১৯৭১ সালের পর বাংলাদেশ থেকে কেউই ভারতে যাননি : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
আসামে চূড়ান্ত জাতীয় নাগরিক তালিকা (এনআরসি) প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মাথায় রাজ্যের অর্থমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেছিলেন, বন্ধু রাষ্ট্র বাংলাদেশকে তাদের জনগণ ফিরিয়ে নেয়ার কথা বলা হবে। ভারতীয় মন্ত্রীর এমন মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল দাবি করেছেন, তিনি যতটুকু জানেন তাতে ১৯৭১ সালের পর বাংলাদেশ থেকে কেউই ভারতে যাননি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ১৮-কে টেলিফোনে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেছেন, আসামের এনআরসি তালিকার ব্যাপারে আমি অবগত রয়েছি। এটা একেবারেই ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং এ ব্যাপারে আমাদের কিছুই করার নেই।
শনিবার ভারতের ক্ষমতাসীন জোট এনডিএ'র উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শাখা নর্থ-ইস্ট ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের (নেডা) সমন্বয়ক শর্মা বলেন, ‘ভারতের বন্ধু বাংলাদেশ এবং তারা আমাদের সহযোগিতা করছে। আমরা যখনই অবৈধ অভিবাসীদের উপস্থাপন করেছি, তখনই তারা তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়েছে। এই সংখ্যা খুব বেশি নয়, তবে বর্তমানে আমরা তাদের শনাক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছি।’
আসামের অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘এনআরসি নিয়ে বাংলাদেশের কিছুই করার নেই। আমি আবারো বলছি, এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ ব্যাপারে কে কি বলেছেন, আমি জানি না। ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বললে, আমরা তার প্রতিক্রিয়া জানাবো। তবে আমি মোটাদাগে যা বলতে পারি, ১৯৭১ সালের পর কেউই বাংলাদেশ থেকে ভারতে যায়নি। তারা ভারতের বিভিন্ন অংশ থেকে (প্রধানত বাঙালিরা) আসামে ঠাঁই পেয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশ থেকে নয়।’
‘বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকে ভারত আমাদের সঙ্গে আছে। ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব চমৎকার। ভারত আমাদের বন্ধু। কিন্তু এনআরসি নিয়ে উদ্বেগের ব্যাপারে আমি বলতে পারি যে, ১৯৭১ সালের পর কেউই বাংলাদেশ থেকে ভারতে যায়নি। আমি মনি করি না যে, ভারত সরকারকে কাউকে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দেবে’- বলেন তিনি।
এর আগে, শনিবার আসামের চূড়ান্ত জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকা (এনআরসি) প্রকাশ করা হয়। হালনাগাদ এই নাগরিক পঞ্জিকায় ঠাঁই হয়নি আসামের প্রায় ১৯ লাখ মানুষের। দ্বিতীয় দফায় প্রকাশিত চূড়ান্ত এই নাগরিক তালিকায় ঠাঁই পাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন প্রায় ৩ কোটি ৩০ লাখ ২৭ হাজার ৬৬১ জন মানুষ।
এর মধ্যে ৩ কোটি ১১ লাখ ২১ হাজার ৪ জন নাগরিক তালিকায় নিজের নাম খুঁজে পেলেও বাদ পড়েছেন ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৭ জন। জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকার (এনআরসি) রাজ্য সমন্বয়কের কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে এসব তথা জানানো হয়েছে।
তবে যারা চূড়ান্ত এই নাগরিক তালিকায় জায়গা পাননি তারা আসামের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে আপিল করার সময় পাবেন ১২০ দিন।
পরে নিউজ১৮-কে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে বিশ্ব শর্মা বলেন, জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকা হালনাগাদ করার প্রক্রিয়াটি মোটাদাগে ব্যর্থ হয়নি। এটি আমাদের জন্য মিশ্র অভিজ্ঞতা তৈরি করেছে। ১৯৭১ সালের পর যারা শরণার্থী হিসেবে এসেছেন, তারা সমস্যার মুখোমুখি হবেন। তাদের প্রতি আমাদের সহানুভূতি আছে। কিন্তু এনআরসি প্রক্রিয়া জালিয়াতি করেছেন, এমন মানুষ অনেক এবং আমরা তাদের বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।
সূত্র : নিউজ১৮।
এসআইএস/পিআর