ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

ছাত্রাবস্থায় জেল খাটেন নোবেলজয়ী অভিজিৎ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৪:৫০ পিএম, ১৫ অক্টোবর ২০১৯

অর্থনীতিতে সস্ত্রীক নোবেলজয়ী ভারতীয় বাঙালি বংশোদ্ভূত মার্কিন অধ্যাপক অভিজিৎ ব্যানার্জি যখন দিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন তখন ছাত্র আন্দোলন করতে গিয়ে জেল খেটেছিলেন তিনি। ভারতীয় এক সংবাদমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি নিজেই এমন কথা জানান।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ১৯৮৩ সালে জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সভাপতিকে বরখাস্ত করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাড়ি ঘেরাও করেন। তার জেরে অভিজিতসহ অনেকেকে গ্রেফতার করা হয়।

২০১৬ সালে জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রদ্রোহ বিতর্ক নিয়ে যে আন্দোলন হয়েছিল ঠিক তেমনই একটি আন্দোলন হয়েছিল ১৯৮৩ সালে। অভিজিৎ ব্যানার্জি তখন বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্র। উপাচার্যের বিরুদ্ধে সেই আন্দোলনে যোগ দিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে ১০ দিন তিহার জেলে ছিলেন তিনি।

হিন্দুস্তান টাইমসে ২০১৬ সালে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে অভিজিৎ ব্যানার্জি তিহারের জেলে থাকার সেই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেছিলেন, তাকে ও তার বন্ধুদের জেলে নানাভাবে অত্যাচার করা হয়েছিল। পেটানো হয়েছিল লাঠি দিয়ে। হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছিল। অবশ্য পরে তা প্রত্যাহার করা হয়।

১৯৮৩ সালের ওই দিন জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ঘেরাও করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ ছিল, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সভাপতিকে অনৈতিকভাবে অপসারণ করা হয়েছে।

অভিজিৎ সেই সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘গ্রেফতার করার পর তিহার জেলে নিয়ে পুলিশ আমাদের মারধর শুরু করে। আমাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ না আনা হলেও হত্যাচেষ্টাসহ একাধিক মামলা দায়ের করা হয়। পরে অবশ্য সেই অভিযোগ থেকে মুক্তি পেয়েছিলাম। তবে জেলে ১০ দিন বন্দি ছিলাম আমরা।’

সেই ঘটনা প্রসঙ্গে ২০১৬ সালের জেএনইউ-এর আন্দোলন সম্পর্কে অভিজিৎ বলেছিলেন, ‘ফের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নাক গলানোর চেষ্টা করছে সরকার।’ অভিজিতের কথায়, গ্রেফতার করার পর তখন পুলিশ তাদের বলেছিল, ‘আমরা বস। তোমরা চুপ থাকো, ভদ্রভাবে থাকো।’

২০১৬ সালে জেএনইউতে আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্রনেতা কানহাইয়া কুমার, উমর খালিদ, অনির্বাণ ভট্টাচার্যদের ক্যাম্পাসকে দেশদ্রোহীদের আখড়া বানানোর অভিযোগে জেলে পাঠানো হয়েছিল। তখন এক জাতীয় সংবাদপত্র অভিজিৎ ব্যানার্জি এই সাক্ষাৎকার দেন।

সক্ষাৎকারে অভিজিৎ ব্যানার্জি বলেছিলেন, ‘ভর্তি প্রক্রিয়া বদলানোর দাবিতে আন্দোলন হচ্ছিল। ফি এত বাড়িয়ে দেয়া হয় যে তা অনেক শিক্ষার্থীদের কাছে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ছাত্র সংসদ এর প্রতিবাদ করায় তৎকালীন ছাত্র সংসদের সভাপতিকে বরখাস্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।’

তারপরই ছাত্র আন্দোলন আরও তীব্র হয় জানিয়ে অভিজিৎ বলেন, ‘সেই আন্দোলন দমন করতেই পুলিশ ঢোকে ক্যাম্পাসে। আমাদের মারতে মারতে জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সন্দেহ নেই এতে রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ মদত ছিল। তারা আমাদের বলেছিল, ‘আমরা বস। আমাদের কথার ওপর কথা বলা যাবে না।’

অর্থনাীতিতে সস্ত্রীক নোবেল পুরস্কার পেলেন জিতেছেন অভিজিৎ বিনায়ক ব্যানার্জি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অমর্ত্য সেন ও ড. মুহম্মদ ইউনুসের পর চতুর্থ বাঙালি হিসেবে নোবেল পুরস্কার পেলেন তিনি। নোবেল পাওয়া অভিজিৎ ১৯৬১ সালে কলকাতায় এক বাঙালি অধ্যাপক পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন।

অভিজিৎ বিনায়ক ব্যানার্জির প্রাথমিক পড়াশোনা কলকাতার সাউথ পয়েন্ট স্কুলে। তারপর কলকাতার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮১ সালে অর্থনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করে ওই বছরই স্নাতকোত্তর পড়তে চলে যান দিল্লির জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে।

জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর শেষে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে যান পিএইচডি করতে। হার্ভার্ডে তার গবেষণার বিষয় ছিল ইনফরমেশন ইকোনোমিক্স। সফলভাবে পিএইচডি শেষে তিনি সেখানেই অধ্যাপনা শুরু করেন।

কলকাতায় জন্ম নেয়া নেয়া অভিজিতের মা-বাবাও অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত। তার মা নির্মলা ব্যানার্জি কলকাতার সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশ্যাল সায়েন্সেস এবং বাবা দীপক ব্যানার্জি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন।

অমর্ত্য সেনের পরে দ্বিতীয় বাঙালি হিসেবে অর্থনীতিতে নোবেল পেলেন অভিজিৎ ব্যানার্জি। একই সঙ্গে ফরাসি বংশোদ্ভূত তার স্ত্রী এসথার ডাফলোও গত ৫০ বছর পর দ্বিতীয় এবং সর্বকনিষ্ঠ নারী হিসেবে অর্থনীতিতে নোবেল পেয়েছেন।

এসএ/জেআইএম

আরও পড়ুন