‘কাশ্মীরে গণহত্যা চলছে’
অধিকৃত কাশ্মীরে ভারত পুরোদমে গণহত্যা চালাচ্ছে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন পাক অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীরের প্রেসিডেন্ট সরদার মাসুদ খান। মঙ্গলবার ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে এই সতর্ক বার্তা দেন তিনি।
গত ৫ আগস্ট ভারতীয় সংবিধান থেকে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা সংক্রান্ত অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিলের পর থেকে দেশটির ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন সরকার এই নৃশংস গণহত্যার নীলনকশা বাস্তবায়ন করছে বলে অভিযোগ করেছেন সরদার মাসুদ খান।
তিনি বলেন, জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দাদের তুলে নিয়ে হত্যার পর অজ্ঞাত স্থানে মাটি চাপা দেয়া হচ্ছে। নারীদের ওপর নির্যাতন চলছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৬ হাজার মানুষকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এসব মানুষকে কারাগারে রাখা হয়েছে। কোনো ধরনের কারণ ছাড়াই ২ বছরের বেশি সময় ধরে আটকে রাখা হবে তাদের।
‘সেখানে যে গণহত্যা চলছে, এসব কিছুই তার আলামত। গণমাধ্যম শাটডাউনের কারণে উপত্যকার এসব অপরাধের খবর প্রকাশিত হচ্ছে না।’
সরদার মাসুদ খান বলেন, উপত্যকায় ভারতের নৃশংসতার মাত্রা খুব বেশি প্রকাশিত না হলেও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম মাঝে সেখানে কী ঘটছে সেবিষয়ে প্রতিবেদন তুলে ধরছে। তারা কাশ্মীরি জনগণের অধিকারের বিষয়ে লিখছে।
‘এই সময়ে একপাক্ষিক প্রতিবেদন করার পথে না হাঁটার জন্য আমি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানাই।’
তিনি বলেন, দীর্ঘ ৫০ বছর পর কাশ্মীর ইস্যুতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বৈঠক হয়েছে। এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। কাশ্মীরি ভাই-বোনদের জন্য আমাদের এখনও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। কাশ্মীরিদের লড়াইয়ের জন্য এটাই চূড়ান্ত কোনো পদক্ষেপ নয়, তবে এটা প্রথম পদক্ষেপ। কাশ্মীরি ভাই-বোনদের জন্য আমাদের অনেক দূর যেতে হবে।
‘জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পরবর্তী পদক্ষেপ হবে, ত্রিমূখী অ্যাজেন্ডা নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করা।
এগুলো হলো কাশ্মীরে গণহত্যার অবসান ঘটানো, ভারতের সঙ্গে কাশ্মীরকে একীভূত করার অবৈধ প্রচেষ্টা বাতিল এবং কাশ্মীরিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ফিরিয়ে দেয়া।’
পাক অধিকৃত কাশ্মীরের এই প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এ তিনটি বিষয়ই জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের নিজস্ব সনদের শর্তের মধ্যে রয়েছে। কোনো দেশ যদি কাশ্মীর ইস্যুকে সেখানে তুলে নাও ধরে তারপর নিরাপত্তা পরিষদ এসব বিষয় নিয়ে কাজ করতে বাধ্য।’ এখনই নিরাপত্তা পরিষদে কাশ্মীর ইস্যুতে উন্মুক্ত অধিবেশন আহ্বান করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অধিকৃত কাশ্মীরে মানবিক সঙ্কট আসন্ন বলে সতর্ক করে দিয়েছে সরদার মাসুদ খান। তিনি বলেন, সেখানকার বাসিন্দারা ইতোমধ্যে খাদ্য সামগ্রী এবং প্রয়োজনীয় ওষুধের সঙ্কটে পড়েছেন। অধিকৃত কাশ্মীরের মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য এখনই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দাতব্য সংস্থাগুলোকে সেখানে মানবিক ত্রাণ করিডর চালু করা উচিত।
কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর ১৬তম দিনের মতো মঙ্গলবারও সেখানে হাজার হাজার কাশ্মীরি দেশটির সরকারের নেয়া সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন। বিরোধপূর্ণ এই অঞ্চলে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
স্থানীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, সোমবার রাতভর অভিযান চালিয়ে কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগর থেকে অন্তত ৩০ জনকে গ্রেফতার করেছে ভারতীয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। বিক্ষোভ ঠেকাতে এই গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রেখেছে বিজেপি সরকার।
এদিকে, কাশ্মীর নিয়ে চলমান উত্তেজনার মাঝে সোমবার পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া উত্তেজনা কমিয়ে আনতে দুই দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এ দুই নেতার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার পর ট্রাম্প এক টুইট বার্তায় বলেছেন, একটি কঠিন পরিস্থিতি, তবে ভালো আলোচনা হয়েছে। ভারত এবং পাকিস্তানের দুই প্রধানমন্ত্রীকে ‘ভালো বন্ধু’ বলে উল্লেখ করেছে মার্কিন এই প্রেসিডেন্ট।
সূত্র : ডন।
এসআইএস/জেআইএম