অস্ট্রেলিয়ায় দাবানলে ৫০ কোটি প্রাণীর মৃত্যু
অস্ট্রেলিয়ায় ভয়াবহ দাবানলে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৫০ কোটি প্রাণী প্রাণ হারিয়েছে। গত সেপ্টেম্বর থেকে দেশটিতে এই দাবানল শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশটিতে দাবানলে ১৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। হাজার হাজার মানুষ দাবানলপ্রবণ এলাকা থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছেন। দাবানলের ভয়াবহতার মাত্রা এতটাই চরম আকার ধারণ করেছে যে, নিউজিল্যান্ডের আকাশও কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে গেছে।
ইউনিভার্সিটি অব সিডনির বাস্তুবিদদের আশঙ্কা, এই দাবানলে প্রায় ৪৮০ মিলিয়ন (৪৮ কোটি) প্রাণী মারা গেছে। এদের মধ্যে অন্তত ৮ হাজার কোয়ালা রয়েছে।
দেশটির নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রায় এক কোটি একর ভূমির গাছপালা দাবানলে পুড়ে গেছে। অস্ট্রেলিয়ায় মোট কোয়ালার প্রায় ৩০ শতাংশের আবাস নিউ সাউথ ওয়েলসে। কর্মকর্তাদের আশঙ্কা এসব কোয়ালার অধিকাংশই দাবানলে মারা গেছে।
অস্ট্রেলিয়ার প্রকৃতি সংরক্ষণ পরিষদের বাস্তুবিদ মার্ক গ্রাহাম সংসদে বলেছেন, দাবানলের লেলিহান শিখা থেকে পালিয়ে বাঁচার মতো দৌড়ের গতি কোয়ালার নেই। দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ছে। আগুনের লেলিহান শিখায় গাছে থাকা পশু-পাখির বেশি প্রাণহানি ঘটছে।
তিনি বলেন, নিউ সাউথ ওয়েলসের এত বিশাল এলাকা এখনও ভয়াবহ আগুনে পুড়ছে যে আমরা সম্ভবত পশু-পাখি, প্রাণীর মরদেহের অবশিষ্টাংশও খুঁজে পাবো না।
দেশটির বন্যপ্রাণী উদ্ধার, তথ্য ও শিক্ষা সার্ভিস নামের একটি বেসরকারি সংস্থার উদ্ধারকর্মীরা ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, এই সঙ্কটে তারা যে পরিমাণে প্রাণী পাওয়ার প্রত্যাশা করছেন, সেই পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে না। এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
স্বেচ্ছাসেবক ট্রেসি বার্গেস বলেন, আমাদের এখানে অসংখ্য আহত প্রাণী আসার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। আমাদের উদ্বেগের কারণ হলো, সম্ভবত দাবানলপ্রবণ এলাকার পশু-পাখি, প্রাণীরা বেঁচে নেই। তাসমান সাগরের কাছে অস্ট্রেলিয়ার বিশাল ভূখণ্ডজুড়ে ভয়াবহ দাবানল নিউজিল্যান্ডের বিশাল সাদা হিমবাহের জন্য নতুন করে হুমকি তৈরি করেছে। নিউজিল্যান্ডের বিশাল সাদা হিমবাহ কালো এবং বাদামি আকার ধারণ করেছে অস্ট্রেলিয়ার দাবানলের ধেয়ে আসা ধোঁয়ায়।
তাসমান হিমবাহের চূড়ায় উঠে এক পর্যটক একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছেন। এতে তিনি বলেছেন, আমরা এখানে ক্রাইস্টচার্চে পোড়া গন্ধ পাচ্ছি। তোমাদের জন্য চিন্তা হচ্ছে। নিউজিল্যান্ডের বিশাল বরফাচ্ছাদিত হিমবাহের প্রায় ৩ হাজার চূড়া বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে গলে গেছে। চলতি শতাব্দির শেষের দিকে এই হিমবাহ পুরোপুরি গলে যেতে পারে।
অস্ট্রেলিয়ায় ভয়াবহ এই দাবানলের সূত্রপাত হয়েছে গত সেপ্টেম্বরে। তখন থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় এক কোটি ২০ লাখ একর ভূমি পুড়ে গেছে। নববর্ষের প্রথম দিন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় এই দাবানলে প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ১৭ জন। নিউ সাউথ ওয়েলসের সড়ক পরিবহন মন্ত্রী অ্যান্ড্রু কনস্ট্যান্স আগুনের ভয়াবহতা নিয়ে টেলিভিশনে লাইভ স্বাক্ষাৎকার দেয়ার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েছেন।
বুধবার এবিসি নিউজকে স্বাক্ষাৎকার দেয়ার সময় তিনি বলেন, এটা ঠিক নয়। আমি গতকাল গ্রামীণ ফায়ার সার্ভিসের অন্তত চারজন কর্মীর সঙ্গে স্বাক্ষাৎ করেছি; যাদের বাড়ি-ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আমার সুন্দর প্রতিবেশিরা তাদের বাড়িঘর হারিয়েছে। এটা মেনে নেয়া অত্যন্ত কঠিন।
সূত্র : দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট।
এসআইএস/পিআর