অবশেষে ইরানের তেলবাহী ট্যাংকার ছাড়া পেল
ইরানের তেলবাহী জাহাজটি অবশেষে জিব্রালটারের বন্দর ছেড়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সিরিয়ায় তেল নিয়ে যাওয়ার কারণ দেখিয়ে গত মাসে জিব্রালটার প্রণালিতে ইরানের তেলবাহী ওই ট্যাংকারটি আটক করা হয়েছিল।
বিবিসি সোমবারের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ট্যাংকারটি ইরানের পতাকা উড়িয়ে বন্দর ছেড়ে ভূমধ্যসাগরের পূর্বাঞ্চলের দিকে যাত্রা শুরু করেছে। জাহাজটির আগের নাম গ্রেস ওয়ান হলেও এখন সেটি বদলে এখন আদ্রিয়ান দারিয়া ওয়ান রাখা হয়েছে।
জাহাজটির গন্তব্য জানা যায়নি। তবে সেটিকে আরও কিছুদিন আটকে রাখতে মার্কিন অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে জিব্রাল্টার। গ্রেস- ১ নামের তেলবাহী ট্যাংকারটির বিরুদ্ধে জিব্রাল্টার তার আটকাদেশ প্রত্যাহারের একদিন পরই যুক্তরাষ্ট্র তা বহাল রাখার শেষ অনুরোধ জানায়।
জিব্রাল্টারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিলো, নতুন আটকাদেশ জারি করার ওয়াশিংটনের অনুরোধ তারা মানতে পারছে না। কেননা ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রযোজ্য নয়। ইরানে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূতও বলেছিলেন, গ্রেস- ১ রবিবারের পর জিব্রাল্টার ছেড়ে যাবে।
গত ৪ জুলাই ব্রিটিশ মেরিন সেনাদের সহায়তায় ট্যাংকারটি আটক করে জিব্রাল্টার। ভারত, রাশিয়া, লাটভিয়া এবং ফিলিপিন্সের ২৯জন ক্রু বিশিষ্ট ট্যাংকারটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে সিরিয়ায় তেল পরিবহন করছে- এমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছিল ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণাধীন জিব্রাল্টার কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু এরপরপরই মার্কিন বিচার বিভাগের পক্ষ থেকে জাহাজটির আটকাদেশ বাড়ানোর অনুরোধ করা হয়। বলা হয় গ্রেস- ১ ইরানের ইসলামিক রেভ্যুলিশনারি গার্ড নামের একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
গতকাল রোববার জিব্রাল্টারের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, তারা এই অনুরোধটি রাখতে পারছে না। বিবৃতিতে বলা হয় যে, ইরানের বিরুদ্ধে ইইউ-এর আনা নিষেধাজ্ঞা জিব্রাল্টারে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তুলনায় বেশি মাত্রায় প্রযোজ্য।
ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে অবশ্য এই প্রত্যাখ্যানের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। যদিও, ১৯ জুলাই রেভ্যুলেশনারি গার্ড স্টেনা ইম্পেরা নামের যে জাহাজটি আটক করেছিল তা এখনো ইরানের দখলেই রয়েছে।
যুক্তরাজ্য এরপর ঘোষণা দিয়েছে যে তারা হরমুজ প্রণালীর শিপিং রুটে যাতায়াত করা বাণিজ্য জাহাজের সুরক্ষায় একটি মার্কিন নেতৃত্বাধীন টাস্কফোর্সে যোগ দেবে। ইরানের সাথে পশ্চিমা সংকটের আরও একটি দিক রয়েছে আর তা হল দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচীকে ঘিরে।
গত বছর, যখন ওয়াশিংটন ইরানের সাথে করা ২০১৫ সালের একটি চুক্তি থেকে সরে আসে তখন থেকেই শুরু এই টানাপোড়েন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ ছিল, তেহরান চুক্তি লঙ্ঘন করে পারমাণবিক কর্মসূচী চালিয়ে আসছে। আর ইরান এ অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে এসেছে।
আর এরপর থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ট্রাম্প প্রশাসন। যদিও, যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ বলে আসছে যে তারা ইরানের সাথে এই চুক্তিতে এখনো প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছে। ট্যাংকার আটকের পর তেহরান ও পশ্চিমা শক্তিগুলোর মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়।
এসএ/এমকেএইচ