কাশ্মীর ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান জানাল ওআইসি ও নিরাপত্তা পরিষদ
অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের বিষয়টি নজরে নেয়ার জন্য পাকিস্তানের আহ্বানে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ (ইউএনএসসি) ও বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোর শীর্ষ সংগঠন ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)।
শনিবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি ইসলামাবাদে পাক আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ অধিদফতরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আসিফ গফুরের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন।
কুরেশি বলেন, কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে আলোচনা করতে পাকিস্তানের আহ্বানে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে ওআইসি এবং ইউএনএসসি। অধিকৃত কাশ্মীরে দ্রুত কারফিউ তুলে নিতে ভারতের প্রতি ওআইসি আহ্বান জানিয়েছে।
তিনি বলেন, পাঁচ দশক পর শুক্রবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে কাশ্মীর সঙ্কট তোলা হয়েছে। অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীর ইস্যুতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ একটি বিশেষ বৈঠক করেছে। বিশেষ করে ভারত যখন নিরাপত্তা পরিষদে বিষয়টি যাতে না ওঠে সেজন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। এমন সময় এই বৈঠক বড় ধরনের অগ্রগতি।
কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে জাতিসংঘে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ঝ্যাং জুন একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রকাশের প্রস্তাব করলেও নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী অন্য সদস্যরা তাতে রাজি হয়নি। সংবাদ সম্মেলনে কুরেশি বলেন, কাশ্মীর বিবাদের সমাধানে সহায়তা করার জন্য এখন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে দায় নিয়ে কাজ করা উচিত।
পাক এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের বিশেষ কমিটির বৈঠকে নতুন বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী- পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কাশ্মীর নিয়ে নতুন একটি সেল গঠন করা হবে। এছাড়া বিশ্বজুড়ে পাকিস্তানের দূতাবাসে কাশ্মীরের জন্য আলাদা আলাদা ডেস্ক তৈরি করা হবে। এই ইস্যুতে যাতে কার্যকর যোগাযোগ স্থাপন করা যায়; সেলক্ষ্যে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা সংক্রান্ত ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের ব্যাপারে পাকিস্তানের অবস্থান জানতে চাইলে কুরেশি বলেন, পাকিস্তান কখনই ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৭০-এর স্বীকৃতি দেয় না। এটা আমাদের উদ্বেগের বিষয় নয়। আমাদের উদ্বেগ হলো, কাশ্মীরি জনগণের অধিকারের লঙ্ঘন ও বলপ্রয়োগ করে কাশ্মীরের জনসংখ্যা কাঠামোতে পরিবর্তন আনার বিষয় নিয়ে।
একই সংবাদ সম্মেলনে পাক আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ অধিদফতরের মহাপরিচালক আসিফ গফুর বলেন, ভারত যে কোনো ধরনের অসৎ উপায় অবলম্বন করলে পাক সেনাবাহিনী তার জবাব দেয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
তিনি বলেন, গত কয়েকদিন ধরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধানের বিভিন্ন ধরনের বিবৃতি বিচার করে অধিকৃত কাশ্মীর এবং ভারতের পরিস্থিতি বিবেচনা করছে পাক সেনাবাহিনী। আমরা বিশ্বাস করি, কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত যে ব্যবস্থা নিয়েছে শিগগিরই তার বিরুদ্ধে কাশ্মীরের প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে এবং আমরা এটার জন্যও প্রস্তুত।
আসিফ গফুর বলেন, কাশ্মীরে চালানো ভারতের নৃশংসতা এখন পুরো বিশ্বের কাছে উন্মুক্ত। এটা শুধুমাত্র এক খণ্ড ভূমির বিষয় নয়, এটা কাশ্মীরে বসবাসরত মানুষের অধিকারের বিষয়। পাক সেনাবাহিনীর এই মুখপাত্র বলেন, কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তান এমন কোনো ব্যবস্থা নেবে না; যাতে বিশ্ব জনমত ইসলামাবাদের বিপক্ষে যায়।
গত ৫ আগস্ট জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলে ভারতীয় সিদ্ধান্তের পর পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই চিরবৈরী প্রতিবেশীর মাঝে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ নজরদারি এবং প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
কাশ্মীরের মর্যাদা বাতিলের একদিন পর বুধবার ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার ও নয়াদিল্লি থেকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়। ভারতের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য স্থগিত ও সমঝোতা ট্রেনের চলাচলও বন্ধ করে দিয়েছে দেশটি।
সূত্র : ডন, পাকিস্তান ট্যুডে।
এসআইএস/এমএস