ভারতীয় গরুর দুধে সোনা আছে, বিদেশি গরু মা নয়, আন্টি : বিজেপি নেতা
গরুর দুধে ‘সোনা’র হদিস দিলেন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বর্ধমান শহরের টাউন হলে ‘ঘোষ এবং গাভীকল্যাণ সমিতি’র সভায় সোমবার তিনি দাবি করেন, ‘গরুর দুধে সোনার ভাগ থাকে। তাই দুধের রং হলুদ হয়।’
তার ব্যাখ্যা, ‘দেশি গরুর কুঁজের মধ্যে স্বর্ণনাড়ি থাকে। সূর্যের আলো পড়লে, সেখান থেকে সোনা তৈরি হয়।’ বিজেপির রাজ্য সভাপতির নতুন এই ‘তত্ত্ব’ শুনে দেশটির বিজ্ঞানী-বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশের চক্ষুচড়কগাছ। তাদের স্বীকারোক্তি, এমন ‘বৈজ্ঞানিক’ গবেষণা পৃথিবীর কোথাও হয়েছে বলে জানা নেই।
এর আগে উত্তরাখণ্ডের বিজেপি মন্ত্রী রেখা আর্য দাবি করেছিলেন, ‘গরুই একমাত্র পশু, যে শ্বাস গ্রহণের সময় শুধু অক্সিজেন গ্রহণ করে না, প্রশ্বাসের সঙ্গে তা পরিবেশে ফিরিয়েও দেয়।’ বিজেপি সাংসদ সাধ্বী প্রজ্ঞাও দাবি করেছিলেন, তিনি স্তনের ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। গোমূত্র পান করে আর পঞ্চগব্য গ্রহণ করে নিজেকে সারিয়ে তুলেছেন।
তাই বলে গরুর দুধে ‘সোনা?’ তিন বছর আগে গুজরাটের জুনাগড় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু বিশেষজ্ঞ গিরের চারশ’ গরুকে নিয়ে সমীক্ষার পর দাবি করেন, গোমূত্রে সোনা আছে। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি এবং বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের প্রধান বিএ গোলাকিয়া দাবি করেন, ‘ছয়টি প্রজাতির গরুর একশ’র বেশি মূত্রের নমুনা পরীক্ষা করে সোনার উপস্থিতি পেয়েছি। এই সোনা রয়েছে ক্লোরাইড যৌগ হিসেবে।’
কিন্তু গোদুগ্ধে সোনা পেয়েছেন কি? গোলাকিয়ার জবাব, ‘আমরা শুধু গোমূত্রের ব্যাপারটা বলতে পারব।’ পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্যবিকাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন (ডেয়ারি) তরুণ কুমার মাইতি বলেন, ‘গরুর দুধে অনেক কিছুই থাকে। তবে সোনা আছে বলে শুনিনি।’
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্কুল অব এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস’র অধিকর্তা তড়িৎ রায় চৌধুরীর কথায়, ‘পৃথিবীর কোথাও গরুর দুধের রাসায়নিক বিশ্লেষণে সোনা মিলেছে বলে জানা নেই।’ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের অধ্যাপক স্বপন চক্রবর্তীর টিপ্পনী, ‘গরুর দুধে যদি সোনা থাকত, তা নিয়ে তো কাড়াকাড়ি পড়ে যেত।’
ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের ফার্মাকোলজির শিক্ষক স্বপন জানার মন্তব্য, ‘বিজেপি আর বিজ্ঞান মেলানো কঠিন। তারা জানেন, গোদুগ্ধে কী আছে। অযথা এ সব বলে জনতাকে বিভ্রান্ত করছেন, অনেক বড় সমস্যা থেকে তাদের নজর ঘুরিয়ে দিতে।’
রাজ্যের প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের প্রতিক্রিয়া, ‘গরুর দুধে সোনার তত্ত্ব শুনে মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়।’ দিলীপ অবশ্য গরু নিয়ে আরও মত জানাতে ছাড়েননি। তার কথায়, ‘বিদেশ থেকে যে গরু আনা হয়, তা ‘হাম্বা’ আওয়াজ করে না। যে ‘হাম্বা’ ডাকে না, সে গরুই নয়। গোমাতা নয়, ওটা আন্টি। আন্টির পূজা করে দেশের কল্যাণ হবে না।’ আন্দবাজার।
এসআইএস/এমকেএইচ