ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

ফাঁসি বিলম্বিত করতে নির্ভয়ার ধর্ষকদের নানা কৌশল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৪:০৪ পিএম, ৩০ জানুয়ারি ২০২০

দু’দিন পর নির্ভয়ার ধর্ষকদের ফাঁসির দড়িতে ঝোলানোর দিনক্ষণ ঠিক থাকলেও আসামিদের নানা কৌশলে ওইদিন তা কার্যকর করা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। মামলার অন্যতম আসামি অক্ষয় ঠাকুর ফাঁসির সাজা মওকুফের জন্য সুপ্রিম কোর্টে কিউরেটিভ পিটিশন দায়ের করেছিলেন। বৃহস্পতিবার তার সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত।

এছাড়া সাজা মওকুফের জন্য পিটিশন দায়ের করেছেন আসামি মুকেশ সিংও। এর আগে, দেশটির প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দ মুকেশের প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ করে দেন। এই আসামির অভিযোগ, রাষ্ট্রপতি কোনও চিন্তা না করেই তার আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। এরপর গত বুধবার আরেক আসামি বিনয় শর্মাও রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন জানান।

বার্তা সংস্থা পিটিআই বলছে, রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদনে বিনয় শর্মা দাবি করেছেন, জেলে থাকাকালীন তাকে তীব্র মানসিক হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। তার অনুরোধ, রাষ্ট্রপতি সময় দিলে সেখানে উপস্থিত হয়ে মৌখিকভাবে পুরো বিষয়টি বোঝানোর সুযোগ পাবেন তার আইনজীবী।

আবেদনে বিনয় বলেছেন, ‘আমি এই আশা নিয়ে করুণার আবেদন করছি যে, আপনি আমার জীবনের গল্প শুনবেন। ২০১২ সালের ডিসেম্বরের ওই ভয়াবহ দিনের ঘটনা কীভাবে আমার জীবন চিরতরে বদলে দিয়েছিল তা বলার এটাই আমার শেষ সুযোগ। আমি আপনাকে সব বলতে চাই, যাতে মৃত্যুই আমার একমাত্র শাস্তি হওয়া উচিত কিনা তা নিয়ে আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।’

গত মাসেও ফাঁসির সাজা মওকুফের জন্য হিন্দু দেবদেবী ও দিল্লির দূষণের কারণ দেখিয়ে আবেদন করেছিলেন অক্ষয়। সেই আবেদনও খারিজ করে দিয়েছিলেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। এরপর আবারও আবেদন করলেন তিনি।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ফাঁসির হাত থেকে বাঁচতে শেষ মুহূর্তে এসে সবধরনের চেষ্টা চালাচ্ছেন নির্ভয়া ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের চার অপরাধী। তারা আইনজীবীদের দিয়ে বারবার সুপ্রিম কোর্টে বিভিন্নভাবে আবেদন করছেন। এই আবেদন হয়তো টিকছে না, কিন্তু আইনি পদ্ধতিতে বিষয়টি দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করছেন তারা।

এদিকে, বারবার ফাঁসি কার্যকরের দিন পেছানোয় দেশটিতে শুরু হয়েছে ব্যাপক সমালোচনা। নির্ভয়ার পরিবারের সদস্যরা এই বিষয়গুলোকে আসামিদের ‘মৃত্যুদণ্ড পেছানোর কৌশল’ বলে মন্তব্য করেছেন। নির্ভয়ার মায়ের অভিযোগ, ঠিকমতো সব কিছু হলে অনেক আগেই দোষীদের ফাঁসি হয়ে যেত। সরকারের অবহেলার কারণেই তারা এখনও বেঁচে আছে।

এ ধরনের স্পর্শকাতর মামলার জন্য আইনে কিছু পরিবর্তন আনতে সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। তাদের মতে, এই ধরনের মামলায় একবার দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর বারবার বিভিন্ন উপায় প্রাণভিক্ষার আর্জি জানিয়ে ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া যাতে দীর্ঘায়িত করতে না পারে সেদিকে সর্বোচ্চ আদালতের নজর দেয়া উচিত।

গত ১৭ জানুয়ারি ভারতের বহুল আলোচিত মেডিকেল শিক্ষার্থী নির্ভয়া ধর্ষণ ও হত্যায় অভিযুক্ত চার আসামির সর্বোচ্চ সাজা কার্যকরের নতুন সময় ঘোষণা করে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। ওইদিন আসামি মুকেশ সিংয়ের প্রাণভিক্ষার আবেদন দেশটির রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ নাকচ করে দেয়ার পর আগামী ১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৬টায় অপরাধীদের ফাঁসি কার্যকর করা হবে বলে জানানো হয়।

ভারতের আইনে প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগে অন্তত ১৪ দিনের নোটিশ দেয়ার বিধান রয়েছে। সেই হিসাবে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি নয়াদিল্লির তিহার কারাগারে অভিযুক্তদের সাজা কার্যকর হবে। এর আগে দিল্লি হাইকোর্ট জানিয়েছিলেন, নির্ভয়া ধর্ষণকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত বিনয় শর্মা, মুকেশ কুমার, অক্ষয় কুমার সিংহ এবং পবন গুপ্তকে ২২ জানুয়ারি সকাল ৭টায় তিহার কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে।

উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যার পর দিল্লির একটি হলে সিনেমা দেখে বন্ধুর সঙ্গে বাসে করে ফিরছিলেন প্যারামেডিক্যালের ওই ছাত্রী। যাত্রী কম থাকায় বাসের চালক-সহকারীসহ অন্তত ছয়জন মিলে নির্ভয়ার বন্ধুকে পিটিয়ে হাত-পা বেঁধে বাসের পেছনের দিকে ফেলে রেখে মেয়েটিকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে তারা। পরে দু’জনকে দিল্লির একটি সড়কের পাশে বাস থেকে ছুড়ে ফেলা হয়।

গুরুতর আহত প্যারামেডিকেলের ওই শিক্ষার্থীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর পাঠায় দেশটির সরকার। সেখানে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর ২৬ ডিসেম্বর মারা যায়। এ ঘটনায় ভারতজুড়ে তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয়। নির্ভয়ার হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ সাজার দাবিতে দেশটির লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে দিনের পর দিন বিক্ষোভ করতে থাকে।

নির্ভয়া হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি বাসচালক রাম সিং কারাগারে বন্দি অবস্থায় মারা যান। এছাড়া দোষী সাব্যস্ত আরেক ধর্ষক অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় আদালতের নির্দেশে তাকে তিন বছরের জন্য কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়। ২০১৫ সালে সাজার মেয়াদ শেষে এই তরুণ মুক্তি পাওয়ার পর আবারও ভারতে তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে দেশটির ধর্ষণের সাজার আইন পরিবর্তন করে ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সীদেরও ‘প্রাপ্তবয়স্ক’ হিসেবে বিবেচনা করার বিধান করা হয়।

২০১৩ সালে দেশটির দ্রুত বিচার আদালত বাকি চার ধর্ষকের সর্বোচ্চ সাজা ঘোষণা করেন। পরে দেশটির হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগও ওই সাজা বহাল রাখেন।

সূত্র: এনডিটিভি।

কেএএ/এসআইএস/এমকেএইচ