ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

কেন এসব দেশ রাজধানী সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৫:৫৭ পিএম, ২৮ আগস্ট ২০১৯

ইন্দোনেশিয়া তাদের রাজধানী জাকার্তা থেকে বোর্নিও দ্বীপে সরিয়ে নিচ্ছে। নির্দিষ্ট সময় স্থান এখনো ঠিক না হলেও প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো গত ১৬ আগস্ট পার্লামেন্টে এই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন।

কেন জাকার্তা থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে রাজধানী তার কারণ উদঘাটন করা খুব কঠিন কোনো বিষয় না। প্রতিবছর রাজধানী জাকার্তা ১ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার দেবে যাচ্ছে। শহরটির অর্ধেক এখন সমুদ্রপৃষ্ঠের নীচে অবস্থান করছে।

জাকার্তা একটা জলাভূমির উপর রয়েছে কারণ এখানে জাভা সাগর রয়েছে এবং ১৩টি নদী বয়ে যাচ্ছে শহরটির উপর দিয়ে। যানজটের অবস্থা তো ভয়াবহ। ২০১৬ সালের এক গবেষণায় দেখা যায় এই বড় শহরটির যানজট বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ যানজট।

সরকারের মন্ত্রীদের পুলিশ পাহারায় নির্দিষ্ট সময়ে সভায় পৌছানোর জন্য যেতে হয়। শহুরে এলাকায় ৩০ মিলিয়ন মানুষের বসবাস। এত বড় জনসংখ্যার জন্য মাত্র ২ থে ৪ শতাংশ ময়লা পানি বিশুদ্ধ করা হচ্ছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় খবুই কম।

নতুন রাজধানী হতে পারে বোর্নিও দ্বীপের কালিমানটান। এই পরিবর্তনের জন্য ৩৩ বিলিয়ন ডলার খরচ হবে দেশটির। জমির প্রয়োজন হবে ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার হেক্টর। যেখানে ৯ থেকে ১৫ লাখ মানুষের বসতি গড়ে তোলা হবে।

তবে ইন্দোনেশিয়াই প্রথম কোন দেশ না যারা রাজধানী স্থানান্তর করছে। আগেও বেশ কিছু দেশ তাদের রাজধানী অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছিল।

Capital-1.jpg

কাজাখাস্তান
১৯৯৭ সালে প্রেসিডেন্ট নুর সুলতান নাজারবেইভ সিদ্ধান্ত নেন প্রধান শহর আলমাতি থেকে রাজধানী সরিয়ে নেবেন। তিনি ধুলোমাখা এক প্রদেশ বেছে নিলেন। যেটা ৭৫০ মাইল উত্তরে। তিনি প্রথমে যে কাজটি করলেন সেটা হল নাম পরিবর্তন করা।

তিনি এর নাম আকমোলা তকে আসতানা করলেন। যার অর্থ সাদা কবর। এরপর তিনি বিশ্বের নানা স্থান থেকে স্থাপত্যবিদদের নিয়ে আসলেন। একেবারে মাটি থেকে তিনি তার রাজধানী তৈরি করা শুরু করলেন। তৈরি হলো অনিন্দ সুন্দর এক রাজধানী শহর।

এর অন্যতম চমকপ্রদ ল্যান্ডমার্কটি হল কান সাটআর। যেটা বিশ্বের সবচেয়ে বড় তাবু। এর নকশা করেন নরমান ফস্টার। এর মধ্যে শপিং মল এবং বিনোদন কমপ্লেক্স রয়েছে। সেখানে আরো রয়েছে বেতারেক টাওয়ার, প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেস আরো অনেক অবকাঠামো।

এর সবকিছু সম্ভব হয়েছিল কাজাখাস্তানের উদীয়মান তেল ক্ষেত্রের জন্য। ২০১৮ সালে অর্থনীতি বেড়েছে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। কৃতজ্ঞতাবশত প্রেসিডেন্ট নাজারবেইভ মার্চে যখন ক্ষমতা ছেড়ে দেন তখন তাকে সম্মান জানিয়ে সংসদের ভোটে শহরটির নাম তার নামে করা হয়।

এখন কাজাখের রাজধানী বিশ্বের দ্বিতীয় শীতলতম শহর, প্রথমে রয়েছে মঙ্গোলিয়ার উলানবাটার। যার নাম এখন নুর সুলতান সিটি।

Capital-1.jpg

মিয়ানমার
নেপিডো শহরটি লন্ডনের চেয়ে চারগুণ বড় কিন্তু জনসংখ্যা ভগ্নাংশ পরিমাণ। এর অর্থ ছিল রাজার স্থান। কি কারণে বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুন থেকে নেপিডোতে রাজধানী সরিয়ে আনা হল সেটা কখনো পরিষ্কার করা হয়নি।

৩৭০ কি.মি. দুরে বড় শহর ইয়াঙ্গুন যার আগের নাম ছিল রেঙ্গুন। সেই সময় বিবিসিকে দেশটির তথ্য মন্ত্রী বলেছিলেন স্থানটি কৌশলগত দিক দিয়ে ভাল। কিন্তু বিশ্লেষকরা এড়িয়ে গেছেন বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে।

তারা বলেছেন এটা হতে পারে সেনাবাহিনী ভয় পাচ্ছে কোন বিদেশি শক্তি এসে দখল করে নেয় আবার অনেকে মনে করতেন সীমান্তে জাতিগত সংখ্যালঘুদের উপর বেশি করে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

