করোনাভাইরাস, উহানে সেনাবাহিনীর ৪৫০ মেডিকেল স্টাফ মোতায়েন
চীনে করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত এক হাজার ২৮৭ জন আক্রান্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এদের মধ্যে ৪১ জনই মারা গেছেন। এমন অবস্থায়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে উহান শহরে সেনাবাহিনীর ৪৫০ জন মেডিকেল স্টাফ মোতায়েন করা হয়েছে। খবর এএফপির।
ওই মেডিকেল স্টাফদের মধ্যে অনেকেরই সার্স এবং ইবোলার প্রাদুর্ভাব মোকাবিলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। শুক্রবার রাতে সামরিক বিমানে করে উহানে পৌঁছেছেন তারা। ইতোমধ্যেই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাজার হাজার মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
শিনহুয়া নিউজ এজেন্সির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেসব হাসপাতালে এই ভাইরাসে আক্রান্তদের বেশিরভাগ চিকিৎসা নিচ্ছেন সেখানেই ওই সামরিক স্টাফদের পাঠানো হবে।
গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে হুবেই প্রদেশের রাজধানী শহর উহানে প্রথম ফ্লু টাইপের এই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে। বর্তমানে এই ভাইরাস এতো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে যে হাসপাতালগুলোতে সংকট তৈরি হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে নতুন হাসপাতাল নির্মাণ করছে কর্তৃপক্ষ। আগামী ১০ দিনের মধ্যে এক হাজার শয্যাবিশিষ্ট নতুন একটি হাসপাতাল প্রস্তুত হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছে কর্তৃপক্ষ।
শিনহুয়ার ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামরিক বাহিনীর ওই মেডিকেল টিমের সদস্যদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা, সংক্রামক, হাসপাতালে সংক্রামক নিয়ন্ত্রণ ও নিবির পর্যবেক্ষণ বিষয়ে অভিজ্ঞরা রয়েছে।
হুবেই এর গভর্নর জিয়াং চাওলিয়াং শুক্রবার এক বৈঠকে বলেন, প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করবে উহান কর্তৃপক্ষ। এদিকে হুবেই প্রদেশে নতুন করে করোনা ভাইরাসে আরও ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এমন এক সময় এই ভাইরাসটি দেখা দিল যখন চীন নববর্ষ উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। নববর্ষের ছুটিতে চীনের কোটি কোটি মানুষ দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে ঘুরতে যায়। সারাদেশেই উৎসবের পরিস্থিতি বিরাজ করে।
এমন অবস্থায় এই ভাইরাস আরও বেশি ছড়িয়ে পরতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সে কারণে নববর্ষের অনেক অনুষ্ঠান বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করায় চীনা কর্তৃপক্ষ উহান থেকে চলাচলকারী সকল যানবহন বন্ধ ঘোষণা করেছে। হুবেই প্রদেশে ভ্রমণে কড়া সতর্কতা জারি করেছে দেশটির সরকার।
প্রদেশের উহান শহরে সব বাস, মেট্রো এবং ফেরি চলাচল বাতিল করা হয়েছে। একই সঙ্গে ওই শহর থেকে ছাড়া সব বিমানের ফ্লাইট ও রেল সেবাও বাতিল হয়েছে। ইঝু শহরে রেল স্টেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে ইনসি শহরে সব বাস সেবা বাতিল করা হয়েছে।
যারা উহান শহর থেকে ফিরেছেন তাদের অন্তত ১৪ দিন বাড়িতে থাকার নির্দেশ দিয়েছে বেইজিং ও সাংহাই কর্তৃপক্ষ। এই ভাইরাস যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্যই এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
উহান শহরে প্রায় ৮৯ লাখ মানুষের বসবাস। মূলত ওই শহরে প্রাদুর্ভাব ঘটার পর ভাইরাসটি রাজধানী বেইজিংসহ অন্যান্য প্রদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। এছাড়া প্রতিবেশী জাপান, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, ম্যাকাও এবং যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়াতেও এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে।
এখন ইউরোপেও ছড়িয়ে পড়ছে এই ভাইরাস। ফ্রান্সে তিনজনের এই ভাইরাসে আক্রান্তের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। শুক্রবার রাতে ফ্রান্সের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, বোরডেক্সে প্রথম একজন এবং প্যারিসে দু'জনের এই ভাইরাসে আক্রান্তের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলো হলো জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট। সেভার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (সার্স) ঘরানার এই ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়।
টিটিএন/জেআইএম