ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

মোশাররফের পক্ষে লড়বে সরকার, ঘোষণা পাকিস্তানের অ্যাটর্নি জেনারেলের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৩:২২ পিএম, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯

রাষ্ট্রদ্রোহের দায়ে দোষী সাব্যস্ত পাকিস্তানের সাবেক সামরিক শাসক জেনারেল পারভেজ মোশাররফকে দেয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়কে অন্যায্য অভিহিত করে তার পক্ষে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছে ইমরান খানের সরকার। পারভেজ মোশাররফের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে সরকার তার পক্ষ নেবে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

গতকাল পাকিস্তানের তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ আদালতের একটি বেঞ্চ সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফের মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করে। গতকালই জরুরি বৈঠক ডেকে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী বিবৃতি দিয়ে এ রায়ের সমালোচনা করার পর আজ বুধবার ইমরানের সরকার পারভেজ মোশাররফের পক্ষ নেয়ার ঘোষণা দিল।

গতকাল রায় হওয়ার পর মধ্যরাতে পাকিস্তানের অ্যাটর্নি জেনারেল আনোয়ার মনসুর ও প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিশেষ তথ্য সহকারী ডা. ফিরদৌস আশিক আওয়ান এক যৌথ সংবাদ সম্মেলন ডাকেন। সেখানে অ্যাটর্নি জেনারেল আনোয়ার মনসুর বলেন, ‘আমি এ মামলায় আইনের পক্ষে লড়াই করবো, কোনো ব্যক্তির জন্য নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিশেষ আদালতের এই মামলায় সাবেক প্রেসিডেন্ট মোশাররফকে সুষ্ঠু বিচার পাওয়ার অধিকার দেয়া হয়নি। তারপর তার অনুপস্থিতিতে অভিযুক্তের কোনো বক্তব্য বা বিবৃতি না নিয়েই রায় ঘোষণা করা হয়েছে। মোশাররফ যখন দেশের বাইরে আইসিইউতে ভর্তি তখন তাড়াহুড়ো করে রায়ের বিষয়টি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।’

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘মোশাররফকে ৩৪২ অনুচ্ছেদের (সংবিধানের) অধীনে তার বক্তব্য রেকর্ড করা, সাক্ষ্য ও সাক্ষী উপস্থাপন এবং ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে রায় বাতিলের অনুরোধ রেকর্ড করার সুযোগ দেয়া হয়নি। তার আগেই কমিশনের (বিশেষ আদালত) বিচারকরা পদত্যাগও করেছেন।’

ইমরান সরকারের প্রধান এই কৌঁসুলি আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে কাউকে শাস্তি প্রদান নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠার সুযোগ নেই। কিন্তু এ মামলায় সংবিধানের অধীনে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করা হয়নি। একটি বিচার প্রক্রিয়া শুধু সুষ্ঠু হওয়াই উচিত নয় একই সঙ্গে তা যে সুষ্ঠু হচ্ছে এটা দৃশ্যমান হওয়াও উচিত।’

এদিকে পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আসিফ গফুর সামরিক বাহিনীর পক্ষে গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, ‘রাষ্ট্রদোহের দায়ে পারভেজ মোশাররফের মৃত্যুদণ্ডের ঘটনাটি পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর পদমর্যাদার জন্য বিরাট এক বেদনা ও কষ্টকর ব্যাপার।’

পারভেজ মোশাররফের রায়ের বিপক্ষে সামরিক বাহিনীর অবস্থান তুলে ধরে আসিফ গফুর বলেন, ‘একজন সাবেক সেনাপ্রধান, সশস্ত্র বাহিনী প্রধানদের কমিটির চেয়ারম্যান এবং পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট, যিনি ৪০ বছর দেশের সেবা করেছেন, দেশের হয়ে যুদ্ধে লড়েছেন, তিনি কোনোভাবেই দেশদ্রোহী হতে পারেন না।’

বিবৃতিতে আদালতের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলে আরও বলা হয়, ‘বিশেষ আদালত গঠন, আত্মরক্ষার মৌলিক অধিকারকে অস্বীকার, স্বতন্ত্র সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম গ্রহণ করা ও তাড়াহুড়ো মামলা শেষ করাসহ তার (পারভেজ মোশাররফ) বিচারের ক্ষেত্রে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া উপেক্ষা করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।’

বিবৃতি দেয়া হয় পাঞ্জাব প্রদেশের শহর রাওয়ালপিন্ডিতে অবস্থিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদর দফতরের ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারা এক বৈঠকে মিলিত হওয়ার পর। আদালত পারভেজ মোশাররফের মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়ার পরপরই সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা জরুরি ওই বৈঠকে বসে এমন বিবৃতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী প্রত্যাশা করে যে, ইসলামিক প্রজাতন্ত্রী পাকিস্তানের সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ন্যায়বিচার করা হবে।’ দেশটির ‘সেনা সমর্থিত’ সরকারের জন্য সামরিক বাহিনীর এমন বিবৃতিকে হুমকি হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।

পাকিস্তানের একটি বিশেষ আদালতের তিন সদস্যের বেঞ্চ আলোচিত মামলাটির যুক্তিতর্কের ওপর শুনানি শেষে গতকাল মঙ্গলবার যুগান্তকারী এ রায় দেন। ২০০৭ সালের ৩ নভেম্বর অবৈধভাবে সংবিধান স্থগিত করে জরুরি অবস্থা জারি করায় রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে তাকে এ সাজা দেয়া হলো।

পারভেজ মোশাররফ সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ১৯৯৯ সালে ক্ষমতা দখল করেন। ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি। ২০০৭ সালের নভেম্বরে দেশটির সংবিধান বাতিল করে জরুরি অবস্থা জারি করেন। তারপর বিক্ষোভ শুরু হলে অভিশংসনের ঝুঁকি এড়াতে ২০০৮ সালে পদত্যাগ করেন।

এসএ/এমএস