ভারতকে বোঝার মতো দূরদৃষ্টি নেই মোদির : অমর্ত্য সেন
ভারতের বর্তমান গণতন্ত্রের সঙ্কট ও ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদি সরকারের সফলতা ব্যর্থতা নিয়ে কথা বলেছেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ও নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন। মার্কিন দৈনিক দ্য নিউইয়র্কারকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ সরাসরি নিশানা করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে।
অমর্ত্য সেন বলেছেন, ‘জন স্টুয়ার্ট মিলের কাছ থেকে বড় যে বিষয়টি আমরা জেনেছি তা হল, গণতন্ত্র মানে আলোচনার ভিত্তিতে চলা সরকার। ভোটের হিসেবে যেভাবেই হোক, আলোচনাকে ভয়ের বস্তু করে তুললে গণতন্ত্র থাকে না।’ তার আক্ষেপ, ভারতে এখন একাট্টা কট্টর হিন্দুত্বের দাপট চলছে। প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে তার মূল্যায়ন, ‘বহু ধর্ম ও বহু জাতির দেশ ভারতকে বোঝার মতো মনের প্রসারই নেই মোদির।’
মোদির সব চেয়ে বড় সাফল্য কী? অমর্ত্যের মতে, গুজরাট দাঙ্গার মামলা থেকে নিজেকে মুক্ত করা। ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গায় হাজার হাজার মানুষ খুন হয়েছিলেন, তার পেছনে মোদির একটা ভূমিকা ছিল। কিন্তু এই মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়ায় ভারতে অনেকেই এখন বিশ্বাস করেন যে, গুজরাট দাঙ্গায় মোদির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ গণমাধ্যমের প্রসঙ্গে অমর্ত্যের খেদ, সরকার যদি বিরুদ্ধে থাকে, তবে সরকারি শুধু নয়, সম্ভবত অনেক বেসরকারি বিজ্ঞাপনও পায় না সংবাদমাধ্যম। ফলে স্বাধীন সংবাদপত্র বা সংবাদ চ্যানেল পাওয়া দুষ্কর। স্টুয়ার্ট মিলের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘মানুষ ভয়ে আছেন। এটা আগে কখনও দেখিনি। আমার সঙ্গে ফোনেও সরকারের সমালোচনার প্রসঙ্গ উঠলে অনেকে বলছেন, ‘থাক, দেখা হলে বলব এখন। আমি নিশ্চিত তারা আমাদের কথা শুনছে। এটা গণতন্ত্রের পন্থা নয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ কী চান, সেটা বোঝারও পথ নয় এটা।’
তবু পুরোপুরি হতাশ নন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, ‘সব কিছু এখনো শেষ হয়ে যায়নি। এখনও সাহসী কয়েকটি সংবাদপত্র আছে, যারা ঝুঁকি নিয়ে কিছু ছাপতে ভয় পায় না। দুই-একটা টিভি চ্যানেল ও রেডিও স্টেশনও আছে। প্রকাশ্য সভাও হচ্ছে কিছু। ভারতের কাঠামো যুক্তরাষ্ট্রীয়। বেশ ক’টি রাজ্যে বিজেপিই একমাত্র প্রভাবশালী শক্তি নয়।’
দুঃসময়ের প্রসঙ্গে ভিড় করেছে ছোটবেলার অনেক স্মৃতি। অমর্ত্য সেনের কথায়, ছেলেবেলাতেও খুব খারাপ সময় দেখেছি। দেখেছি, চাচাদের সকলকে জেলে আটকে রাখা হয়েছে। নয় বছর বয়সে দেখেছি মন্বন্তর। তিন লাখ মানুষ মারা যান। হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা দেখেছি। মুসলিম জনমজুরকে কুপিয়ে খুন করেছে আমারই পাড়ার কিছু হিন্দু।
‘আমি তখন দশ কি এগারো। বাগানে খেলছিলাম। দেখি, রক্তাক্ত অবস্থায় ছুটে আসছেন একজন। চিৎকার করে বাবাকে ডাকলাম। পানি খেতে দিলাম। এত রক্ত কখনও দেখিনি। আমার কোলে মাথা, স্পষ্ট বলেছিলেন, বিবি বলেছিল, হিন্দু এলাকায় কাজ করো না। কিন্তু বাচ্চারা না-খেয়ে আছে। কিছু তো রোজগার করতেই হবে...।’
‘বাবা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেন। পুলিশকেও জানিয়েছিলেন। কিন্তু হিন্দু এলাকার পুলিশ কিছু করতে রাজি হয়নি। আবার অনেক বড় বড় সমস্যা মিটে যেতেও দেখেছি। তবে তার অর্থ এই নয় যে আমি নিশ্চিত। কোনও কিছু সম্পর্কেই আমি নিশ্চিত নই। এর অর্থ এটাও নয় যে, হতাশার পরিস্থিতিতে সব আশা ছেড়ে দিতে হবে।’ আনন্দবাজার।
এসআইএস/এমকেএইচ