে আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। প্রথমবারের মতো স্পেনেও একজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের মধ্যাঞ্চলীয় হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনাভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ২৭টির মতো দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এই প্রাণঘাতী ভাইরাস।
বিশ্বব্যাপী করোনভাইরাসের এই প্রকোপ সার্সের রোগের প্রাদুর্ভাবকে ছাড়িয়ে গেছে। ২০০৩ সালে সার্স ভাইরাস ২৪টিরও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে নতুন ভাইরাসে মৃত্যুর হার সার্সের তুলনায় অনেক কম, যার ফলে কর্মকর্তারা বলছেন যে, এটি তেমন মারাত্মক নয়।
হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি, সরকারি পরিসংখ্যানগুলোতে আক্রান্তের সংখ্যা যা বলা হচ্ছে তার তুলনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কেন্দ্রস্থল উহান শহরে ৭৫ হাজার মানুষ সংক্রামিত হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে গত দুই সপ্তাহে যেসব বিদেশি নাগরিক চীন ভ্রমণে গেছেন তাদের সবার প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। যেসব মার্কিন নাগরিককে হুবেই প্রদেশ থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে তাদের ১৪ দিনের জন্য আলাদা করে রাখা হবে।
চীনের অন্যান্য অঞ্চল থেকে যারা ফিরে আসছেন তাদেরও দুই সপ্তাহ ধরে নিজেদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার অনুমতি দেওয়া হবে। শনিবার মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর বলেছে, ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যারা বিদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসবে, তাদের মধ্যে যাদেরকে পৃথক রাখা প্রয়োজন এমন এক হাজার মানুষের জন্য পেন্টাগন আবাসনের ব্যবস্থা করবে। ক্যালিফোর্নিয়া, কলোরাডো এবং টেক্সাসের চারটি সামরিক ঘাঁটির প্রতিটিতে ২৫০টি করে কক্ষ সরবরাহ করা হবে।
এদিকে অনেক দেশের সরকার চীন থেকে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে আনতে শুরু করেছে। এর মধ্যেই ৩শ জনেরও বেশি ভারতীয়কে উহান থেকে ফিরিয়া আনা হয়েছে। শনিবার তারা দিল্লিতে পৌঁছেছে, একই দিনে প্রায় ১শ জন জার্মান নাগরিক ফ্রাঙ্কফুটে পৌঁছেছেন।
থাইল্যান্ডও চীনের উহান শহর থেকে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে আনার প্রস্তুতি শুরু করেছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেস্কভ বলেছেন, রাশিয়া সোমবার ও মঙ্গলবার হুবেই প্রদেশ থেকে তাদের কয়েকশ নাগরিককে সরিয়ে নেবে। দেশটি চীনা নাগরিকদের জন্য ভিসামুক্ত ভ্রমণ বন্ধ করে দিয়েছে।
অপরদিকে, চীন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোকে ওষুধ সরবরাহের জন্য আহ্বান জানিয়েছে। ভিয়েতনাম এয়ারলাইন্স চীন, হংকং এবং তাইওয়ানের সমস্ত ফ্লাইট স্থগিত করেছে। কান্তাস, এয়ার নিউজিল্যান্ড, এয়ার কানাডা এবং ব্রিটিশ এয়ারওয়েজতাদের ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন চীনের প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে সমবেদনা জানিয়েছেন।
যুক্তরাজ্য ঘোষণা করেছে যে, তারা চীনের মূল ভূখণ্ড থেকে তাদের বেশ কয়েকজন বিদেশি কর্মকর্তাকে সরিয়ে নেবে।
রাশিয়া জানিয়েছে, স্বাস্থ্য পরীক্ষায় দুই চীনা নাগরিকের শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হওয়ায় তাদেরকে আলাদা করে রাখা হয়েছে। জার্মানি, ইতালি এবং সুইডেন ইউরোপে আরও কয়েকজনের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। চীন থেকে আসা সব ভ্রমণকারীর জন্য সীমানা বন্ধ করে দিয়েছে সিঙ্গাপুর।
টিটিএন/জেআইএম