ভারতে বিক্ষুব্ধ জনতার হাত থেকে পুলিশকে বাঁচালেন মুসলিম যুবক
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) বাতিলের দাবিতে ভারতের উত্তর প্রদেশের ফিরোজাবাদ শহরে বিক্ষোভ চলাকালীন বিক্ষুব্ধ জনতার হাত থেকে পুলিশ সদস্যকে রক্ষা করেছেন এক মুসলিম যুবক।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২০ ডিসেম্বর ফিরোজাবাদে বিক্ষোভ চলাকালীন অজয় কুমার নামে ওই পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে জখম করে বিক্ষুদ্ধ জনতা। এ সময় হাজী কাদের নামে এক ব্যক্তি এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করেন।
অজয় কুমার বলেন, বিক্ষুব্ধ জনতার হাত থেকে উদ্ধার করে আমাকে তার বাড়িতে নিয়ে যান হাজী কাদের। হাতের আঙুল ও মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছি। বাড়িতে নিয়ে গিয়ে কাদের আমাকে পানি ও তার কাপড় পরতে দেন এবং আশ্বাস দেন যে, আমি সম্পূর্ণ নিরাপদ। পরে তিনি আমাকে পুলিশ স্টেশনে পৌঁছে দেন।
তিনি আরও বলেন, হাজী কাদের দেবদূতের মতো এসে আমাকে বাঁচিয়েছেন। তিনি না আসলে আমাকে তারা মেরেই ফেলতো।
হাজী কাদের বলেন, বিক্ষুব্ধ জনতার হাতে মার খেয়ে গুরুতর জখম হন অজয় কুমার। আমি তাকে উদ্ধার করি। আমি তার নাম জানতাম না। মানবিক দিক থেকেই তাকে উদ্ধার করেছি।
উল্লেখ্য, ভারতের ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদী সরকার গত ১১ ডিসেম্বর পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় বিতর্কিত সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন পাসের পর দেশটিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। ২০১৪ সালে দেশটিতে ক্ষমতায় আসার পর এমন তীব্র বিক্ষোভ এবং বিরোধিতার মুখে প্রথমবারের মতো পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
নতুন এই আইন অনুযায়ী, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত, অর্থাৎ ২০১৫ সালের আগে প্রতিবেশী পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশ থেকে ‘ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার’ হয়ে যেসব অমুসলিম (হিন্দু, শিখ, খ্রিষ্টান, জৈন, পারসি ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা) ভারতে গেছেন তাদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেয়া হবে। তবে এ আইনে মুসলিম শরণার্থীদের ব্যাপারে একই ধরনের বিধান রাখা হয়নি।
ভারতে নাগরিকত্ব আইন সংসদে উত্থাপনের পর থেকেই এর বিরুদ্ধে প্রথমে দেশটির উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলোতে বিক্ষোভ শুরু হয়। ক্রমেই গোটা দেশে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে তাতে এখন পর্যন্ত ২৪ জন নিহত হয়েছেন।
চার মাস আগে আসামে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি চালু করে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার। আসামে বসবাসরত অবৈধ বাংলাদেশিদের শনাক্ত করতে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি বাস্তবায়ন করা হয়। গত ৩০ আগস্ট আসামের এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়।
এতে দেখা যায়, দেশটিতে নাগরিকত্বের জন্য তিন কোটি ৩০ লাখ মানুষ আবেদন করলেও চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়ে প্রায় ১৯ লাখ। বাদ পড়াদের ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ বলে দাবি করেছে ভারত।
এমএসএইচ/এমএস