কাশ্মীরে বিপাকে সাংবাদিকরা
জম্মু-কাশ্মীরের ওপর থেকে ভারত বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার পর থেকেই উপত্যকায় বিপাকে রয়েছেন সাংবাদিকরা। কারণ সেখানে সংবাদ সংগ্রহের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। কেউ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সেখানে প্রবেশ করলে তার জন্য শাস্তি পেতে হচ্ছে।
গত ৭ সেপ্টেম্বর শ্রীনগরে খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রায় পাঁচ মিনিট পুলিশের লাঠির বাড়ি খেয়ে এখন বিশ্রামে আছেন জম্মুর একটি স্থানীয় পত্রিকার ফটোসাংবাদিক শাহিদ খান। তার ডান কাঁধে চিড় ধরেছে। প্লাস্টার লাগানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘খবর করতে গিয়ে নিজেই খবর হয়ে যাব সেটা ভাবিনি।’
শাহিদের দাবি, শ্রীনগরের রায়নাওয়াড়ি এলাকায় মহরমের মিছিলের খবর সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন তিনি এবং পাঁচ ফটোসাংবাদিক। পুলিশ এসে তাদের বেধড়ক মারতে শুরু করে। শাহিদ বললেন, পুলিশ মারতে মারতে বলছিল, ভিডিও তুলে কেন আমাদের ঝামেলা বাড়াচ্ছ?
পুরো উপত্যকাজুড়েই এভাবে হাত-পা বাধা সাংবাদিকদের। সরকারি মিডিয়া সেন্টারে একটাই ইন্টারনেট কানেকশনে চলছে মাত্র ১০ টা কম্পিউটার। খবরের জন্য সরকারি কোনও কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাততো দূরের কথা, ফোনে কথা বলারও উপায় নেই। তাছাড়া রাস্তায় বেরিয়ে খবর করতে গেলেই জুটছে পুলিশের মার। কাশ্মীরের প্রবীণ সাংবাদিক নাসির এ গনাই বলেন, সাংবাদিকদের চাপ দিয়ে বিভিন্ন তথ্য জানতে চাইছে প্রশাসন।
রায়নাওয়াড়িতেই ৫ সেপ্টেম্বর ‘কারফিউ পাস’ থাকা সত্ত্বেও পুলিশ আটক করে ক্যামেরা ভাঙার হুমকি দেয় বলে জানিয়েছেন একটি আন্তর্জাতিক চ্যানেলের মহিলা সাংবাদিক শাহানা বাট। কাশ্মীরের ‘ওয়ার্কিং জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন’ সাংবাদিক নিপীড়নের বিষয় নিয়ে গত সপ্তাহেই একটি বিবৃতি জারি করে কাঠগড়ায় তুলেছে সেনাবাহিনী এবং জম্মু-কাশ্মীরের স্থানীয় প্রশাসনকে।
শুধু সাংবাদিকদেরই নয়, তাদের পরিবারের নামেও পুলিশ অকথ্য গালিগালাজ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। শ্রীনগরের জাহাঙ্গীর চকের কাছে গত ৮ অক্টোবর পুলিশের নিগ্রহের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন উপত্যকার আরও এক মহিলা সাংবাদিক রিফাত মহিদিন। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক শ্রীনগরের আর এক সাংবাদিক জানান, এই দেড় মাসের মধ্যে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে তাকে অন্তত পাঁচ বার ঘুরপথে খবর সংগ্রহ করতে যেতে হয়েছে।
উপত্যকারই প্রবীণ সাংবাদিক শাহনওয়াজ খান বলেন, এসব এখানে নতুন কিছু নয়। পুলিশ আর সেনাবাহিনীর দয়া ভিক্ষা করেই তো কাশ্মীরে কাজ করতে হয় সাংবাদিকদের। কারফিউ, নিষেধাজ্ঞার সময় তো সাংবাদিকদেরই বেছে বেছে আক্রমণ করা হয়।
টিটিএন/পিআর