পুরোনো সার্সেই নতুন ভাইরাসের প্রতিষেধক পাওয়ার আশা
চীনে ছড়িয়ে পড়া নতুন ধরনের করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মার্কিন বিজ্ঞানীরা। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চীনে ইতোমধ্যে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। বলা হচ্ছে চীনের অন্তত ৫০০ মানুষ এ ভাইরাসে আক্রান্ত এবং ইতোমধ্যে আরও ৫টি দেশে এ ভাইরাস পৌঁছেছে।
আশঙ্কা করা হচ্ছে এ দেশগুলো হলো- যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো, কলোম্বিয়া, যুক্তরাজ্য ও অষ্ট্রেলিয়া। আর এভাবে যদি ভাইরাসটি ছড়াতে থাকে তবে তা মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নিউমোনিয়া-সদৃশ এ ভাইরাসটি নতুন এক ধরনের করোনাভাইরাস।
নতুন এ ভাইরাস নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বুধবার এক দফা বৈঠক করলেও বর্তমান পরিস্থিতিকে তারা এখনও জরুরি অবস্থা বলে উল্লেখ করেনি।
২০০২ সালে চীনে একবার সার্স ভাইরাসের ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। ওই সময় সার্স-আক্রান্ত ৮ হাজার ৯৮ জনের মধ্যে ৭৭৪ জন মারা যায়। নতুন ভাইরাসের জিনগত বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মানবদেহের জন্য যেকোনো করোনা ভাইরাসের তুলনায় এটি সার্সের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি মেলে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের মধ্যে কারও কারও নিউমোনিয়া হয় এবং তাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা ভয়াবহ আকার ধারণ করে।
সে সময় সার্সের প্রতিষেধক তৈরির জোর চেষ্টা শুরু করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। তবে ধীরে ধীরে সার্সের প্রকোপ কমে যেতে শুরু করলে হারিয়ে যায় সে গুরুত্ব। সময়ের ব্যবধানে কমে যায় ওই প্রতিষেধক তৈরির আগ্রহ ও বিনিয়োগও। যেহেতু করোনা ভাইরাসের তুলনায় এটি সার্সের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি মেলে তাই এখন আশা করা হচ্ছে, সার্সের সময় প্রতিষেধক তৈরির যে চেষ্টা শুরু হয়েছিল সেটিই আবার নতুন করে শুরু হবে এবং নতুন এ ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে সক্ষম হবেন বিজ্ঞানীরা।
এ কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক চিকিৎসক বলছেন, তবে এ কাজের জন্য সময় লাগবে। সেফটি টেস্টিং পর্যন্ত যেতে হয়তো কয়েক বছর সময় লেগে যেতে পারে। তিনি আরও বলছেন, প্রতিবার যখন এ ধরনের কোনো ভাইরাসের আবির্ভাব ঘটে, বিজ্ঞানীদের মধ্যে ভ্যাকসিন তৈরির একটা চেষ্টা শুরু হয়, তারপর ভাইরাসের প্রকোপ কমতে থাকলে ধীরে ধীরে সে চেষ্টাও সীমিত হয়ে পড়ে।
সার্সের মতো করোনা ভাইরাসকে প্রতিরোধে সক্ষম এমন একটি ভ্যাকসিনের কথা ২০১৭ সালের একটা গবেষণাপত্রে জানিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের একদল গবেষক। এর উৎপাদনও শুরু হয়েছিল এক পর্যায়ে, কিন্তু ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে পাঠানোর জন্য পর্যাপ্ত তহবিল পাওয়া যায়নি।
ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কারের চেষ্টায় বিজ্ঞানীদের কাজের গতিও বেড়েছে। সার্সের সময় দেখা যায় ভাইরাস সনাক্ত ও বিন বিন্যাসে প্রায় একবছর সময় লেগে গিয়েছিল। এরপর যখন এলো মার্স তখন কয়েক মাসের মধ্যে ওই কাজ হলো। আর এবার নতুন এই ভাইরাসের বেলায় কযেকদিনের মধ্যে ওই কাজ সেরে ফেললেন বিজ্ঞানীরা।
এনএফ/জেআইএম