একটা পরিকল্পিত রাজধানীর শহরের সব চিহ্ন এখানে আছে। যে রাস্তাটা সংসদ ভবন থেকে প্রেসিডেন্ট প্যালেস এর দিকে গেছে সেটা ২০ লেন চওড়া। যানজট নেই বললেই চলে।

ঝকঝকে শপিং মল, দামি হোটেল যেসব খালি পড়ে আছে। এখানে একটা সাফারি পার্ক, একটা চিড়িয়াখানা, এবং অন্তত তিনটি স্টেডিয়াম আছে।দেশটির অন্যান্য স্থানে বিদ্যুৎ না থাকলেও রাজধানীতে সবসময় বিদ্যুৎ থাকে।

Capital

বলিভিয়া
বলিভিয়ার দুটি রাজধানী ছিল। একটি শাকরে এবং অন্য টি লা পাজ। ১৮৯৯ সালে লা পাজের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত গৃহযুদ্ধে হেরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত শাকরে ছিল মূল রাজধানী। এরপর সংসদ এবং সিভিল সার্ভিস বলিভিয়ার বড় শহর লা পাযে সরে গেলো, কিন্তু বিচারবিভাগ শাকরে তে থেকে গেল। ১৮২৫ সালে বলিভিয়া যখন প্রতিষ্ঠিত হয় তখন শাকরে ছিল দেশটির কেন্দ্রবিন্দু।

এর জনসংখ্যা দুই লাখ ৫০ হাজার যেখানে লা পাযের রয়েছে এক দশমিক সাত মিলিয়ন। ২০০৭ সালে সংসদ এবং সরকারকে শাকরে ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়েছিল। ফলাফল, লা পাযে সর্ববৃহৎ বিক্ষোভ তৈরি হয়। বিষয়টাকে অনেকে আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা হিসেবে দেখে।

প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেস এর পশ্চিমের উচ্চভূমির গরিব সমর্থক এবং তার প্রতিপক্ষ পূর্বের ধনীদের মধ্যে। তাই সেই পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। বলিভিয়াতে এখন দুটি রাজধানীই রয়েছে।

Capital-1.jpg

নাইজেরিয়া
১৯৯১ সাল পর্যন্ত নাইজেরিয়ার বড় শহর লাগোস দেশটির রাজধানী ছিল। আবুজাতে রাজধানী স্থানান্তরের অনেক কারণ ছিল। প্রথমত এটার ভৌগলিক অবস্থান। আবুজা ছিল দেশটির কেন্দ্রে। মাইদুগুড়ি থেকে সড়কে লাগোসে যেতে সময় লাগতো দুই দিন কারণ যেতে হত ১৬শ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে।

সেই তুলনায় আবুজা ছিল কাছে। লাগোস ছিল ঘনবসতিপূর্ণ। সাব সাহারা আফ্রিকার অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ শহর ছিল এটা। এটাও ছিল অনেক কারণের মধ্যে একটি। আবুজা রাজনৈতিক এবং জাতিগত ভাবে ছিল নিরপেক্ষ।

যেখানে লাগোস গড়ে উঠেছিল প্রাকৃতিক-ভাবে সেখানে আবুজা ছিল পরিকল্পিত শহর। যেটা ছিল নাইজেরিয়ায় প্রথম। যানজটের জন্য লাগোস কুখ্যাত, শুরুতেই আবুজার রাস্তার পরিকল্পনা করা হয়েছে চওড়া করে।

জাতীয় সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউট, সুপ্রিম কোর্ট, ন্যাশনাল এসেম্বলি এবং প্রেসিডেন্ট ভবন আবুজাতে। যাইহোক অনেক কেন্দ্রীয় সংস্থা এখনো অনানুষ্ঠানিক-ভাবে লাগোসে রয়েছে।

Capital-1.jpg

পর্তুগাল
১৩ বছর ধরে পর্তুগালের রাজধানী লিসবন ছিল না বরং এটা ছিল রিও ডি জেনরিও। কারণ নেপোলিয়ন পেনিনসুলা যুদ্ধের সময় ফ্রান্স তিন বার পর্তুগাল দখল করে। ১৮০৭ সালের ডিসেম্বরের আগে ব্রাগানজা রাজ পরিবার এবং আদালত ব্রাজিলে যান যেটা একটা পর্তুগিজ কলোনি ছিল।

তারা ১৮০৮ সালের মার্চে রিওতে পৌছায়। ১৯ শতকে রিও ছিল একটি উঠতি শহর। সেখানে সোনা, ডায়মন্ড এবং চিনি ছিল আর ছিল দাস। ডম জোআও ৬ষ্ঠ প্রিন্স রিজেন্ট ইউনাইটেড কিংডম অব পর্তুগাল, ব্রাজিল, এবং দ্যা আলগারভেস তৈরি করেন।

এটা ব্রাজিলকে একটা কলোনি থেকে পর্তুগালের সমমর্যাদায় নিয়ে যায়। ব্রাজিল সেসময় আরো প্রশাসনিক স্বাধীনতা পেল। যখন রানী ১৮১৬ সালে মারা যান, তিনি হয়ে যান রাজা। ১৮২১ সালে পর্তুগীজ আদালত লিসবনে ফিরে আসে এবং ১৯৯০ সালের রাজতন্ত্র শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত সেখানেই ছিল।

সূত্র : বিবিসি বাংলা

এসএ/এমএস

আরও পড়ুন